• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি আনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৮, ২০১৬, ০৪:৪৯ পিএম
সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি আনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিশেষ প্রতিনিধি
চার বছর পর সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি থেকে সরে এসে নতুন সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিনিয়োগের পরিবেশ চাঙ্গা করে কৌশল নেওয়া হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির। বিশেষ করে ক্ষুদ্র-মাঝারি এবং কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও ৬ দশমিক ২ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্য থাকছে এবার।
১৪ জানুয়ারি চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ বাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ এফ এম আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হলেও সব খাতে ঢালাও ঋণ যাক, সেটিও বাংলাদেশ ব্যাংক চায় না। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বড় গ্রাহকদের দিকে না তাকিয়ে ছোট উদ্যোক্তাসহ কৃষি খাতে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এরই অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই বিভাগ মাস্টার সার্কুলারের পরিবর্তন এনেছে।
নতুন নীতিতে এসএমই ঋণের ১০ শতাংশের বেশি নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগামী ৫ বছরে এই হার ১৫ শতাংশে উন্নীত করার জন্যও বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।
অর্থায়নের ক্ষেত্রে এসএমই খাতের সংজ্ঞাও পরিবর্তন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তাতে  নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, এখন থেকে মোট ঋণের ২০ শতাংশ এসএমই খাতে বিতরণ করতে হবে। সামগ্রিক এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে মাঝারি খাতের চেয়ে ক্ষুদ্র খাতে ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এসএমই খাতের মধ্যে ৫০ শতাংশ ঋণ দিতে হবে কটেজ, মাইক্রো, ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্ষুদ্র মাঝারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ এবং ম্যানুফ্যাকচারিং-এ সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংক।
নির্বাচিত (সিলেকটিভ) খাতে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং রপ্তানিমুখী, উৎপাদনশীল ও পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনে আগের চেয়ে বেশি অর্থ বা ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বাইরে এরিয়া অ্যাপ্রোচ ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নারী উদ্যোক্তা ও সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল সাংবাদিকদের বলেন, অন্যান্য বছর জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও এবার এগিয়ে আনা হয়েছে। মুদ্রানীতি ঘোষণা দেরি হলে এর একটা প্রভাব পড়ে। এ কারণেই এবার সময় এগিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিনিয়োগ পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা এই পরিবেশটাকে কাজে লাগাতে চাই। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ চলছে।
এদিকে ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা বিপুল পরিমাণের অলস অর্থ কাজে লাগাতে নতুন মুদ্রানীতি সম্প্রসারণমূলক করার পক্ষে মত দিয়েছেন অধিকাংশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকরা শুধু বড় গ্রাহকদের দিকে তাকিয়ে না থেকে এসএমই গ্রাহকদের ঋণের চাহিদা বাড়ানোর মাধ্যমে অলস অর্থ বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় বিষয়টি উঠে আসে।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি এই মুহূর্তে খুব দরকার। বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোক্তাদের আরও কিছু ছাড় দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি বিদেশি ঋণের লাগাম টানার পরামর্শও দেন তারা। কারণ, ব্যাংকগুলোর কাছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি আমানত অলস পড়ে আছে।
বিরূপাক্ষ পাল বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আসন্ন মুদ্রানীতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে। এর জন্য আগের মুদ্রানীতিরই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে আসন্ন মুদ্রানীতিতে। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি মাথায় রেখেই প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতি প্রণয়ণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ডিসেম্বরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা নভেম্বরের চেয়ে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও মনে করেন, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বার্ষিক সাধারণ গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২০ শতাংশে রাখা সম্ভব হবে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে খাদ্য উপখাতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। ডিসেম্বরে খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ। নভেম্বরে এটি ছিল ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকও মনে করে, গ্যাস বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর পাশাপাশি বিনিয়োগের বড় শত্রু  উচ্চ সুদ। সুদের হার কমানোর জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নতুন মুদ্রানীতিতে। এ সংক্রান্ত নতুন ঘোষণাও আসবে।
ইতিমধ্যে নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্পের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় ৩৫ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। স্বল্প সুদে এই তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের জন্য ইতিমধ্যে ১৯টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
অবশ্য আগের মুদ্রানীতিতে উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পকে উৎসাহিত করতে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে ৫০ কোটি ডলার বা প্রায় চার হাজার কোটি টাকার আলাদা দুটি তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছিল।
৬ মাস আগে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৫ শতাংশ। কিন্তু উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যামাত্রা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে যায়নি। এ কারণে পূরণ হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গতবছরের অক্টোবর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ২২ শতাংশে। নভেম্বর-ডিসেম্বরেও এই প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশের একটু বেশি রয়েছে।
এক বছর আগের (২০১৪-১৫ জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতেও বেসরকারি খাতে সাড়ে ১৫ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করে শেষ পর্যন্ত তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বছর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ।


সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!