• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্নত ও আধুনিক বিজ্ঞান


মুহাম্মদ মিযান বিন রমজান জুলাই ৩০, ২০২১, ০২:৩৭ পিএম
সুন্নত ও আধুনিক বিজ্ঞান

ঢাকা : সময় যত যাচ্ছে, বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলছেন। তবে মজার বিষয় হলো বিজ্ঞানীরা আধুনিক যুগে যা কেবল আবিষ্কার করছেন বিশ্বনবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চৌদ্দশ বছর আগে সেগুলো উম্মতকে বাতলে দিয়েছেন। সেগুলোর উপর আমলের জোর তাগিদ দিয়েছেন। এ জন্যই তো আধুনিক এই যুগে রাসূলের সুন্নত গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা নিত্যনতুন বস্তু আবিষ্কার করে চলছেন।

খাওয়ার সুন্নত : বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের কল্যাণ সাধনে সবকিছুর সবিস্তারে বর্ণনা দিয়ে গেছেন। মানব জীবনের কোনো দিক কিংবা অংশ বাদ পড়েনি  তার আদর্শ থেকে। খানাপিনা থেকে শুরু বাথরুম কীভাবে করতে হবে সবকিছুর আদ্যোপান্ত উম্মতকে শিক্ষা নির্দ্বিধায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবার খাও।  এক-তৃতীয়াংশ পানি পান করো এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রেখে দাও। (তিরমিজি শরীফ)

রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো পেট ভরে খেতেন না। পেটের একটি অংশ খালি রাখতেন  অর্থাৎ এ পরিমাণ খানা খেতেন না, যার কারণে ঢেকুর ওঠে। দ্বিতীয়ত ক্ষুধা থাকা অবস্থাতেই আহার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতেন।

বর্তমান বিজ্ঞানীরা বারবার এ কথার ওপর জোর তাগিদ দিচ্ছেন যে, কম আহার করো তাহলে বেশিদিন বাঁচতে পারবে। রাসুলের উক্ত হাদিসে গবেষণা করে প্রফেসর রিচার্ড বার্ড বলেন, মুসলমানদের নবী খাবার খাওয়ার ব্যাপারে যে নির্দেশনা পেশ করেছেন তা যদি আজকের আধুনিক যুগের মানুষ গ্রহণ করে তাহলে মস্তিষ্কের ব্যাধি, চক্ষূরোগ, হূদরোগ, জিহ্বা ও গলার ঘা, দেহের নিম্নাংশ অবশ হওয়াসহ আরো নানান রোগব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে। খাবারের ১০% আমাদের শরীরের অংশে পরিণত হয়। বাকি ৯০% আমাদের শরীর তা গ্রহণ করে না। পুরো খাবারের এক-দশমাংশ আমাদের শরীরের অংশ হচ্ছে। বাকিটা শরীর গ্রহণ না করে বের করে দিচ্ছে।

পেট ভরে আহার করার কারণে নানান ব্যাধি হয়। কখনো পেটের পীড়া। কখনো গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা। শরীরে কোনো না কোনো রোগ লেগেই আছে। আজকাল গ্যাস্ট্রিক মুক্ত মানুষ পাওয়া বড় অবিশ্বাসের ব্যাপার। সকল রোগব্যাধির মূল হোতাই হলো পেট ভরে খাবার খাওয়া।

আঙুল চেটে খাওয়া : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাওয়ার মাঝে এবং পরে আঙুল চেটে খেতেন। (তিরমিজি শরীফ)। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আবিষ্কার করেছেন খাওয়া শেষ হলে আঙুল চাটার সময় মুখের ভেতর সেলিভারী গ্ল্যান্ড (Salivary Gland) থেকে টায়ালিন (Ptyalin) নামক এক প্রকার পাচক রস বের হয়, যা খাবার পাকস্থলী থেকে শিষণ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই প্রায় অর্ধেক হজম হয়ে যায়।

টয়লেট পেপার ব্যবহার : পানি খরচ করার আগে ঢিলা-কুলুপ বা টয়লেট পেপার ব্যবহার করা। (বায়হাকি, হাদিস-৫১৭)

ঢিলা ও পানি খরচ করার সময় বাম হাত ব্যবহার করা। (বুখারি শরিফ, হাদিস- ১৫৪)। প্রস্রাব পায়খানার পর ঢিলা কুলুপ ব্যবহার করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় আগে ঢিলা ব্যবহার করতেন তারপর পানি। রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার করার জন্য জোর তাগিদ দিতেন।

বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান চৌদ্দশ বছর আগের সেই কথার বাস্তবতা স্বীকার করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, শরীরের নানা প্রকার জীবাণুর ১০ শতাংশ মলত্যাগের সাথে বের হয়। তাই মলত্যাগ শেষ হলে গুহ্যদ্বারে প্রথমে ঢিলা ব্যবহার করা তারপর পানি। শুধু পানি ব্যবহার করলে মলত্যাগের জীবাণু হাতের আঁকাবাঁকা রেখাগুলোতে ঢুকে থাকে। ঢিলা ব্যবহারের পর, পানি ব্যবহার করলে মলদ্বার সুন্দরভাবে পরিষ্কার হয় এবং হাতেও কোনো জীবাণু লেগে থাকে না।

তারপর মাটিতে হাত ঘষে ধৌত করা। এরও অনেক যুক্তিসংগত কারণ আছে। বক্র কৃমির ডিম খুব ছোট হয়, যা আগে উল্লেখ করা হয়েছে। হাতের চিকন রেখাগুলোতে এ ডিমগুলো বসে থাকে। হাত যতই কচলিয়ে ধোয়া হোক না কেন এগুলো দূর হয় না। কিন্তু মাটিতে ভালোভাবে হাত ঘষে ধুলে ওগুলো আর থাকতে পারে না।

মেসওয়াক : মেসওয়াক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে মেসওয়াকরত অবস্থায়। তিনি বলেন, এমন কখনো হয়নি যে, জিবরাঈল আমার কাছে এসেছেন আর আমাকে মেসওয়াক করার আদেশ করেননি। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এ সুন্নত থেকে বেশকিছু তথ্য বের করেছেন। দাঁতের ভয়ংকর কয়েকটি রোগ হয়ে থাকে। যেমন : জিঞ্জিভাইটিস (Gingivitis), এ রোগ হলে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে থাকে এবং পচন ধরে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। কেরিস টিথ- এ রোগ হলে দাঁতের ক্ষয় শুরু হয়। পাইওরিয়া (Pyorrhoea)- এতে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, রক্ত ঝরে। মিসওয়াক এ রোগগুলো দূর করতে সক্ষম। চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে, মেসওয়াক ব্যবহারের দ্বারা মৃতের মস্তিষ্কের সুস্থতা অটুট থাকে। মেসওয়াক ব্যবহার না করলে মুখে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় এবং তা থেকে মাড়ি ও চোয়ালে পুঁজ সৃষ্টি হয়, যা মস্তিষ্কের রোগ এবং  হূদরোগও হওয়ার কারণ।

কখনো কখনো গর্মি, দুর্গন্ধ এবং জীবাণুর কারণে মুখের ভেতর ফোঁড়া হয়ে ঘা সৃষ্টি হয়। এগুলো কখনো প্রকাশ পায় আবার কখনো প্রকাশ পায় না, এটা খুবই কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর। এর জীবাণু পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়ে মুখকে আক্রান্তস্থলে পরিণত করে। ফলে খাবার গ্রহণ মুশকিল হয়ে পড়ে। প্রতিদিন নিয়মিত মিসওয়াক করলে এবং লালা মুখের ভেতর উত্তমরূপে মিশে গেলে এ রোগ হয় না।

মানুষের অমূল্য সম্পদ হচ্ছে দৃষ্টিশক্তি। দাঁতের অপরিচ্ছন্নতা চোখের বিভিন্ন রোগের কারণ। কেননা দাঁতের সঙ্গে চোখের বিশেষ সংযোগ রয়েছে। তাই দাঁত আক্রান্ত হলে চোখও আক্রান্ত হয় এবং দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। যার দরুন এক সময় চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু নিয়মিত মেসওয়াক করলে এ ধরনের রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

লেখক : কবি, কলামিস্ট ও গল্পকার

 

Wordbridge School
Link copied!