• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলনের রূপরেখা সাজিয়ে ফেলেছে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২১, ২০২১, ০৯:২৪ পিএম
আন্দোলনের রূপরেখা সাজিয়ে ফেলেছে বিএনপি

ঢাকা: আইনের জালে দীর্ঘ সময় ধরে দলের সর্বোচ্চ নেতা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে।  ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দীর্ঘদিন ধরে আছেন লন্ডনে।এ অবস্থায় রাজপথ কিংবা সংসদ, কোথাও শক্তভাবে দাঁড়াতে পারছে না বিএনপি। বিচার বিভাগ থেকে প্রশাসন কোথাও যেন ঠাঁই নেই কয়েকবার রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকা এ দলটির। 

আরও পড়ুন: হাকডাক দিচ্ছে বিএনপি, পাত্তা দিচ্ছে না আ.লীগ

ইতোমধ্যে দেশের রাজনীতিতে বইতে শুরু করেছে জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া। নির্বাচন ঘিরে দলের প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্ত শুধু বৈঠকের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতারা জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটা জোরালো, শক্তিশালী আন্দোলনের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। তবে এক দফা দাবি আদায়ের আলোচনার দরজাও খোলা থাকবে।

আরও পড়ুন: আন্দোলনের নতুন টিম বানাচ্ছে বিএনপি

দলীয় সূত্র জানায়, যেহেতু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে এখনো দুই বছরের বেশি সময় বাকি আছে। তাই তাড়াহুড়া করে বা এখনই কোনো আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নেই নীতিনির্ধারকদের। তবে ২০২৩ সালের সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একটি রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে একটি রূপরেখার খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। একই সাথে ভবিষ্যতে আন্দোলন কর্মসূচিতে তৃণমূলসহ দেশের সকল নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং দলীয় ঐক্য ও সংহতি দৃঢ় করতে কাজ করে যাচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এরই মধ্যে আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ঢাকায় আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোয় পুনর্গঠন কাজ চলছে। এরপরই এক দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামবে বিএনপি।    

আরও পড়ুন: জোটগত রাজনীতিতে নতুনত্ব নিয়ে আসছে বিএনপি 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। কোনো সিদ্ধান্তেই অনড় থাকতে পারছেন না দলটির নেতারা। এমনকি অতীতে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দূরদর্শিতা দেখাতে পারেনি দলটি। বারবার কৌশলের কথা বললেও সেই কৌশলেরই বলি হচ্ছেন নেতারা। তাই দ্রুত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী করতে হবে। নইলে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলটির আন্দোলন বা সংলাপ কোনোটাই সুফল আসবে না।

আরও পড়ুন: সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তারেক রহমানের হাতে
  
দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে ডান-বাম সব রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে এক প্ল্যাটফরমে একত্র করতে চায় বিএনপি। এ ব্যাপারে দলের পক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। অভিন্ন দাবিতে প্রথমে দলগতভাবে আদর্শভিত্তিক যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে নাকি আগে সংলাপের দিকে যাবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তবে, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সংলাপেরও প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন দলের অনেকে নেতা। তাই বলে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণের মোটেই পক্ষপাতী নন তারা। এদিকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার-নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংলাপের জন্য বিএনপির এই বার্তা নাকচ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকারে প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।

আরও পড়ুন: একটি কৌশলে মিল দু’দলে

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আলোচনার কি আছে। আমরা কি এরশাদ এর সঙ্গে আলোচনা করেছি, যখন তাকে গদি থেকে সরানো হয়েছে। অতীতে যে আলোচনা আমরা তার সুফল তো পাইনি বরং এই আলোচনার জন্য আজ আমাদের এই অবস্থা। তাই এ অবস্থায় আন্দোলনের বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। 

আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে কাজ শুরু করেছে আ.লীগ

অন্যদিকে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান জানান, আলোচনার দরজা খোলা থাকবে। কিন্তু, আন্দোলের প্রস্তুতি থাকবে। অতীতে দেখেছি, আন্দোলন হয় তবে কোনো সুফল আসে না। এর ফলে বঞ্চিত হয় জনগণ, বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। এবার আমরা আর কালক্ষেপণ করবো না।

আরও পড়ুন : জামায়াতের মাস্টারপ্ল্যান ফাঁস

তিনি জানান, এক দফা দাবি আদায়ের রূপরেখা ঠিক করতে লন্ডন থেকে সর্বস্তরের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানেও সিংহভাগ নেতা মত দিয়েছেন একদফা আন্দোলনের পক্ষে।

আরও পড়ুন: এবার আর হায়ারে খেলবে না বিএনপি

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আ ন হ সাইফুল ইসলাম জানান, এই দেশের জনগণ চায় একটা যুগপৎ আন্দোলন। গণতান্ত্রিক ধারার আন্দোলন। বিএনপি একটি শক্তিশালী দল। আমরা একটা জোরালো, শক্তিশালী আন্দোলনের ধারায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন: প্রভাবশালী নেতাদের কাছে জিম্মি বিএনপি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের চরিত্র দেশের জনগণ ও উন্নয়ন সহযোগী বিদেশিদের সামনে উন্মোচন করেছে। দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা শুধু বিএনপির একার পক্ষে সম্ভব নয়। ঐক্যবদ্ধ ব্যাপক গণআন্দোলন প্রয়োজন। আর এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।

আরও পড়ুন: ইসলামী দলগুলো একজোট হলে হতে পারে ভিন্ন কিছু

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল মনে করেন, বিএনপি এখনো বৃহত্তর ঐক্য গড়তে পারেনি। এখন তারা যদি সব বিরোধী দলকে বোঝাতে পারে যে ক্ষমতায় গেলে তারা সুশাসন দিতে সক্ষম, তাহলে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে আন্দোলনে সাফল্য পেতে পারে। তবে সমস্যা হচ্ছে, বিএনপির নেত্রী বিশেষ ব্যবস্থায় নিজ বাসভবনে আছেন। আওয়ামী লীগ এটাকে চাল হিসেবে ব্যবহার করবে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে যে একটি শক্তি অর্জন করেছে, তাকে তারা সর্বাত্মকভাবে দমন করার চেষ্টা করবে। এটি বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন: ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ তকমা ঘোচাতে চায় নেতাকর্মীরা

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সংগঠনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন না হলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথও রুদ্ধ হয়ে যাবে। এটি কারো জন্য মঙ্গলজনক হবে না। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা আশা করব, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে দেশকে সংকটের হাত থেকে রক্ষা করবে। 

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!