• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শনিবারের অপেক্ষায় থাকে সোনিয়া-জিনিয়ারা (ভিডিও)


মেহেদী হাসান সজল ও মো. আজাদ হোসেন মার্চ ৩, ২০২১, ০৮:৩৪ পিএম
শনিবারের অপেক্ষায় থাকে সোনিয়া-জিনিয়ারা (ভিডিও)

জিনিয়া ও রাজশাহীর কিছু পথশিশু (ছবি: সোনালীনিউজ)

ঢাকা: নেই মাথা গোঁজার ঠাই; রাস্তার আঙ্গিনা কিংবা পার্কের বেঞ্চই তাদের কাছে আরামপ্রদ বিছানা। দু’মুঠো মানসম্মত খাবার যেন অকৃত্রিম পাওয়া তাদের জন্য। বলছিলাম রাজধানীর গুলিস্তান পার্ক, টিএসসি সংলগ্ন এলাকা ও কমলাপুর রেলস্টেশনের আশেপাশের একদল সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত পথশিশুদের কথা। এসব পথশিশুদের মধ্যে রয়েছে সোনিয়া, জিনিয়া, রাকিব ও অন্তরাসহ অনেকেই।

ব্যক্তি কিংবা সংগঠনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাই পারে এসব অবহেলিত শিশুদের মুখে হাঁসি ফেরাতে। সেই লক্ষ্যেই করোনাকালীন সময়ে পথচলা শুরু হয়েছিলো সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমাদের স্বপ্নযাত্রা’র। গত বছরের মে মাসের প্রথম দিকে 'একবেলার আহার' স্লোগান ধারণ করে সংগঠনটি প্রতি শনিবার রাজধানীর গুলিস্তান পার্ক, টিএসসি, কমলাপুর রেলস্টেশন, শহীদ মিনারসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় পথশিশু, বৃদ্ধ অসহায় বাস্তুহারা নারী-পুরুষদের মাঝে খাবার বিতরণ করে যাচ্ছে। এছাড়াও সংগঠনটি রাজশাহীর বেশ কয়েকটি এলাকায় খাদ্য বিতরণের কর্মযজ্ঞ চলমান রেখেছে। 

দীর্ঘ ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান সংগঠনটির মূল লক্ষ্য পথশিশুদের পাশে দাঁড়ানো হলেও করোনা পরিস্থিতি ও বৃদ্ধ অসহায় মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারিত জায়গায় সব বয়সী অবহেলিতদের 'একবেলার আহার' জোগান দিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীতে সংগঠনটি প্রতি শনিবার ২৫০-৩০০ উপবাসী পথশিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে খাবার বিতরণ করে আসছে। তাদের আয়োজনে শনিবার আসলেই যেন এক মিলনমেলায় মেতে ওঠে বাস্তুহীন অবহেলিত মানুষরা। কেননা দিনটিতে ভালো মানের দু'মুঠো খাবার পাওয়া যাবে সেই আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে।

রাজধানীর গুলিস্তান পার্ক ও রাজশাহীতে ‘আমাদের স্বপ্নযাত্রা’র উদ্দ্যোগে খাবার বিতরণ

সোনিয়া ও জিনিয়া দুই বোন। তারা প্রতি শনিবার এই কর্মসূচীর খাবারের অপেক্ষায় থাকে। দাদির সঙ্গে থাকেন তারা। বাবা-মায়ের বিষয়ে তেমন কিছুই জানে না। ফুল বিক্রি করে চলে তাদের দু’বোনের জীবিকা।

বিষয়টি নিয়ে ‘আমাদের স্বপ্নযাত্রা’র সেচ্ছাসেবী জনী আহমেদ সোনালীনিউজকে বলেন, “প্রতি শনিবার খাবার পেয়ে অনেক খুশি হয় সোনিয়া-জিনিয়া। ওরা নতুন নতুন খাবারের আবদার করে। দেখা হওয়া মাত্রই জিজ্ঞাসা, ভাইয়া তুমি কেমন আছো? নিজেদের পড়া-শোনার বিষয়ে কথা বলে তারা।” 

জনী বলেন, “ওদের সঙ্গে দেখা হলেই বলে ভাইয়া আমার একটা ফুল নেও। তোমরা আরও বেশি বেশি খাবার দিও, শীতের পোশাক কবে দিবা? খাবারের আমাদের জন্য স্পেশাল কি আনছো আজকে?”

সোনালীনিউজের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন জনী আহমেদ

ঢাকা কলেজের মাস্টার্স অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী জনী আহমেদ ও বেশ কিছু সরকারী চাকুরিজীবীদের ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে চলছে ‘আমাদের স্বপ্নযাত্রা’ সেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। সংগঠনটির কর্মসূচী ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে জনী আহমেদ বলেন, “করোনার প্রকট যখন চরম অবস্থা ধারণ করে তখন পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণের মধ্যদিয়ে আমাদের এই কর্মসূচী শুরু করি। মে মাস থেকে আমরা পথশিশু ও অসহয় বৃদ্ধদের ‘একবেলার আহার’ দিয়ে যাচ্ছি। প্রথম রাজধানীতে এই কর্মসূচী শুরু করলেও বর্তমানে রাজশাহীতেও চলমান রয়েছে।” 

তিনি বলেন, “মূলত অসহায় পথশিশুদের নিয়ে এই কর্মসূচী শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতি ও বৃদ্ধ অসহায় মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারিত জায়গায় সব বয়সী অবহেলিতদের মাঝে ‘একবেলার আহার’ দিয়ে যাচ্ছি। আমরা পরবর্তীতে পথশিশুদের পড়াশুনার বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে চাই। যাতে তারা হাতে কলমে প্রাথমিক শিক্ষাটা পায়।”    

জনী আহমেদ বলেন, “আমাদের যারা শুভাকাঙ্খী রয়েছেন তারা এই অর্থ জোগানে সহায়তা করছেন। পাশাপাশি আমরা যারা এখনও পড়াশুনা করছি তারা নিজ নিজ উদ্যোগে যতটুকু সম্ভব করছি। আমাদের সংগঠনের কোন ফান্ড নেই। আমাদের পিছনে আর্থিক কোন বড় প্রতিষ্ঠানও নেই। আমরা মূলত মানবিক দিক থেকে যে যতটুকু সম্ভব তা দিয়ে সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।”

‘আমাদের স্বপ্নযাত্রা’র ‘একবেলার আহার’ নিতে পথশিশুদের ভিড়

সেচ্চাসেবকমূলক কাজ করতে গিয়ে কোন ধরণের বাধার সম্মুখীন হতে হয় কীনা জানতে চাইলে জনী বলেন, “যেহেতু আমরা সেবামূলক কাজ করি, সেহেতু কেউ বাধা দেবে এমনটা হবার নয়। তবে, ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করতে গিয়ে আমাদের পরতে হয় জটিল সমীকরণে। তাদেরকে সুষ্ঠুভাবে খাবার বিতরণ করা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। কেননা, তারা আগে খাবার নেয়ার তাড়নায় হাতাহাতি পর্যন্ত শুরু করে দেয়। বিশেষ করে গুলিস্তান পার্কে খাবার বিতরণে এই সমস্যাটা হয়।”

আপনাদের সংগঠনের মাধ্যমে কিংবা ব্যক্তিগতভাবে বিত্তবান শ্রেণীকে এমন সেচ্চাসেবক কাজে আহ্বানে আপনার মতামত কি, জানতে চাইলে জনী বলেন, “আমি বলবো, প্রতিটি মানুষেরই নৈতিক দিক থেকে কিছু ভালো কাজে অংশ নেয়া উচিত। কোন সংগঠন কিংবা ব্যক্তি উদ্দ্যোগে যেভাবেই হোক, মানুষের কল্যানে আসলেই মিলে প্রকৃত সুখ। আমি চাই সমাজের বিত্তবানরা পথের অসহায় মানুষের পাশে থাকুক।”  

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!