• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালবিমুখ সাধারণ রোগী


বিশেষ প্রতিনিধি মে ১০, ২০২১, ১১:১৩ পিএম
হাসপাতালবিমুখ সাধারণ রোগী

ঢাকা : রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেখানে দৈনন্দিন প্রায় ২০ হাজার সাধারণ রোগী চিকিৎসা নিতেন, সেটি এখন অর্ধেকেরও নিচে। করোনা রোগীদের কারণে হাসপাতালগুলোতে অন্যান্য রোগীরা যাচ্ছেন না। রোগীদের বিনামূল্যের ওষুধও পড়ে আছে।

এ কারণে কোটি টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৪৭ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এর মধ্যে করোনা ডেডিকেটেড ৮৬টি হাসপাতালের মধ্যে কিছু হাসপাতালে কোভিড রোগীর পাশাপাশি নন-কোভিডের চিকিৎসাও চলে।

মহামারীর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, ‍কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে সারা দেশ থেকে সব ধরনের রোগীই আসতেন। অভিযোগ থাকলেও দেশের সিংহভাগ মানুষের ভরসা এখন এই সরকারি হাসপাতালগুলোই।

কিন্তু করোনার সময় এগুলোয় নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সংকুচিত হয়েছে। মানুষ খুব বিপদে না পড়লে এসব হাসপাতালে আসছে না।

রাজধানীর একটি করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, ‘প্রতিটি বিভাগের ওষুধ পড়ে আছে। এ বছর কেবল একটি বিভাগেরই প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই হিসাবে অন্যসব হাসপাতাল মিলিয়ে কত কোটি কোটি টাকার ওষুধ যে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে তা আঁচ করা যাচ্ছে না।’
‘এই হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের জন্য যে পরিমাণ জিনিস কেনা হয়েছিল, সেগুলোর ব্যবহার হচ্ছে না। প্যাথলজি বিভাগের জন্য যে পরিমাণ রি-অ্যাজেন্ট কেনা হয়েছিল সেগুলো নষ্ট হওয়ার পথে।’ জানালেন ওই ডাক্তার।

চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালের বিশেষায়িত বিভাগগুলোর যে সেবা সাধারণ মানুষের জন্য করোনার আগে দেওয়া হতো, সেটা এখন শূন্যের কোটায়। হূদরোগ বিভাগ, ক্যানসার বিভাগ, নেফ্রোলজি বিভাগসহ বিশেষায়িত বিভাগগুলোতে রোগী সংকটের কারণে ওষুধ ও প্যাথোলজির রি-অ্যাজেন্ট অব্যবহূত থেকে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

প্রসঙ্গত, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সরকারি হাসপাতালে যদি কোনো ওষুধ অব্যবহূত অবস্থায় থাকে তখন আরেক সরকারি হাসপাতালে সেটা হস্তান্তর করা যায়।

রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি সূত্র জানায়, যখন আরেকটি হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগ থেকে তাদের অব্যবহূত ওষুধ দিতে চাইলো তখন ক্যানসার হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছিল, তাদের নিজেদের ওষুধই পড়ে আছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, লকডাউনসহ বিভিন্ন কারণে ঢাকায় অন্য রোগী আসছে খুব কম। এই সমস্যা দেশের সব সরকারি হাসপাতালেই। বিশেষ করে যেগুলো করোনা ডেডিকেটেড ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর অন্যতম করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘মহামারীর আগে এ হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতেন। ভর্তি থাকতেন ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী। এসব রোগীদের জন্য ওষুধ কেনা থাকতো। অন্যদিকে করোনার চিকিৎসায় কিছু নির্দিষ্ট ওষুধই লাগে, খুব বেশি নয়। এ কারণে এসব হাসপাতালে সাধারণ ওষুধ পড়ে আছে।’

করোনা ডেডিকেটেড আরেকটি বড় হাসপাতাল মুগদা জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘হাসপাতালের সব ওষুধ করোনা রোগীদের দরকার হয় না। সেগুলো পড়ে আছে। অন্য হাসপাতালগুলোর সঙ্গে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ বিনিময় করছি।’

তিনি আরো জানান, ‘মেয়াদ ঘনিয়ে আসছে, এমন ওষুধ যে হাসপাতালগুলোতে দরকার হচ্ছে তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছি। কুর্মিটোলা, কুয়েত মৈত্রী, ডিএমসি, সোহরাওয়ার্দী ও সলিমুল্লাতেও ওষুধ পাঠানো হয়েছে।’

‘ওষুধ শেষ করে ফেললে জবাবদিহি করতে হয় না। কিন্তু কোনো ওষুধের যদি ডেট ওভার হয়ে যায় এবং বেশিরভাগই বাকি রয়ে যায়, তখন জবাবদিহি করতে হয়।’ বলেন তিনি।

এ অবস্থায় গতবছরের মে-তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ জারি করা হয়।

সরকারি হাসপাতালে বরাদ্দকৃত ওষুধের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ শীর্ষক ওই চিঠিতে বলা হয়, কোভিডকালীন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে নন-কোভিড রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় হাসপাতালে মজুত থাকা ওষুধ অব্যবহূত থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরকারি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা প্রদানের নিমিত্তে দেশের সব হাসপাতালে অব্যবহূত ওষুধ বিধি মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে।’

এ নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের বিভাগীয় এবং সিভিল সার্জনদের ওষুধ সমন্বয় করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে করোনায় ৯০ শতাংশ দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় অর্ধেক দেশে করোনার কারণে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন অসুখের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে।

২০ শতাংশ দেশ বলেছে, জীবন রক্ষাকারী জরুরি সেবা, জটিল ও সার্জিক্যাল কেয়ারের সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ৪৩ শতাংশ দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ার পেছনে বড় কারণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাও দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এ ছাড়া টিবি, এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি ও সি, ক্যানসার স্ক্রিনিং, ডায়াবেটিস, পরিবার পরিকল্পনা, দন্তচিকিৎসা ও অপুষ্টির মতো রোগের চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে।

কতো ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হতে পারে, সে হিসাব আছে কী-না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো হিসাব নেই। তবে চিঠি পেয়েছি মন্ত্রণালয় থেকে। সে চিঠি সব জায়গায় পাঠিয়ে পুরো বিষয়টি সমন্বয় করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকার বড় বড় সরকারি হাসপাতালগুলোতে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা চলতো। করোনার চেয়ে নন-কোভিডই বেশি ছিল। এখন নন-কোভিড রোগীরা খুব সিরিয়াস না হলে হাসপাতালে আসছেন না। আউটডোর ও ইনডোর- দুই জায়গাতেই তাদের সংখ্যা কমেছে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!