• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুমিনের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য


মো. সাইফুল মিয়া জুলাই ২৬, ২০২১, ০২:১৯ পিএম
মুমিনের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ঢাকা : শুরুতেই জেনে নেব, মুমিনের পরিচয়। আরবী মমিনুল শব্দটি ‘আমনুন’ শব্দমূল  থেকে আগত। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘যে স্বীকার করে, স্বীকৃতি দেয় এবং বিশ্বাস করে।’ ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, নবী ও রাসুলগণ মহান আল্লাহর পক্ষ হতে যেসব হেদায়েত নিয়ে আগমন করেছেন, তা আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে মেনে নেওয়া, মুখে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং তদানুসারে আমল করাকে ঈমান বলে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের স্বীকৃতি ঘোষণা করে, তাকে মুমিন বলে।’

এই পৃথিবীতে মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তারপরও এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষের চাওয়া পাওয়ার যেন শেষ নেই। সবাই  একটি অর্থপূর্ণ সাফল্যমণ্ডিত জীবন চাই।  তবে এ দুনিয়ার সাফল্যের সংজ্ঞা  একেকজনের কাছে একেক রকম। কারো কাছে সাফল্য মানে বিশাল ব্যাংক ব্যালেন্স, বড় বড় অট্টালিকা, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি। এদেরকে কোরআন-হাদিসে দুনিয়ায় দাস বলা হয়ছে। আরেক দল আছে, যারা দুনিয়ায় বসবাস করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন উদ্দেশ্যে, তাদের বলা হয় এই পৃথিবীর রক্ষাকারী। তাদের জন্য আল্লাহ এই পৃথিবী টিকিয়ে রেখেছেন। কারণ যেদিন পৃথিবীতে আল্লাহকে ডাকার মতো একটা মানুষও থাকবে না, সেদিন আল্লাহ এই দুনিয়া ধ্বংস করে দেবেন। দুনিয়ার রক্ষাকারীদের কোরআন ও হাদিসের ভাষায় মুমিন বলা হয়।

মুমিনের জীবন আল্লাহ জান্নাতের বিনিময় ক্রয় করে নিয়েছেন। তাই মুমিনের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা। পবিত্র আল-কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ মুমিনের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সর্ম্পকে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সে তো শুধু মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে এ কাজ করে। অবশ্যই তিনি (তার ওপর)  সন্তুষ্ট  হবেন।’ (সুরা লাইল, আয়াত-২০, ২১) অন্যত্র আল্লাহতায়ালা মুমিনদের উদ্দেশ্য করে  বলেন, ‘( হে রাসুল) বলুন, আমার নামাজ, আমার সবরকম ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছুই আল্লাহরাব্বুল আলামিনের জন্য।’ (সুরা আনআম, আয়াত-১৬২) মুমিন কারো বন্ধুত্ব করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, আবার কারো সাথে শত্রুতা পোষণ করবে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। পবিত্র আল-কোরআনে  আল্লাহতায়ালা বলেন, অপরদিকে মানুষের মধ্যে কেউ এমনো আছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন বিক্রি করে দেয় এবং এমন বান্দাদের ওপর আল্লাহ বড়ই মেহেরবান।’ (সুরা আনআম, আয়াত-৭৯) হজরত উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কাউকে ভালোবাসল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, শত্রুতা পোষণ করল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কিছু দান করল আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য, আবার  দান থেকে বিরত থাকল তাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, সেই ঈমানের পূর্ণতা লাভ করল।’ (আবু দাউদ) পৃথিবীর ইতিহাসে ঈমানের পূর্ণতা লাভ করার জন্য  এমন অনেক আল্লাহপ্রিয় আছেন, যারা একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন।

মুমিনের অন্যতম গুণ হচ্ছে কখনো শিরক করবে না। আমাদের সমাজে শিরক একটি মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মানুষ আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টির সাথে আল্লাহর তুলনা করে শিরকের মতো জঘন্যতম পাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। যে ব্যক্তি শিরক করে, তাকে মুশরিক বলে।  কিন্তু মুমিন ব্যক্তি কখনো আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে তুলনা করে না। মুমিন সবসময় নিজেকে আল্লাহর দিকে একমুখী রাখে।।  আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তো একমুখী হয়ে তার দিকেই মুখ ফিরলাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের মধ্যে শামিল নয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২০৭) মুমিনের সামনে আল্লাহতায়ালার নাম নিলে ভয়ে তাদের অন্তর কেঁপে উঠবে এবং তারা একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সাচ্চা ঈমানদার তো তারাই আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের অন্তর কেঁপে উঠে আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয় তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তাঁরা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত-২)  মুমিনগণ পরস্পরের ভাই। তারা একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা বলবেন, যারা আমার খাতিরে পরস্পরকে ভালোবাসতে, তারা কোথায়?  আজ তোমাদেরকে আমার আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেব। আজ আমার আরশের ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া নেই।’ (মুসলিম : বাবুন ফী ফাদলিল হুব্বি লিল্লাহ, হাদিস নং-৪৬৫৫) এছাড়া মুমিন কখনো জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না, পিতা-মাতার অবাধ্য হয় না, আমানতের খিয়ানত করে না, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, হালাল উপার্জন করে হারাম থেকে দূরে থাকে, মানুষের হক নষ্ট করে না ইত্যাদি। পরিশেষে, আল্লাহরাব্বুল আলামিনের নিকট দোয়া করি, আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের সবাইকে  মুমিন হয়ে মৃত্যুবরণ করার তাওফিক দান করেন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

Wordbridge School
Link copied!