• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভুলের চোরাগলিতে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৪, ২০২১, ০৯:৪০ পিএম
ভুলের চোরাগলিতে বিএনপি

ফাইল ছবি

ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে একটি হট ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে শঙ্কা আর উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। এমনকি দলের চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে তারা। পাশাপাশি এই ইস্যুতে কোনো রকম অরাজকতা সৃষ্টি যাতে না হয় তাই শক্ত অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। সব মিলিয়ে বর্তমানে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে । 

আরও পড়ুন: খালেদায় উত্তাল রাজপথ, ভয় পায় না আ.লীগ

নানামুখী চাপ ও সরকারের বাধা সত্ত্বেও দেশের রাজনীতিতে বিএনপি এখনো আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই বিবেচিত। তাই চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে বিএনপির সামনে এখন তিনটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এগুলো হচ্ছে; কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি আদায় এবং তৃণমূলসহ দল পুনর্গঠন করে দাবি আদায়ে জোরালো আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠ ধরে রাখা। কারণ ২০২৩ সালের নির্বাচনে ফল ভালো না করতে পারলে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা। 

আরও পড়ুন: জোড়াতালির জোট...

এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। গতকাল সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেগম জিয়ার মুক্তি ও তাকে বিদেশে চিকিৎসার দাবিতেও সমাবেশ করছে তারা। এর আগে শনিবার (২০ নভেম্বর) নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅনশন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই ইস্যুতে গত রোববার (২১ নভেম্বর) দলটির সংসদ সদস্যরা এক মানববন্ধনে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকিও দেন। আর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকালের সমাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।

আরও পড়ুন: দু’দলেই তৃণমূলে অসন্তোষ

এছাড়া আগামী ৭ দিনের কর্মসূচি রয়েছে দলের বিভিন্ন অঙ্গসগঠনের।২৬ নভেম্বর সারাদেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।২৮ নভেম্বর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ করবে, ঢাকার কর্মসূচি হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবে।৩০ নভেম্বর বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি।১ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ করবে ছাত্রদল। ঢাকার সমাবেশ হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে।৩ ডিসেম্বর জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের পক্ষ থেকে সারাদেশে মানববন্ধন করা হবে, ঢাকার কর্মসূচি হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে।৪ ডিসেম্বর জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ঢাকাসহ সারাদেশে মৌন মিছিল করবে, ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করা হবে।

আরও পড়ুন: নতুন দলে কৌতুহলী মানুষ, সময় বলবে কে কেমন

যদিও বিএনপির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কর্মকৌশল নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা চলছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্যও আগামী নির্বাচনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ ওই নির্বাচনের ফলাফলের ওপরই তার নেতৃত্বের প্রজ্ঞা ও কার্যকারিতা অনেকখানি স্পষ্ট হবে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ফল ঘরে তুলতে পারেনি বিএনপি। সরকারের প্রভাব ও হস্তক্ষেপের কথা উঠলেও নির্বাচনে বিএনপির কর্মকৌশলেও ঘাটতি ছিল বলে পরবর্তীকালে দলের মধ্যে নানাভাবে আলোচনা হয়।

আরও পড়ুন: যতটুকুতে হুমকি নেই ততটুকু আন্দোলন...

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জনপ্রিয়তা থাকার পরও ভুল রাজনীতির কারণে এখনো ‘চোরাগলিতে’ আটকে আছে বিএনপি।কি সেই ভুল?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের মাঝে বিক্ষোভ আছে, হতাশা আছে, দুঃখ আছে, দুঃখবোধ আছে। রাজনীতিক কর্মীদের মাঝেও আছে। এখন আন্দোলন করা অতীতির যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠিন। কাজেই সে দিকটাও বিএনপিকে মনে রাখতে হবে। এখন হঠকারিতার কোনো অবকাশ নেই। যারা আন্দোলন করবেন তারা যেন মনে রাখেন, আন্দোলন যেন সহিংস না হয়। যাতে করে সাধারণ জনগণ এই আন্দোলনে অংশ নিতে ভয় না পায়। কারণ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ না থাকলে শুধু কর্মীদের দিয়ে আন্দোলন হয় না। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।

তিনি বলেন, আমরা ৬৯-সালে আন্দোলন করেছি। তখন দেখেছি সাধারণ মানুষ কীভাবে আন্দোলনে শরিক হয়েছে। এখন সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন সেই কালচার দেশে নেই। সাধারণ মানুষকে আন্দোলনমুখী করতে হবে। শুধু একটি রাজনৈতিক দল থাকলেই হয় না, সেই দলকে মানুষের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করতে হয় এবং সেই জাগরণ ও শক্তি দিয়েই বিএনপিকে আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করতে হবে।

আরও পড়ুন: পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে বিএনপি

দলের ভেতর বিভিন্ন ধরনের সংকট এবং করোনার ধাক্কায় আরও টালমাটাল দলটি। এ থেকে উত্তরণে দলটির সামনে রয়েছে নানামুখী চ্যালেঞ্জ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দলের ৭ম কাউন্সিল, পুরোনো ও নতুন জোটের রাজনৈতিক নানা হিসাবনিকাশ, দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অন্তর্দ্বন্দ্ব কাটিয়ে পুনর্গঠন, সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বপ্রথম নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা ও মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে। সৎ, যোগ্য, ত্যাগী ও মেধাবী নেতাকর্মীদের খুঁজে নেতৃত্বের আসনে বসাতে হবে। দলমতনির্বিশেষে দেশের বিভিন্ন সেক্টরের জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ এবং দলে টেনে গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে নিজেদের ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

আরও পড়ুন: আন্দোলনের রূপরেখা সাজিয়ে ফেলেছে বিএনপি
 
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি কঠিন এসব চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করবে সেটাই মুখ্য বিষয়। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান-দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন জোরদার করা বিএনপির সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন: হাকডাক দিচ্ছে বিএনপি, পাত্তা দিচ্ছে না আ.লীগ 

বিএনপির একসময়ের প্রভাবশালী নেতা, বর্তমানে এলডিপির সভাপতি ড. অলি আহমদ মনে করেন- বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে না পারায় দলটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না। তাই আগামী দিনে কার অবস্থান কী হবে, সেটি বলা মুশকিল। তবে বড় বড় দলের জন্য আগামী দিনগুলো সুখকর না-ও হতে পারে।

আরও পড়ুন: একটি কৌশলে মিল দু’দলে

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মনে করেন, বিএনপির সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তিনটি। দলের চেয়ারপার্সনকে মুক্তি করা। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করা। দেশে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

এসব দাবি আদায়ে আমরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের যৌথ নেতৃত্বে বিএনপি চলছে। 
 
সাম্প্রতিক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বক্তব্য দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এ সরকার সবদিক থেকে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে। আমাদের সামনে এখন আর কোনো পথ নেই। একটিমাত্র পথ আছে সেটি হলো আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলন। 

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!