• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় দুর্বল হচ্ছে দেশের অর্থনীতি!


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ২৭, ২০২১, ০২:২২ পিএম
করোনায় দুর্বল হচ্ছে দেশের অর্থনীতি!

ঢাকা : দফায় দফায় করোনার হানায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতি। কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা। দরিদ্রকে করেছে অতিদরিদ্র আর ব্যবসায়ীকে করছে পুঁজিহারা। অর্থনীতির এমন কোনো খাত নেই যা মহামারির থাবার শিকার হয়নি।   দেশের জন্য করোনাভাইরাস এখন সর্বগ্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মাঝে গতবছরের শেষের দিকে সংক্রমণ কিছুটা নিম্নমুখী হওয়ায় ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করেছিল অর্থনীতি। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে আবারো পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় লকডাউনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অর্থনীতি।

এরপর আবারো পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া একে একে প্রায় সব কিছুই খুলে দেওয়া হয়।

কিন্তু সবশেষ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে সারা দেশে করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে শুরু হয় সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন। এভাবে গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে একের পর লকডাউনের খপ্পরে পড়ে অর্থনীতিতে শনিরদশা লেগেই আছে।

অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে গতবছরের চেয়েও এবার দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম  এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চ্যালেঞ্জটা হলো এভাবে যদি করোনার হানা আসতে থাকে তাহলে এই ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে যে শক্তি তা ক্রমশ কমে যাওয়ার একটা ঝুঁকি রয়েছে।

কারণ, গতবছর অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে ঘুরে দাঁড়ানোর যে শক্তি ছিল, এবছর করোনা বারবার আঘাত হানায় সেই ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে।’

তার মতে, করোনার কারণে মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়া, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। ফলে দেশের যে একটা বড় সংখ্যক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার ওপরে অবস্থান করছে তারা দারিদ্র্যের মুখে পড়বে।

কিন্তু তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানে সরকারের ক্ষমতা সীমিত। তাই বর্তমান করোনা পরিস্থিতি আরো দীর্ঘায়িত হলে গতবছর অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে যে দ্রুততার সুযোগ এসেছিল, এবার তা  কিছুটা শ্লথ হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বিদায়ী অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পুরোদমেই চলছিল। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমদানি বিশেষ করে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছিল। কিন্তু গত এপ্রিল মাস থেকে করোনার নতুন ধাক্কা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার যাত্রাকে অনিশ্চিত করে ফেলেছে। অর্থনীতি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। করোনা চলমান ঢেউ অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া টিকবে নাকি আবার খাদের মধ্যে পড়বে তা নির্ভর করবে করোনা সংকট মোকাবিলার ওপর।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অর্থনীতি স্বাভাবিক হওয়া নির্ভর করছে সবাইকে করোনার টিকা দেওয়ার ওপর। কিন্তু সরকার বলছে, ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে আরো এক বছর লাগবে। তার মানে, এক বছরের আগে অর্থনীতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।’

এদিকে, করোনা সংক্রমণ রোধ করা না গেলে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের রপ্তানি বাণিজ্য আবারো হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।

তাদের মতে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ক্রমেই অর্থনীতি সচল হচ্ছে। এরফলে চাহিদা বাড়ছে, নতুন করে রপ্তানির অর্ডার আসছে। এটা রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য আশাব্যঞ্জক। কিন্তু সংক্রমণ আরো বাড়তে থাকলে ক্রেতারা আমাদের থেকে পণ্য নিবেন কিনা সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সিপিডির ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ভারতে যখন করোনা তীব্র আকার ধারণ করেছিল তখন অনেক ক্রেতাই ভারত থেকে বাংলাদেশে শিফট করেছিল। সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার যদি কমে আসে তাহলে এটা হয়তো তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে সংক্রমণ বেড়ে গেলে কেবল রপ্তানিই নয়, অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে মারাত্মকভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সেই জায়গা থেকে আমরা এখনো কোনো আশা দেখতে পারছিনা।’  

কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। গত এপ্রিলে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি।

এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ। এ হিসাব থেকে জাতীয় পরিসরে নতুন দরিদ্রের এ হিসাব (১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ) প্রাক্কলন করা হয়েছে।

সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে, তাতে বছরশেষে দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!