• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
জনবল সংকটে ব্যাহত নজরদারি

অধরা নিরাপদ খাদ্য


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ১৫, ২০২১, ১১:১৯ পিএম
অধরা নিরাপদ খাদ্য

ঢাকা : স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল কিংবা সুস্থ জাতি, সুন্দর ভবিষ্যৎ। সমাজে প্রচলিত বিজ্ঞজনদের এসব কথার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু সুস্থ থাকার অন্যতম পূর্বশর্ত মানসম্মত নিরাপদ খাদ্য। অথচ দেশের মানুষের কাছে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন খাবারের নিশ্চয়তা আজো অধরা।

ফলে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগব্যাধি। হাসপাতালে রোগীদের ভিড় বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে মানুষের মাঝে উদ্বেগের শেষ নেই। সাধারণ হোটেল বা ফুটপাতে বিক্রি হওয়া খাবার কতটুকু নিরাপদ কিংবা মানসম্পন্ন তা দেখার কেউ নেই।

এমনকি বিভিন্ন ফলমূলেও মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মিশ্রণের ঘটনা ঘটছে অহরহ। সব শ্রেণির মানুষের পুষ্টির অন্যতম যোগানদাতা সহজলভ্য ফল কলা পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইথিফন।

এছাড়া, বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে ফরমালিন ব্যবহারের অভিযোগও দীর্ঘদিনের।

দেশে মানসম্পন্ন ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে কাজ করছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এর মধ্যে বিএসটিআই শুধুমাত্র প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মান নির্ণয়ে কাজ করে থাকে।

সংস্থাটির কৃষি ও খাদ্যজাত ৬১১টি পণ্যের মান নির্ধারণ করা আছে। এরমধ্যে বাধ্যতামূলক খাদ্যমান নির্ধারিত পণ্যের সংখ্যা ৮০টি। বাকিগুলো ব্যবহার্য পণ্য। ফলে বাকিসব পণ্যের মান নির্ধারণ হচ্ছে না বলা চলে।

বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন খাদ্যপণ্য ভোক্তা কতটুকু আস্থার সঙ্গে খেতে পারবে এ নিয়ে কথা হয় বিএসটিআইয়ের মান সংক্রান্ত ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নিলুফা হকের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সব খাবারের মান নির্ধারণ করিনা। আমরা বাধ্যতামূলক ৮০ টি খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকি। সেগুলোকে নিয়ে আমরা মোটামুটি কাজ করছি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি। আমরা শুধুমাত্র ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোর ওপর নজরদারি করে থাকি।’

তবে বিএসটিআই থেকে অনুমোদন নেওয়ার পরও বিভিন্ন সময় এসব পণ্যে ভেজাল দেওয়ার অভিযোগ উঠছে।

এ প্রসঙ্গে নিয়মিত মনিটরিংয়ের দাবি করে নিলুফা হক ভেজাল প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি লোকবল সংকটের বিষয়টিও তুলে ধরেন।

এদিকে, ফুটপাতসহ অন্যান্য খাবার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং সিটি করপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা। কিন্তু এসব সংস্থা বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করলেও তা চলে নামেমাত্র।

বিশেষ করে পবিত্র রমজানে এ ধরনের অভিযান বাড়লেও বছরের বাকি সময়টাতে তেমন তৎপরতার দেখা মেলে না। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম বিভাগের পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমরা মানসম্পন্ন নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু সারা বাংলাদেশে লাখ লাখ হোটেল রেস্তোরাঁ ফুটপাতের দোকান রয়েছে। সে তুলনায় আমাদের লোকবল খুবই সীমিত। এর ফলে নিয়মিত মনিটরিং ব্যাহত হচ্ছে। এই সংকট কাটাতে সময় লাগবে।’

দেশে মানসম্পন্ন নিরাপদ খাদ্য পরিস্থিতির এমন অবস্থার মধ্যদিয়েই গতকাল পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব মান দিবস’। ‘শেয়ার ভিশন ফর এ বেটার ওয়ার্ল্ড : স্ট্যান্ডার্ডস ফর এসডিজিস’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হয়।

খাদ্যপণ্যের বাংলাদেশ মানটি (বিডিএস) নির্ধারণ করে বিএসটিআইয়ের মান উইং। এ শাখাটি বিভাগীয় কমিটির মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় মান প্রণয়নের কাজ করে।

জাতীয় স্বার্থে ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে সময়ের প্রয়োজনে প্রণীত বাংলাদেশ মানগুলো ৫ বছর পর পর পুনরায় আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক মানের পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা হয়।

বিএসটিআই কর্তৃপক্ষের দাবি, মানের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয় দূর করার মতো আস্থা অর্জন করেছে তারা। সংস্থাটি ১৯৭৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মান সংস্থা আইএসওর সদস্য।

২০০১ সাল থেকে আইইসি অ্যাফিলিয়েট সদস্য এবং ২০১২ সাল থেকে আইইসি অ্যাফিলিয়েট প্লাস সদস্যপদ লাভ করে।

বিএসটিআইয়ের মান উইংয়ের উপ-পরিচালক (কৃষি ও খাদ্য) গোলাম মো. সারোয়ার বলেন, ‘মান নির্ধারণে বিএসটিআইয়ের একটি টেকনিক্যাল কমিটি আছে। এর মাধ্যমে পণ্য ও সেবার মানগুলো নির্ধারণ করা হয়। পাঁচটি স্ট্যান্ডার্ড মেথডের ওপর বাংলাদেশ মান নির্ধারণ করে।

‘মেথডগুলো হলো প্রোডাক্ট স্পেসিফিকেশন, মেথডস অফ-টেস্ট, কোড অফ প্র্যাকটিস গাইডলাইনস ও টারমিনোলজি-ভোকাবোলারি, গ্লোসারি অব টার্মস এবং বেসিক স্ট্যান্ডার্ডস।’

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিরাপদ খাদ্য প্রমিতকরণ ও প্রত্যয়ন সমন্বয় বিভাগের পরিচালক আবু সাইদ মো. নোমান বলেন, ‘কোনো খাদ্যপণ্যের মান নির্ধারণের প্রয়োজন হলে বিএসটিআই গঠিত কমিটিতে অংশীজন হিসেবে থাকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তবে বিএসটিআই খাদ্যমানের বিষয়ে আগে আমাদের কাছে একটা ড্রাফট পাঠায়। ওই ড্রাফট প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটিতে মতামত দিই।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!