• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
বিশ্বের নিম্নতম ইন্টারনেট গতি

এ কেমন ডিজিটালাইজেশন!


বিজ্ঞান-প্রযুকিত ডেস্ক অক্টোবর ১০, ২০২১, ০২:৫১ পিএম
এ কেমন ডিজিটালাইজেশন!

ঢাকা : চিরাচরিত নিয়মে-সত্য কথা ধীরে বললেও, তা সত্য হয়। আর মিথ্যা চিৎকার করে বললেও মিথ্যাই হয়। মিথ্যাকে চিৎকার করে বলে আসন পেতে হয়। সত্য আপনা আপনিই প্রতিষ্ঠা পায়। এটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উল্টো।

এখানে মিথ্যার বেসাতি চলে বেশুমার। মিথ্যাকে এখানে চিৎকার করে দাপটের সঙ্গে বারে বারে প্রচার করে প্রতিষ্ঠা করা হয়।  এত কিছুর পরেও পৃথিবীর যত রকম নেগেটিভ সূচক আছে, তার প্রায় সবগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। এই কদিন আগেই আবারও মহাসমারোহে বাংলাদেশ বায়ুদুষণে বিশ্বের এক নম্বর দেশ হয়েছে। অথচ সরকারি প্রচারযন্ত্রে কান পাতলে এসব পাওয়া যাবে না।

সবক্ষেত্রেই শীর্ষে? তা কিন্তু নয়। যেসব সেক্টরে জনগণের সামান্যতম কল্যাণ বা জনসেবার বিষয় আছে, সেসব সেক্টরে বাংলাদেশ আবার সবার নীচে, একেবারে তলানিতে। এই যে অষ্টপ্রহর ‘ডিজিটাল’, ‘ডিজিটাল’ করে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করা হচ্ছে, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশে কোথায়? ডিজিটাল বিশ্বের ১১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৩ তম হয়েছে। তার মানে একেবারে তলানিতে নয়; কিন্তু ‘ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স ২০২১’ এ দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশর অবস্থান সর্বনিম্ন। এই তথ্যগুলো প্রমাণের দরকার পড়ে না।

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান ওয়েবজগতে সবারই হাতের মুঠোয়। যে কেউ দেখতে পারেন। সুতরাং ‘বানিয়ে’ বা ‘মনগড়া বক্তব্য’ দেওয়ার সুযোগ নেই।

ওই সূচকে ইন্টারনেট সামর্থ্যের দিক থেকে বাংলাদেশ ৮৪তম, ই-গভর্নেন্স এ ১১০ দেশের মধ্যে ৮৬তম। বাংলাদেশকে যেসব মানদণ্ড পেছনে রেখেছে তা হচ্ছে, মোবাইল ইন্টারনেট গতি- ১১০তম, নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স- ৯৬তম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি সূচকে- ৯৬তম। অর্থাৎ মোবাইল ইন্টারনেট গতি ১১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১০তম। একেবারে তলানিতে। এটা কি কেউ মোবাইল অপারেটর, সরকারি পোষক সংস্থা, বিটিআরসি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি-বক্তব্য দেখে বুঝতে পারবেন? না। তাদের ও সবার বক্তব্য শুনলে মনে হবে ‘জগতের সব সুখ বুঝি এখানে’!

ওই সূচকে একমাত্র ব্রডব্যান্ড গতিতে বাংলাদেশ ৪৪ তম অবস্থানে; কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্রডব্যান্ড গ্রাহক মোট ইন্টারনেট গ্রাহকের মাত্র ৫ শতাংশ। বাকি ৯৫ শতাংশই মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক। ইন্টারনেটের গতি মাপার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওকলার ‘স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স’ মতে, বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫ নম্বরে (জুন ২০২১)।

বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় দীর্ঘ দিন অর্থনৈতিক সংকটে থাকা ভেনেজুয়েলা। যে উগান্ডাকে নিয়ে বাঙালি প্রতিনিয়ত এটা-ওটা ট্রল করে, তারাও আমাদের চেয়ে ৮ ধাপ এগিয়ে রয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশ সোমালিয়া থেকে ৪, সুদান থেকে ২ এবং জিম্বাবুয়ে থেকেও ১ ধাপ পিছিয়ে আছে।

এই পিছিয়ে থাকা কতটা লজ্জা এবং অপমানজনক তা কখনোই সরকারি আমলারা বুঝতে পারবেন না। ওই বোধই তাদের নেই। দুর্নীতি করতে করতে মিনিমাম লাজ-লজ্জাও শেষ হয়েছে তাদের।

মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গড়গতিতে আরও পিছিয়েছে বাংলাদেশ। দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতি ১২ দশমিক ৪৮ এমবিপিএস। আপলোডের গতি ৭ দশমিক ৯৮ এমবিপিএস। মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭টি দেশের মধ্যে ১৩৫তম। ইন্টারনেট অ্যাকসেস ও পারফরম্যান্স অ্যানালিসিস কোম্পানি ‘ওকলার’ জুন মাসের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ওকলা প্রতি মাসেই এ চিত্র তুলে ধরে।

অথচ বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরগুলো অনেকদিন ধরেই ৪জি গতির ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছে বলে দাবি করে। এমনকি খুব শিগগিরই তারা ইন্টারনেটের নবতম প্রযুক্তি ৫জি সেবা দেবে এমন কথাবার্তাও শোনা যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, ‘মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর যে পরিমাণে ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে, তার চেয়ে স্পেকট্রাম বা তরঙ্গের পরিমাণ কম থাকায় ইন্টারনেটের গতি কম হচ্ছে।‘ সমস্যার গোঁড়ায় হাত দেওয়ার দরকার মনে করেন না এরা; কিন্তু নির্জলা সত্যও মানতে পারেন না। মানবেন কেন? তাদের তো আর জনগণের কষ্টার্জিত টাকা খরচ করে বাজে সেবা দেওয়ার জন্য কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না।

যাই হোক, এসব ডামাডোলে কর্মকর্তারা আবারও ফাঁপা আশ্বাস দিয়ে রেখেছেন। বলছেন, ‘এই নিলাম থেকে অপারেটররা প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম কিনে নেওয়ার পর আগামী মাস থেকে ইন্টারনেট সেবার অগ্রগতি হবে বলে তারা আশা করছেন।‘ বেশ। তাদের আশাবাদ যে শেষ পর্যন্ত নৈরাশ্য, তা অনেক বারই প্রমাণ হয়েছে।

এই স্পিড একদিকে মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘ্নিত করছে, অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুতেই পিছিয়ে পড়ছে। এর উপর যদি দেখা যায়, ওই নিম্নতম স্পিডের ইন্টারনেট আবার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? স্পিডে সবার নিচে থাকলেও দামে সবার উপরে। বিশ্বের তুলনা করার দরকার নেই।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, বিশেষত সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বাংলাদেশের জনগণকে ইন্টারনেট কিনতে হয়। ডিজিটাল উন্নয়নের তোড়ে আজ অমুক পর্যায়ে উন্নীত হলো দেশ, কাল তমুক খাতে অগ্রসর হলো দেশ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হলেও, বেশি দামে ইন্টারনেট কেনা থেকে মুক্তি নেই জনসাধারণের। চটকদারী বিজ্ঞাপন আর মনভোলানো ধাপ্পাবাজী দিয়ে মোবাইল অপারেটররা চড়া দামে ইন্টারনেট বিক্রি করে। তারপরও বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় দেখা যায় অমুক মোবাইল অপারেটরের কাছে সরকারের পাওনা ৩০/৪০ কোটি টাকা। তারা যখন কর, ট্যাক্স, ভ্যাট, রেগুলেটরি ডিউটি দেয় না, তখন সরকারি প্রতিষ্ঠান মামলা করে। অপারেটররা দেশের নাম করা সব ব্যারিস্টার ‘কিনে’ রেখেছে। তারা দিনের পর দিন সময়ক্ষেপণ করে। এরই মধ্যে ‘সিস্টেম লস’ হিসাবে জনগণের ঘাড়ের ওপর আরও কিছু ট্যাক্স-ভ্যাট আরোপ হয়। সেই দায়ও জনগণই মেটায়। এ যেন এক ভানুমতির খেল।

করদাতা জনগণ এই খেল থেকে মুক্তি চায়। আপনারা কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করুন। কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করুন। সবই তো ‘গৌরীসেন’-এর টাকশাল থেকে আসে; কিন্তু সেসব অ্যাডজাস্ট করার জন্য জনগণের ঘাড়-মাথাকে বেছে নেওয়া কেন? একটু রেহাই দিন তাদের। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল

মোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!