• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরোপকারের প্রতিদান


মো. হুসাইন আহমদ জুন ১৮, ২০২১, ০৪:২৪ পিএম
পরোপকারের প্রতিদান

ঢাকা : মানুষের কল্যাণে একজন অন্যজনের পাশে এগিয়ে আসা, পাশে দাঁড়ানো, সহমর্মী হওয়া, শুধু নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত না হয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করা। এসবই হচ্ছে কল্যাণ বা পরোপকার। আরেকভাবে বললে, আমাদের সমাজের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি ও অপকর্ম বন্ধ ও সমাধানের নিয়তে কাজ করার চেষ্টা করাই হলো অন্যের কল্যাণ বা পরোপকার। এই পরোপকার মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের অলংকার। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে এবং মন্দ কাজে বাধা দেবে।’ (সুরা-৩ আলে-ইমরান, আয়াত : ১১০)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ (তিরমিজি)।

মানুষের উত্তম গুণাবলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পরোপকার। একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া জীবনযাপন করা কঠিন। যখন কোনো সমাজে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার মন-মানসিকতা হ্রাস পায়, তখন সে সমাজের মানুষ সব দিক দিয়েই পিছিয়ে পড়ে। সে সমাজে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। শান্তি বিলুপ্ত হয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা তিরোহিত হয়।

ইসলাম একটি সহানুভূতির ধর্ম। যেখানে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতাই ইসলামের অন্যতম বিষয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার।’ তাই পরোপকারের চেতনায় কোনো শ্রেণিভেদ নেই। বড়-ছোট, ধনী-গরিব, আত্মীয়-অনাত্মীয়, স্বজাতি-বিজাতি, মুসলিম-অমুসলিম এসব ব্যবধানের ঊর্ধ্বে উঠে ইসলামের শান্তি ও সৌহার্দ্যের সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, ‘মুমিন মিলেমিশে থাকে। তার মধ্যে ভালো কিছু নেই, যে মিলেমিশে থাকতে পারে না। যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সে-ই শ্রেষ্ঠ মানুষ।’ (আল-মুজামুল আওসাত)।

আর এই পরোপকার মানুষকে মর্যাদার আসনে সমাসীন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব মনীষী স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন, তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন পরোপকারী । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম ওহিপ্রাপ্তির পর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে হজরত খাদিজা (রা.)-কে বলেছিলেন, ‘আমাকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দাও, আমি আমার জীবনের আশঙ্কা করছি।’ তখন হজরত খাদিজা (রা.) নবীজিকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ কখনোই আপনার অমঙ্গল করবেন না। কারণ আপনি আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করেন, গরিব-দুঃখীর জন্য কাজ করেন, অসহায়-এতিমের ভার বহন করেন, তাদের কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।’ (বুখারি : ৪৫৭)।

আর মনে রাখা দরকার, পরোপকারে নিজেরই কল্যাণ হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অবশ্যই দান-সদকা মানুষের হায়াত বৃদ্ধি করে। অপমৃত্যু থেকে বাঁচায় এবং অহমিকা দূর করে।’ (আল-মুজামুল কাবীর : ১৩৫০৮)। আর অনাথ-অসহায় ও অনাহারীর কষ্টে সমব্যথী হতে আল্লাহতায়ালা রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। নিঃস্ব ও অভাবীর অভাব মোচনে জাকাত ফরজ ও সাদাকুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। দান-সদকা ও অন্যের জন্য খরচে উদ্বুদ্ধ করে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। আল-কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘কে আছে যে আল্লাহকে কর্জে হাসানা উত্তম ঋণ দেবে, তাহলে তিনি তার জন্য একে বর্ধিত করে দেবেন এবং তার জন্য সম্মানজনক প্রতিদানও রয়েছে।’ (সুরা-৫৭ হাদিদ, আয়াত : ১১)।

এক প্রসিদ্ধ হাদিস, যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করে দেয়, আল্লাহতায়ালা তার আখিরাতের সংকটগুলোর একটি সমাধান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহতায়ালাও তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষও গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ (সহিহ মুসলিম)।

অতএব আমাদের সমাজ ও বিশ্ব মানবতার কল্যাণে কাজ করাই সবচেয়ে বড় সৎ কাজ। তাই নামাজ রোজা, হজ, জাকাত ফরজ বিধানগুলোর পাশাপাশি অন্য মুমিন মুসলমানের কল্যাণে বা পরোপকারে কাজ করা আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে পারস্পরিক কল্যাণে কাজ করে অর্থাৎ পরোপকার করে নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব পালন করে দুনিয়ায় রহমত ও পরকালে সুনিশ্চিত জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আর আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।

 লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক
শিক্ষার্থী, ইফতা, দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাংগাইল

 

Wordbridge School
Link copied!