• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
দেশের ৫০তম বাজেট পেশ আজ

প্রয়োজন জীবনমুখী বাজেট


বিশেষ প্র্রতিনিধি জুন ৩, ২০২১, ০৯:৫১ এএম
প্রয়োজন জীবনমুখী বাজেট

ঢাকা : স্বাস্থ্য খাতে বলা হলেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ উন্নয়ন খাতে মেগা ১০ প্রকল্পে সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আসছে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বড় আকারের বাজেট। ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকারও বাড়ছে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় মিলে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।

দু’দফা বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপর্যস্ত হয়েছে মানুষের জীবন-জীবিকা। মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর দেশের দ্বিতীয় বাজেট হবে এটি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি উদ্ধার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বাড়াতে তাই আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটটিতে জীবনমুখী বরাদ্দ হওয়া দরকার। যেখানে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৪ শতাংশ করা উচিত।

কারণ মানুষ যদি তার কর্মে ফিরতে না পারে, তাহলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে না। পাশাপাশি দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাস দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাজীবনে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেটাকে স্বাভাবিক করতেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে।

অর্থ বিভাগ সূত্রের তথ্যানুযায়ী, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকারও বাড়ছে। করোনা মহামারির কারণে বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্য খাত।

২০২১-২২ অর্থবছরের এই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। সে হিসাবে চলতি অর্থবছর থেকে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়ছে ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বা ১১.৯ শতাংশ। তবে মোট বাজেটের অনুপাতে বরাদ্দ বাড়লেও এবং জিডিপির শতাংশ হিসাব করা হলে বরাদ্দ বাড়ছে না।

এদিকে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার আগামী বাজেটে উন্নয়ন খাতে খরচের (এডিপি) আকার হচ্ছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার। নতুন এডিপির এই আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ২০ হাজার ১৭৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বেশি।

এ দিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্বপ্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের মূল বাজেটের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১.৮৪ শতাংশ বেশি। মোট রাজস্বের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকেই আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

আয়-ব্যয়ের ব্যবধান বা ঘাটতি মেটাতে নতুন বাজেটে এক লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া হবে। বাকি ৮৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা বিদেশি উৎস থেক ঋণ বা অনুদানের সহায়তা নেওয়া হবে। আর বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকেই ঋণ নেওয়া হবে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ খাতে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।

এর বাইরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে যা বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।

অর্থ বিভাগ সূত্র বলছে, চলমান কোভিড-১৯ মোকাবেলায় চলতি বছরে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ, গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহনির্মাণ, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বিনা ও স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ এবং সার্বিক মানবসম্পদ (শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ) উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বরাদ্দও সেভাবে করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ও দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষের অভিমত হলো, মহামারি করোনাভাইরাসের এই কঠিন সময়ে নতুন বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নয়, গুরুত্ব ও নজর দিতে হবে জীবন ও জীবিকার উন্নয়নের প্রতি। নজর দিতে হবে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হলো, ভ্যাকসিনেশন, আইসিইউ, ভেন্টিলেশন, ডাক্তার, নার্স এসব খাতে, যাতে এসব পর্যাপ্ত থাকে। সংকটের কারণে যেন স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত না হয়। সেটা আগামী বাজেটে নিশ্চিত করতে হবে। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা দরকার। এটা থাকলে নতুন করে যারা দরিদ্র হয়েছে, তাদের সুরক্ষা দেওয়া সহজ হতো। এজন্য এ খাতে কমপক্ষে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ করা উচিত। স্বাস্থ্য খাতে নতুন বরাদ্দে অর্থের অপচয় হবে, দিন শেষে মানুষের উপকার হবে না।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন টিভি ও অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত আছে। তবে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এসব পাঠদান প্রক্রিয়াতে তেমন সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না।

বিশেষ করে অনলাইন পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কানো আর্থিক, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সম্পৃক্ততা নেই। ইন্টারনেট অ্যাকসেস, ডিভাইসসহ নানা সমস্যার কারণে অনলাইন ক্লাস তেমন সফল হচ্ছে না। গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাসের সুযোগ পায়নি। আগে শিক্ষা আর ধর্ম এক সঙ্গে বরাদ্দ দেওয়া হতো বাজেটে। এখানে শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এখন খুবই জরুরি।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকাস্থ সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, করোনা ও তার প্রভাব মোকাবিলাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী বাজেটে যেটার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো- স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে।

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হলো, ভ্যাকসিনেশন, আইসিইউ, ভেন্টিলেশন, ডাক্তার, নার্স এসব খাতে, যাতে এসব পর্যাপ্ত থাকে। সংকটের কারণে যেন স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত না হয়। সেটা আগামী বাজেটে নিশ্চিত করতে হবে।

তার মতে, বরাদ্দের অর্থ সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় তাও নিশ্চিত করা দরকার। কারণ সংক্রমণ দ্রুত রোধ করলেও এর অভিঘাত তো দ্রুত চলে যাবে না। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে শুধু অর্থায়নের বিষয় না, সেটার সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা এই করোনা পরিস্থিতিকে কীভাবে মোকাবেলা করতে পারি তা স্পষ্টভাবে আসা দরকার। কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করার মতো যেসব প্রকল্প চলমান আছে, সেগুলো যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো দরকার।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, নতুন অর্থবছরের যে বাজেট হবে তা অবশ্যই করোনা থেকে দেশের অর্থনীতিকে উত্তরণমুখী হতে হবে।

আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ অনেক বাড়াতে হবে। সেই অর্থ সঠিকভাবে খরচ করতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নিতে হবে। দরিদ্র ও কর্মহীনদের সহায়তা দিতে হবে। এসএমই খাতকে ব্যাপকভাবে সহায়তা দিতে হবে। যাতে তাদের মাধ্যমে কর্মসংস্থানটা আবার ফেরত আসে। এ বছর রাজস্ব বাড়বে না। কারণ অর্থনীতিই চাঙা নেই, স্থবির। সামনে আরও দু’তিনটি ঢেউ আসতেই পারে। সে জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!