• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সম্মানিত মাস ‘জিলকদ’


সুলতান আফজাল আইয়ূবী জুন ১৬, ২০২১, ০৪:১৩ পিএম
সম্মানিত মাস ‘জিলকদ’

ঢাকা : বিশাল পৃথিবীর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালা। আল্লাহর হুকুমে সৃষ্টি নিয়মে এ বিশ্বের সবকিছু পরিচালিত হয়। ঠিক তেমনি দিন-রাত ও একটি বৎসরের বারটি মাস মহান আল্লাহর হুকুমেই অতিবাহিত হয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, আমি রাত ও দিনকে দুটি নিদর্শন বানিয়েছি। রাতের নিদর্শনকে বানিয়েছি আলোহীন এবং দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকোজ্জ্বল। যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ তালাশ করতে পারো এবং মাস ও বছরের হিসেব জানতে সক্ষম হও। এভাবে আমি প্রত্যেকটি জিনিসকে আলাদাভাবে পৃথক করে রেখেছি। (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত-১২)

দিন ও রাতের পরিক্রমায় আমরা এখন হিজরী জিলকদ মাস অতিবাহিত করছি। জিলকদ আরবী মাসসমূহের এগারতম মাস। জিলকদ হজ্বের মাস। জিলকদ সম্মানিত মাস ‘আশহুরুল হুরুম’ তথা নিষিদ্ধ মাস। জিলকদ মুমিনের বিশ্রামের মাস। আশহুরে হুরুমের মাহাত্ম্য সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যখন আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই আল্লাহর লিখন ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারো চলে আসছে। এর মধ্যে চারটি হারাম মাস। এটিই সঠিক বিধান। কাজেই এ চার মাসের নিজেদের ওপর জুলুম করো না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত-৩৬, ৩৭)

উল্লেখিত নিষিদ্ধ চারটি মাস হলো জিলকাদ, জিলহজ, মুহাররাম ও রজব। পূর্ববর্তী নবীদের যুগেও এ চারটি মাস অতি বরকতময় ও সম্মানিত মনে করা হতো। তাদের শরিয়াহ মতে এ মাসগুলোতে সব ধরনের ইবাদতের সাওয়াব বেশি এবং গুনাহের পরিণামও তুলনামূলক ভয়াবহ। এছাড়া এসব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ, কলহ-বিবাদ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। পবিত্র কোরআনে চারটি জিনিসকে মানবজাতির জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও তাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রতিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ১. বাইতুল্লাহ শরিফ, ২. সম্মানিত চার মাস অর্থাৎ আশহুরে হুরুম, ৩. হাদী অর্থাৎ ওই পশু, যার গলায় মালা পরিয়ে হারাম শরিফে নিয়ে যাওয়া হয় কোরবানি করার জন্য। ৪. কলায়েদ অর্থাৎ গলার হার। ইসলামপূর্ব আরবের প্রথা ছিল, যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করত, সে হজের নিদর্শনস্বরূপ একটি মালা গলায় পরে নিত। (যেমন বর্তমান সময়ে হাজীরা তাদের গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে রাখেন) এটি ছিল কারো অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য।

আবু বকর আল জাসসাস (রহ.) বলেন, এই চারটি মাসকে ‘হুরুম’ বলার কারণ দুটি- ১. এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম। যা মুশরিকরাও মানত। ২. অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে গোনাহের পরিণতি বেশি ভয়াবহ এবং ইবাদতের প্রতিদান অনেক বড়। আশহুরল হুরুম তথা সম্মানিত চারটি মাসের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে আবু বকর আল জাসসাস (রহ.) বলেন, এই মাসগুলোতে ইবাদতে অভ্যস্ত হলে অন্য মাসেও ইবাদতের প্রতি আগ্রহ অটুট থাকবে। আর এই মাসে গুনাহ ও মন্দ কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারলে অন্য মাসেও এর থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে। নিষিদ্ধ মাসসমূহ বড়ই মর্যাদাসম্পন্ন। এ মাসগুলোতে পাপ শাস্তির দিক দিয়ে এবং সাওয়াব প্রতিদান প্রাপ্তির দিক দিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। (তাবারী ১৪/২৩৮) সুতারাং যারা এই নিষিদ্ধ মাসগুলোকে সম্মান না করে পাপাচারে লিপ্ত হবে নিশ্চই তারা সীমালংঘনকারী আর সীমালংঘনকারীদের সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেন ‘যে ইচ্ছা করে পাপ কাজের সীমালংঘন করে তাকে আমি আস্বাদান করাব মর্মান্তুদ শাস্তি। (সুরা হজ্ব আয়াত-২৫) আশহুরুল হুরুম তথা সম্মানিত মাসসমূহে নেক আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া উচিত এবং এ মাসের বর্জনীয় আমল সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘অতএব তোমরা এ মাসগুলোর ব্যাপারে নিজেদের ওপর জুলুম করো না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত-৩৭)

‘নিজেদের ওপর জুলুম করো না’ এর তাৎপর্য হলো মক্কার মুশরিকদের মতো তাদের সুবিধামতো মাসসমূহের নাম বদলের মাধ্যমে বিন্যাস পরিবর্তন করে সম্মানিত মাসেও যুদ্ধবিগ্রহ করা। কিংবা এসব মাসের নির্দিষ্ট বিধি-বিধান ও সম্মানের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করা এবং ইবাদতে অবহেলা করা। পাপাচারে লিপ্ত হয়ে নিজেই নিজের অমঙ্গল ডেকে আনা। যদিও এখন সরাসরি যুদ্ধ নেই, কিন্তু প্রত্যেকেই ছোট ছোট যুদ্ধে প্রতিনিয়তই লিপ্ত আছি, সম্মানিত মাসের সম্মানে এগুলো বন্ধ করা উচিত।

হযরত কাতাদাহ (রা.) বলেন, আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন মানবজাতির মধ্য থেকে রাসুলদেরকে মানোনীত করেছেন। জমিনের মধ্যে মসজিদসমূহকে মর্যাদা দিয়েছেন। মাসগুলোর মধ্যে রমজান ও হারাম মাসসমূহকে সম্মানিত করেছেন। দিনের মধ্যে শুক্রবারকে, রাতের মধ্যে লাইতালুল কদরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহপাক যেমন ইচ্ছা করেছেন একাটির উপর অন্যটিকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সুতারাং যেগুলোকে আল্লাহতায়ালা মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন সেগুলোর মর্যাদার প্রতিও আমাদেরও লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য।

লেখক : তরুণ আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী

 

Wordbridge School
Link copied!