• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণফোরামে ফের উত্তেজনা, মন্টু-কিবরিয়া বিরোধ


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০, ০৩:২৯ পিএম
গণফোরামে ফের উত্তেজনা, মন্টু-কিবরিয়া বিরোধ

ঢাকা : প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরে এসে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে ভাঙনের মুখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়া দল গণফোরাম। দলটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে দলটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও আবু সাইয়িদ এবং কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তফা মহসিন মন্টুর বিরোধের জেরে এ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে দলটি। বর্তমান নেতৃত্ব গঠনতন্ত্র মেনে দল পরিচালনা করছে না এমন অভিযোগ এনে করণীয় নির্ধারণে ২৬ সেপ্টেম্বর মিটিং ডেকেছেন রেজা কিবরিয়া বিরোধীরা।

বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

গণফোরামের ভাঙনের বিষয়ে দেশ রূপান্তরকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক তারেক শামসুর রহমান বলেন, ‘গণফোরাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। এর কোনো গণভিত্তি নেই। জনগণের কাছে কোনো আবেদন রাখতে পারেনি দলটি। এটি ড. কামাল হোসেনের ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল এবং তার ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় চলে দলটি। দলটির কোনো ভবিষ্যৎও নেই। টিকবেও না।’

সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর গণফোরামের কাউন্সিল হয়। কাউন্সিলের পর থেকে গঠনতন্ত্র মেনে কোনো কার্যক্রম চালাচ্ছেন না রেজা কিবরিয়া। যাকে ইচ্ছা তাকে বহিষ্কার করছেন সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সম্পাদক রেজা কিবরিয়া। গঠনতন্ত্র মেনে দল পরিচালনার জন্য দলটির ৭০ জন নেতা চিঠি দিলেও তাতে সাড়া নেই তাদের। এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে আমরা ২৬ সেপ্টেম্বর মিটিং ডেকেছি। সেখানে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব আমরা।’

সুব্রত চৌধুরীদের মিটিং ডাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দলের মিটিং ডাকতে হলে আমি ডাকব না হয় আমার সম্পাদক রেজা কিবরিয়া ডাকবেন। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারা তো মিটিং ডাকার অধিকার রাখে না। মিটিং করতে তাদের নিষেধ করা হয়েছে। আশা করছি তারা সিদ্ধান্ত মানবেন।’

সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘যে গঠনতন্ত্রের দোহাই দেওয়া হচ্ছে তা তো সাধারণ সম্পাদক নিজেই মানছেন না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালনা করছেন না। গঠনতন্ত্রে আছে ৩০ দিনে সম্পাদক পরিষদ, ৬০ দিনে স্থায়ী কমিটি এবং ৯০ দিনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করতে হবে। ২০১৯ সালে ৫ মে ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার এক বছরের মধ্যে একটি মিটিংও উনি করেনি। এসব মিটিং আহ্বান করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির ৭০ জন সদস্য লিখিতভাবে চিঠি দিয়েছে। উল্টো তাদের মধ্যে ১৩ জনকে শোকজ নোটিস এবং চারজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এভাবে তো দল চলতে পারে না। এটা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’

২৬ সেপ্টেম্বরের বৈঠকের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত রবিবার দলের বর্ধিত সভায় রেজা কিবরিয়া ছাড়া সভাপতি কামাল হোসেনসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বাকি সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সারা দেশের জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিনিধিদের আসতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

সুব্রত চৌধুরীর এমন অভিযোগের বিষয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে গণফোরামের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’

অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সূত্রপাত যেভাবে : দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে এম মোকাব্বির খান শপথ নিলে ক্ষুব্ধ হন দলটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। এমনকি তাকে গত বছর অনুষ্ঠিত দলের কাউন্সিলে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য ড. কামালের প্রতি অনুরোধ রাখেন। কিন্তু সে অনুরোধ উপেক্ষা করে তাকে কাউন্সিলে ডাকেন ড. কামাল হোসেন।

শুধু তাই নয়, কাউন্সিলের পর ঘোষিত কমিটিতে মন্টুকে বাদ দিয়ে রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর থেকে গণফোরামে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দাঁড়ায় দুই গ্রুপ। রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেন অন্য পক্ষের নেতারা। একপর্যায়ে রেজা কিবরিয়া চারজনকে বহিষ্কার করেন।

তারা হলেন কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল হাসিব চৌধুরী, খান সিদ্দিকুর রহমান, হেলাল উদ্দিন ও লতিফুল বারী হামিম। সুব্রত চৌধুরীরাও পাল্টা বহিষ্কার করেন সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মহসীন রশিদ, শফিকউল্লাহ ও মোশতাক আহমেদকে।

পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্যে গত ৪ মার্চ গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। তিনি নিজে আহ্বায়ক হয়ে সাধারণ সম্পাদক করেন রেজা কিবরিয়াকে।

অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে ভাঙনের দিকে যাওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে দলটির একাধিক নেতা বলেন, ‘রেজা কিবরিয়া রাজনৈতিক মানুষ নন। তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই।

গণফোরাম করার পর থেকে মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরীরা দলটিকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন। এখন কাউন্সিলের অরাজনৈতিক রেজা কিবরিয়াকে মহাসচিব করাতে দলটি রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে। রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই দলটিতে। এর ধারাবাহিকতায় ২৬ সেপ্টেম্বর দলের নামে বর্ধিত সভা ডেকেছেন গত কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন মন্টু।’

এদিকে কিছু নেতাদের মিটিং ডাকার বিষয়টিতে ‘অগঠনতান্ত্রিক’ আখ্যায়িত করে দলটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘ওই সভার সঙ্গে গণফোরামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওরা এরকম বর্ধিত সভা আহ্বান করতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণভাবে গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ। কথিত ওই সভায় গণফোরামের কোনো জেলা কমিটির নেতারা আসবেন না। আমার সঙ্গে প্রত্যেকটা জেলা কমিটির নেতাদের কথা হয়েছে। গাজীপুর আর এলিফ্যান্ট রোড থেকে কিছু লোকজন নিয়ে এই সভা হবে।’

তিনি দাবি করেন, ‘সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর আমি চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, রাজশাহী, সিলেটসহ বেশকিছু জেলায় গিয়ে কমিটিগুলোকে সক্রিয় করার কাজ করেছি। আমাদের প্রায় ৩৫টি জেলায় সক্রিয় সাংগঠনিক কাজ আছে, আরও জেলায় আমরা কাজ করছিলাম। এর মধ্যে কভিড-১৯ প্রকোপের কারণে রাজনৈতিক কর্মকা- স্থগিত হয়ে যায়।’

সুব্রত চৌধুরীদের আলাদা চলার বিষয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, যে কারও রাজনীতি করার অধিকার আছে। তারা কোনো দল গঠন করতে পারেন। কিন্তু গণফোরামের নাম ব্যবহার করে কোনো সভা করার অধিকার কারও নেই।

ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ১৯৯৩ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে বেরিয়ে আসা সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিককে সঙ্গে নিয়ে গণফোরাম গঠন করেন। পরে মানিক মারা গেলে আওয়ামী যুবলীগ থেকে আসা মন্টুকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলটি বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে অংশ নিয়ে প্রথম সংসদে যায়। দলের প্রতীক ‘উদীয়মান সূর্য’ নিয়ে সিলেট-২ আসনে বিজয়ী হন মোকাব্বির খান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!