• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাকডাক দিচ্ছে বিএনপি, পাত্তা দিচ্ছে না আ.লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১১, ২০২১, ০৮:৫৩ পিএম
হাকডাক দিচ্ছে বিএনপি, পাত্তা দিচ্ছে না আ.লীগ

ঢাকা: প্রায় দেড় বছর করোনায় স্থবির ছিল জনজীবন। রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সবখানে মহামারির প্রভাব ছিল লক্ষণীয়। কিছুদিন ধরে করোনা সংক্রামণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এবং একইসঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। সরকারি, বিরোধী সব দলই সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করছে।

আরও পড়ুন: আন্দোলনের নতুন টিম বানাচ্ছে বিএনপি

আগামী সংসদ নির্বাচনে নিজেদের বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটে শুরু হয়েছে ব্যাপক তৎপরতা। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো বলছে দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেওয়া হবে না। তাই দ্বাদশ নির্বাচন পর্যন্ত নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ দখলে রাখবে বিএনপি ও মিত্র দলের নেতাকর্মীরা।

আরও পড়ুন: জোটগত রাজনীতিতে নতুনত্ব নিয়ে আসছে বিএনপি 

তবে বিএনপির আন্দোলনের পরিকল্পনাকে তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনের আগে দল পুনর্গঠনের কাজ আরো বাড়িয়ে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। 

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রাজনীতির মাঠ দখলে থাকলে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা করা কঠিন কোনো বিষয় হবে না। তবে জনগণের সম্পদের ওপর কোনো হামলা এলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগও পাল্টা জবাব দেবে। আর বিএনপি গুজব ছড়ালে তা প্রতিরোধ করা হবে বলে বলছেন দলটির নেতারা। 

আরও পড়ুন: সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তারেক রহমানের হাতে

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সম্ভাব্য মাঠ দখল কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজনীতি বোদ্ধা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে যারা জোটবদ্ধ হয়ে আছেন তারাও এখন নড়েচড়ে বসছেন। হিসাব কষছেন আগামী নির্বাচনে বৈতরণী পার হওয়ার কলাকৌশল নিয়ে। জোটে থেকে রাজনৈতিক প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়েও হিসাব করছেন তারা। এরই মধ্যে জোট নিয়ে দুই বড় দলের নির্বাচিত নেতারা কাজ শুরু করেছেন। নীরব দায়িত্ব পেয়ে ওই সব নেতা আপাতত ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের ছক কষছেন তারা। 
আলোচনায় চলে এসেছে নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন। বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হতে পারে নানামুখী চমকের মধ্য দিয়ে।

আরও পড়ুন: একটি কৌশলে মিল দু’দলে
 
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি দলীয় ফোরামের একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও সৎ, যোগ্য ও স্বচ্ছ ইমেজের এবং বিতর্কমুক্ত নেতাদেরই প্রার্থী করা হবে। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে কোথাও কোনো ধরনের বিদ্রোহ কিংবা বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের কঠোর সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর ধারণা, ইউপির আগে পৌরসভা এবং সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন ঘিরে দলগুলোর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক তৎপরতাও ধাপে ধাপে মাঠে বিস্তৃত হবে। আর সাংগঠনিক তৎপরতা দেশব্যাপী পূর্ণতা পাবে কার্যত ইউপি নির্বাচনের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে কাজ শুরু করেছে আ.লীগ
 
স্থানীয় নির্বাচন ঘিরে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিও পর্যায়ক্রমে দল গোছানোর কাজে হাত দিয়েছে। গত একমাসে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। মতবিনিময়কালে দলকে শক্তিশালী করা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইসি গঠন, নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মতো সুপারিশ উঠে এসেছে। দলকে শক্তিশালী করতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগও নিয়েছে দলটি। নিজ দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দলটির শীর্ষ নেতারা পেশাজীবীদের সঙ্গেও বৈঠক করছেন।

আরও পড়ুন : জামায়াতের মাস্টারপ্ল্যান ফাঁস

আওয়ামী লীগের জোটের শরিক জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি থাকলেও তারা আগামী নির্বাচন ঘিরে নতুন হিসাব-নিকাশ কষছে। জোটের ছোট ছোট দলও আস্তে আস্তে নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিচ্ছে জাতীয় সংসদ ও সংসদের বাইরে।

বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো ইউনিয়ন, পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সবার চোখ আগামী সংসদ নির্বাচনের দিকে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর কিছুটা কর্মচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেছে। সময়ের অভাবে আইন করে ইসি নিয়োগের সুযোগ না থাকায় বিগত দুবারের মতো এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমেই ইসি গঠন করা হবে বলে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও তার জোটের সহযোগী দলগুলো মনে করছে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে সরকার পছন্দের মানুষকে ফের নিয়োগ দিতে চাচ্ছে। দলটি বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনে অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না।

আরও পড়ুন: এবার আর হায়ারে খেলবে না বিএনপি
 
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকারকে হটাতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামীতে কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। জনগণ হতে দেবে না, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে নেমে এই সরকারকে হটিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বিএনপি তো সব সময়ই আন্দোলনের কথা বলে, মুখে মুখে আন্দোলনের কথা বলে আর মিথ্যার আশ্রয় নেয়। কিন্তু তারা এখনো আন্দোলন করতে পারেনি। যদি তারা আন্দোলনে নামে তবে আমরা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন তৎপর আছি। আমরা মূলত জনগণকে সচেতন করব।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ ভাবে মাঠ দখলের রাজনীতিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। তাই সবদল মিলে সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। 

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটাতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। এ ইস্যুতে সমাধানে আসতে হলে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!