• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রভাবশালী নেতাদের কাছে জিম্মি বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৬, ২০২১, ০৯:৩৫ পিএম
প্রভাবশালী নেতাদের কাছে জিম্মি বিএনপি

ঢাকা: দলের পুনর্গঠন নিয়ে সম্প্রতি সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকে তৃণমূল পুনর্গঠনে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সবার মতামত নেওয়ার পর ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন তারেক রহমান। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকদের একটি ‘ওয়ার্ক শিট’ তৈরি করতে বলা হয়। তাতে কোনো প্রক্রিয়া কিভাবে পুনর্গঠন করা হবে তা বিস্তারিত তুলে ধরতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: হাকডাক দিচ্ছে বিএনপি, পাত্তা দিচ্ছে না আ.লীগ

একইসঙ্গে তৃণমূলে যাতে যোগ্য ও ত্যাগীরা নেতৃত্বে আসে সেজন্য কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কাউন্সিল সম্ভব না হলে ন্যূনতম কর্মিসভা করতে হবে। কোনোমতেই পকেট কমিটি করা যাবে না। 

তবে আগামীদিনের আন্দোলনকে সামনে রেখে শীর্ষ নেতৃত্বের এই নির্দেশনা কেবল নির্দেশনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। তারেক রহমানের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের পথে সবথেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলটির প্রভাবশালী নেতারা। বলা চলে প্রভাবশালী নেতাদের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে বিএনপি।

আরও পড়ুন: আন্দোলনের নতুন টিম বানাচ্ছে বিএনপি

জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে যে কোনো মূল্যে নিজে কিংবা অনুসারীদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনতে মরিয়া তারা। ফলে বেশিরভাগ জেলার নেতৃত্বে ঘুরেফিরে আসছে একই মুখ। অতীতে আন্দোলনসহ দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ থাকার পরও নেতৃত্বের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

আবার এক নেতার এক পদ কার্যকরেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন এসব প্রভাবশালী নেতা। বারবার সতর্ক করার পরও তারা একাধিক পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। 

আরও পড়ুন: জোটগত রাজনীতিতে নতুনত্ব নিয়ে আসছে বিএনপি 

কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০টি জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে ৩১টি। ফরিদপুর ও লক্ষ্মীপুরের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল। শুক্রবার লক্ষ্মীপুর জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তারেক রহমানের হাতে

এবিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান সাংবাদিকদের বলেন, আগামীদিনের আন্দোলনকে ঘিরে পুরোদমে শুরু হয়েছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। বিগত সময়ে যারা রাজপথে ছিলেন তাদেরকেই শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হবে। সুবিধাবাদী কেউ নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। এবার প্রভাবশালীদের কারণে পুনর্গঠন থমকে যাওয়ারও সম্ভাবনা নেই। কারণ, এ ব্যাপারে হাইকমান্ড বেশ কঠোর।

আরও পড়ুন: একটি কৌশলে মিল দু’দলে

তিনি বলেন, কিছু এলাকায় একই ব্যক্তি টানা নেতৃত্বে আসছে এটা সত্যি। কিন্তু এতে দলের হাইকমান্ড বা নীতিনির্ধারকদের কোনো হাত নেই। কাউন্সিলররা যদি তাদের চায় তাহলে তো আমরা কিছু করতে পারি না। তবে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নেতৃত্বের বিকাশ। নতুন নেতৃত্ব আসলে দলও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়।

শাহজাহান বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক নেতা একটির বেশি পদে থাকতে পারবেন না। অনেকেই একাধিক পদ ছেড়ে দিয়েছেন। আমি নিজেও নোয়াখালী জেলার সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়েছি। যারা এখনো একাধিক পদে আছেন তারা নিশ্চয়ই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।

আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে কাজ শুরু করেছে আ.লীগ

এদিকে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় নতুন কমিটিতে পদ পেতে অনেকেই শুরু করছেন লবিং। ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় বাসায় যাচ্ছেন অনেকে। প্রভাবশালী নেতারাও বসে নেই।

হাইকমান্ডকে ম্যানেজ করে ধরে রাখতে চাচ্ছেন নিজেদের আধিপত্য। কোনো কোনো জেলায় গোপনে ভোটাভুটি হলেও সেখানে হেরে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। কিন্তু তৃণমূলের মতকে উপেক্ষা করে ভোটে হেরেও জেলার নেতৃত্বে আসছেন অনেকে। এক্ষেত্রে হাইকমান্ডও কঠোর সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। প্রভাবশালীদের কাছে অনেকটা জিম্মি।

আরও পড়ুন : জামায়াতের মাস্টারপ্ল্যান ফাঁস

শুধু কমিটি পুনর্গঠন নয় এক নেতার এক পদ কার্যকরেও বাধা প্রভাবশালীরা। কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার পর যাদের একাধিক পদ রয়েছে তাদের একটি রেখে বাকি পদ ছেড়ে দিতে বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েক নেতা হাইকমান্ডের এ নির্দেশ মেনে একাধিক পদ ছেড়ে দেন। কিন্তু প্রভাবশালী নেতারা দীর্ঘদিন কেন্দ্র ও জেলার নেতৃত্বে বহাল রয়েছেন।

আরও পড়ুন: এবার আর হায়ারে খেলবে না বিএনপি

সম্প্রতি তাদের একাধিক পদ ছেড়ে দিতে ফের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব নেতারা নানা কৌশলে পদ আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে জেলার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিন্তু নানা কৌশলে তারা জেলার কাউন্সিল আটকে রাখছেন।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!