• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
এগিয়ে যাচ্ছে মেগা প্রকল্পগুলো

মিলবে অভাবনীয় সুফল


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৯, ২০২১, ০৪:২২ পিএম
মিলবে অভাবনীয় সুফল

ঢাকা : দেশজুড়ে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর কয়েকটির কাজ আগামী বছরের মধ্যেই শেষ হবে। কোনোটি আবার আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, এক পদ্মা সেতুর হাত ধরেই দেশের অর্থনীতির গতিপথ দারুণভাবে প্রভাবিত হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ২ শতাংশ ভূমিকা রাখবে এই সেতু।

আগামী বছরের জুন মাসেই এই সেতু উদ্বোধনের কথা রয়েছে। একই বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হবে।

এ ছাড়া একই সময়ে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের তিন ধাপের মধ্যে কাওলা থেকে মগবাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। করোনা সংকট কাটিয়ে বর্তমানে পুরোদমে বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পগুলো। এই দুটিসহ মোট আটটি মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প ও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় শেষ প্রান্তে। বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের কাজও এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। পুরোদমে চলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি প্রকল্পের কাজ। এমন আট মেগা প্রকল্প বিশ্ব কাতারে আরও এগিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশকে। সবগুলো সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বক্ষণিক নিজস্ব তদারকি। দেশের উন্নয়নমূলক এসব প্রকল্পের সুফল প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মেগা প্রকল্পগুলোর বিষয়ে বলেন, ‘মেগা প্রকলগুলো চালু হলে দেশের সার্বিক চিত্র বদলে যাবে। মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে যাবে। মেগা প্রকল্পগুলোর সুফল পেতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও (এডিবি) বরাদ্দ পর্যাপ্ত দেওয়া হয়। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রকল্পগুলো তদারকি করা হচ্ছে। আশা করি, খুবই কম সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পের সুফল পাবে পুরো জাতি।’

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প : সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে ২৬ হাজার ২৪৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এ সেতুর ৪২টি পিলারে মোট ৪১টি স্প্যান বসেছে। এই সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি আর নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে।

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প : চীনের অর্থায়নে এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে জাতীয় ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এ রেলপথটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২৩টি জেলায় প্রথম রেলসংযোগ স্থাপন করবে। প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ ও আর্থিক অগ্রগতি ১৯ হাজার ৯১০ কোটি টাকা।

প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের ঋণ ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। বাকি অর্থায়ন সরকারি কোষাগার থেকে মেটানো হবে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুন মাসে শেষ হবে।

মেট্রোরেল প্রকল্প : ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। তবে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা।

দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প : চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কঙ্বাজারের রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত ১৮৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ চলমান। প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৪ শতাংশ এবং প্রকল্পের আওতায় মোট ৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির আইকনিক স্টেশন। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে তিনটি বড় সেতু। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়ায় নির্মাণ হচ্ছে উড়াল সেতু। ফলে পর্যটন শহর কক্সবাজার ও সেখানে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের পথ সুগম হবে। ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প : ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পাবনার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। চুক্তি বাস্তবায়নের সময়কাল ধরা হয়েছে সাত বছর।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে ও দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালের অক্টোবরে উৎপাদনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ৬০ বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।

এক লাখ এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে পাবনার রূপপুরে, যেখানে দুটি ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট করে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৪০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প : সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো। এরই মধ্যে বন্দরটির কার্যক্রম মোটামুটি মাত্রায় শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৮৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হবে।

মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প : কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে বিদ্যুতের হাব গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

এজন্য শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, পুরো এলাকাটিকেই একটি আধুনিক শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মাতারবাড়ি ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে এ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

২০১৫ সালের আগস্টে মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পের ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা-জাইকা। বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। অবশিষ্ট অর্থের জোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ও স্বত্বাধিকারী কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)।

প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশ। এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় মোট খরচ হয়েছে ১৮ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হিসেবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দায়ী করা হচ্ছে। ফলে সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে যাচ্ছে। এজন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে নতুন করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!