• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
বাড়ছে পদপ্রত্যাশীদের সিভির স্তূপ

নতুন কমিটি ঘিরে জটিলতা বাড়ছে বিএনপিতে


জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৩০, ২০১৬, ০৬:৫৫ পিএম
নতুন কমিটি ঘিরে জটিলতা বাড়ছে বিএনপিতে

বিএনপির নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে যত দেরি হচ্ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জটিলতা। ধাপে ধাপে এ কমিটি ঘোষণায় তৈরি হচ্ছে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের ক্ষেত্র। এতে করে দলের সর্বস্তরে অস্বস্তি যেমন আছে, তেমনি চিড় ধরতে শুরু করেছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশায়। আবার কমিটি গঠনের এ বিলম্বের সুযোগে বাড়ছে পদপ্রত্যাশীদের সিভির (বায়োডাটা) স্তূপ। অন্যদিকে তদবির আর লবিংয়ে জোরে দীর্ঘ হচ্ছে সুপারিশের তালিকাও।

২০০৯ সালের ডিসেম্বরে পঞ্চম কাউন্সিলের পর মাত্র ২২ দিনের মাথায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। অথচ গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর প্রায় দেড় মাস হতে চলল, এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কোনো তোড়জোড়ই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত তিন ধাপে কেন্দ্রীয় কমিটির ৪১টি পদে নেতাদের মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশাল কলেবরের কমিটি এখনও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।

এদিকে ধাপে ধাপে কমিটি ঘোষণায় পদ পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে দলের ভেতরে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া আরও জটিলতা তৈরি করেছে। যোগ্যতা অনুযায়ী পদ দেয়া হয়েছে কি হয়নি, তা নিয়ে নেতাদের একটি অংশ প্রশ্ন তুলেছে প্রকাশ্যেই। কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে কমিটি কেন্দ্রিক বাণিজ্যের অভিযোগের ক্ষেত্রও বিস্তৃত হয়েছে। এসব অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও কয়েকটি গণমাধ্যমের ফলাও প্রচারে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে দলটির হাইকমান্ড। প্রকাশিত সংবাদের যেকোনো ‘ভিত্তি’ নেই, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে আপাতত ‘বাঁচতে’ চাইছে দলটি। এ বিষয়ে বিএনপির নতুন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমকে বলেছেন, কাউন্সিলে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নেতা মনোনয়নের একক এখতিয়ার দলের চেয়ারপারসনের। তিনি তার সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই যোগ্যতা অনুযায়ী নেতা মনোনয়ন দিচ্ছেন। এখানে অন্য কারো প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ নেই। যেসব অভিযোগ আসছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।

কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে উত্থাপিত অভিযোগ গায়ে না মাখালেও, হাইকমান্ড এখন সতর্কতার সাথে এগোচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও মতামত নেয়া হচ্ছে। মূলত এ কারণেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণায় দেরি হচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক, সহসম্পাদক, সদস্য ও উপকমিটি নিয়ে বেশি সময় দিতে হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের।

তিন ধাপে ঘোষিত পদগুলোয় যারা পদ পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন, তাদের মধ্যেই উদ্বেগ কাজ করছে বেশি। দলের চেয়ারপারসন তাদের কী পদ দেন, সে অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। ঘোষিত পদগুলোর ক্ষেত্রে সিনিয়র-জুনিয়রিটির কিছুটা ব্যত্যয় হয়েছে, এমনও মনে করছেন দলের কেউ কেউ। সম্প্রতি মহিলা দলের দুই নেত্রী শিরিন সুলতানা ও রেহানা আক্তার রানু গুলশান কার্যালয়ে দলের চেয়ারপারসনের সামনে এ নিয়ে কথা বলেন। নিজেদের ‘স্ট্যাটাস’ নিয়ে তারা বেশি প্রতিক্রিয়া দেখানোয় তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন বিএনপি চেয়ারপারসন। এক প্রতিক্রিয়ায় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা বলেন, দেশনেত্রী প্রয়োজনে যেমনি আমাদের ধমকাবেন, তেমনি কাছেও টেনে নেবেন। এতে মান-অভিমানের কিছু নেই।

এ দিকে কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ায় গুলশান কার্যালয়ে প্রতিনিয়তই বাড়ছে সিভির স্তূপ। শীর্ষ অধিকাংশ নেতৃবৃন্দের কাছে এখনো জমা হচ্ছে পদপ্রত্যাশীদের রাজনৈতিক বায়োডাটা। সিভি দেয়ার হিড়িক দেখে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা রঙ্গ করে বলেই ফেললেন, ‘অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়ও জানা নেই, শোনা নেই এমন কেউ এসে বলছে, এই নিন আমার সিভি। আমি কেন্দ্রীয় কমিটিতে একটি পদ চাই।’ দলের একাধিক সিনিয়র নেতার অভিমত, কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ায় এসব বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলের ১০-১২ দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে দিলে সবচেয়ে ভালো হত। আর সবাইকে যেহেতু প্রত্যাশা অনুযায়ী খুশি করা সম্ভব নয়, সে জন্য একসাথে কমিটি ঘোষণা করা হলে প্রতিক্রিয়াও হত সাময়িক।

সোনালীনিউজ/ ঢাকা/ জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!