• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
‘রহমতের কামেলা’ দিয়ে চিকিৎসা

ওষুধের ছবি তুলতেই ৩ হাজার টাকা দাবি (ভিডিও)


মেহেদী হাসান সজল ও মো. আজাদ হোসেন মার্চ ১, ২০২১, ০৬:৪৯ পিএম
ওষুধের ছবি তুলতেই ৩ হাজার টাকা দাবি (ভিডিও)

সাগর নামে এক ব্যক্তির কান পরিস্কার করছেন হাতুড়ে চিকিৎসক বাবুল (ছবি: সোনালীনিউজ)

ঢাকা: দূর থেকে দেখে বুঝে ওঠার কোন উপায় নেই বাক্সে কি আছে। কাছে গিয়ে দেখা যায় বাক্সের চারপাশে সাজানো ছোট ছোট ওষুধের বোতল, যেন একটি ছোট্ট ফার্মেসি। হাতে প্লাস্টিকের টুল ও ছোট্ট এ ফার্মেসি গলায় ঝুলিয়ে ঘুরেন হাতুড়ে ‘কান গুতানি’ বা কানের ময়লা পরিস্কারকারী। মজার বিষয় হচ্ছে, তারা নিজেরাই চিকিৎসক, দেন কান পরিস্কারের চিকিৎসাও।

বাংলাদেশের শহরে-গ্রামে এদের প্রায়শই দেখতে পাওয়া যায়। তাদের সেবা নিয়ে থাকেন অনেক সচেতন নাগরিকও। এটা কতটুকু নিরাপদ তা চিন্তা না করেই সেবা নেন অনেকে।

এমনই একজন কান পরিস্কারকের দেখা মেলে রাজধানীর গুলিস্তান পার্কে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি গুলিস্তান পার্কে সাগর নামে এক ব্যক্তির কান পরিস্কার করছিলেন তিনি। ওই হাতুড়ে কান পরিস্কারকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার নাম বাবুল। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর, থাকেন রাজধানীর বঙ্গবাজার এলাকায়।

প্রতিদিনই তিনি রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মানুষের কান পরিস্কার করে থাকেন। একবার কান পরিস্কার করে নেন ৩০-৭০ টাকা। ওষুধসহ ৭০ টাকা এবং ঔষধ ছাড়া ৩০ টাকা। 

‘কান গুতানি’ পেশা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করলে উঠে আসে নানা তথ্য। কান পরিস্কারে যে ওষুধ ব্যবহার করেন তার মেয়াদ আছে কিনা এমন প্রশ্নে বাবুল বলেন, “মেয়াদ না থাকলে কেউ কাজ করে? এটা কান, এটা খেলার জিনিস নাকি? হোমিও ওষুধ দিয়ে পরিস্কার করি।” 

কান পরিস্কারের কাজে হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড, রহমতের কামেলাসহ আরও বেশ কিছু ঔষধের নাম বলেন বাবুল। তার দাবি এসব ওষুধ হোমিও ডাক্তারদের কাছ থেকে নেয়া হয়। এর মধ্যে হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড কাটা ছেড়ার কাজে আর রহমতের কামেলা কান পাকা রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাবুল বলেন, ডাক্তাররাও তাদের কাছে কান পরিস্কারের জন্য রোগী পাঠায়।

বাবুলের ব্যবহৃত কান পরিস্কারের ওষুধের বিষয়ে জানতে চাইলে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার খাঁন হোমিও হলের চিকিৎসক ডা. মো. মুসা খাঁন সোনালীনিউজকে বলেন, “হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড এটা কোন হোমিও ওষুধ না। এটা সংক্রমণনাশক। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। আর রহমতের কামেলা নামের কোন ওষুধ আমাদের হোমিও চিকিৎসায় নেই।” 

এদিকে পেশাগত বিষয় নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে বাবুলের বাক্সে রাখা ওষুধের ছবি তুলতে চাইলে ঘটে বিপত্তি। তিনি ছবি তুলতে দিতে নারাজ। কেন ছবি তুলতে দিতে চান না, এমন প্রশ্নে বলেন, “ছবি তুলতে টাকা লাগবে। আপনি ৩ হাজার টাকা দেন, তাইলে যে ‘সিন’ দরকার সব ধরনের ‘সিন’ নিতে পারবেন। নাটকের শুটিংয়ে নিলেও আমাদের টাকা দেয়। বিদেশ থেকে লোক এসে ছবি তুললেও টাকা দেয়। টাকা না দিলে ছবি তোলা যাবে না।”   

এই পেশায় কতদিন যাবৎ কাজ করেন, এমন প্রশ্নে বাবুল বলেন, “দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে এই পেশায় কাজ করছি। আমার বাবা করেছে ৩৭ বছর। আমাদের আরও অনেক লোক আছে। আমাদের সমিতিও আছে। আমাদের ওস্তাদরা বিহারিদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকেই পরবর্তীতে এই কাজ শিখেছি। তাদের অনেকেই মারা গেছেন।”

কথার এক পর্যায়ে ৩টি কাঠি বের করে দেখান বাবুল। যা ব্লেডের মতো ধারালো। বলেন, “প্রশিক্ষণ ছাড়া এটা দিয়ে কেউ কাজ করলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে যেতে পারে। আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছি, তাই  শত শত মানুষের কান পরিস্কার করলেও কোন সমস্যা হয় না।”

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি সোনালীনিউজকে বলেন, “রাস্তায় কান পরিস্কারে রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। যা কোন ভাবেই সাস্থ্যসম্মত নয়। এতে কানের পর্দা ফুটো হয়ে যেতে পারে। মারাত্মক যখম হতে পারে। কেননা, সাস্থ্যবিধি মেনে এই কাজ করা হয় না। আর এই ধরণের পেশা থাকা কোনভাবেই উচিত নয়।”

তিনি বলেন, “রাস্তায় বসে এভাবে কান পরিস্কারে ইনফেক শনের ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া, পরিস্কারের সময় সামান্য ধাক্কাতেও কানের বড় ক্ষতি হতে পারে। একটু অসচেতনতায় কানের ভিতরে ফুটো হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হতে পারে।” 

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!