• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি

শুদ্ধি অভিযান চলছে আ.লীগে!


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১২, ২০২১, ০৩:২১ পিএম
শুদ্ধি অভিযান চলছে আ.লীগে!

ঢাকা : অতি উৎসাহী নেতাদের নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তাই এবার অঘোষিত শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিতর্কিতদের দলের সব স্তর থেকে বাদ দিতে এরই মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত এ অভিযান শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ তথ্য ও সমপ্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা ডা. মুরাদ হাসান আওয়ামী লীগের দলীয় পদও হারিয়েছেন। আর সমপ্রতি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, রাজশাহীর কাঁটাখালীর পৌরমেয়র আব্বাস আলীর ভাগ্যেও জোটে একই পরিণতি। এতে জানান দেয় দলের ইমেজ প্রতিষ্ঠায় কতটা কঠোর অবস্থানে কেন্দ্রীয় কমান্ড।

এদিকে দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, মুষ্টিমেয় লোকের জন্য পুরো দলের ইমেজ খারাপ হতে পারে না। দলের কিছু খারাপ লোকের জন্য দেশ ও জাতি ভুগতে পারে না। তাই দেশ ও দলের স্বার্থে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য কঠোর অভিযানে বিতর্কিত নেতারা গ্রেপ্তার হলেও তাদের আপত্তি নেই। কারণ এমন অভিযানে রাজনৈতিক সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তরা দমন হবে। ফলে রাজনৈতিকভাবে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে।

অন্যদিকে দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, এবার আগে থেকে জানান দিয়ে কোন শুদ্ধি অভিযানের পক্ষে নন তারা। এতে নানা কারণে অভিযান সফল হয় না। তাই বিগত কয়েক বছরে দলীয় নেতা-কর্মীদের কার্যক্রম সূক্ষ্মভাবে তদন্ত করে, উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে হাই কমান্ড। আওয়ামী লীগের ভেতরে থেকে যারা অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটবে তাদের বিরুদ্ধে এমন শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

এর আগে ২০১৭ ও ২০১৯ পৃথকভাবে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ। হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী আর দলকে ব্যবহার করে যারা অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতা করছেন তাদের চিহ্নিত করার ঘোষণা দিয়ে কাজও শুরু হয়েছিল।

দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালে পরিচালিত এ  শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছিল সবশ্রেণি ও পেশার মানুষ।

আওয়ামী লীগের যেসব পোড় খাওয়া নেতা, যারা এতদিন অনুপ্রবেশকারী ও সুযোগসন্ধানীদের চাপে টিকতে পারছিলেন না, তারাও মনেপ্রাণে চাইছিলেন এ রকম একটি অভিযান চলুক। এ সময়ের মধ্যে কিছু বিতর্কিত নেতা-কর্মীকে আইনের আওতায়ও আনা হয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ অভিযান হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ করে দলটিকে। তাই তৃণমূল থেকেই দলের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অনেকটা ঘোষণা না দিয়েই শুদ্ধি অভিযান শুরু করে নীতিনির্ধারকরা। যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি হয়ে যাওয়া তিন ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বহুদিন নৌকার হাল ধরে থাকা স্থানীয় নেতারাও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারেনি।     

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তথ্য ও সমপ্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা ডা. মুরাদ হাসান অন্য প্রভাবে প্রভাবিত ছিলেন, তা তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয়েছে। এখন ডা. মুরাদ হাসানের কর্মকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন, গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তর সমালোচনা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বলে গলা ফাটানো এই লোকটি ছাত্রজীবনে করতেন ছাত্রদল। তবে ক্ষমতার ঘূর্ণিপাকে নিজেও ভোল পাল্টেছেন। ছাত্রদলের পদধারী নেতা থেকে হয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতিও। বিষয়টি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে খোদ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও জানতেন না।

এরকম অনুপ্রবেশকারী লোক কীভাবে আওয়ামী লীগের এতো ওপরে স্থান পেল এটি একটি কোটি টাকার প্রশ্ন। পাশাপাশি মুরাদের মতো আরো কত শত হাইব্রিড, বিএনপি-জামায়াত করা ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় ‘কাউয়া’ নেতা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

অনেকেই বলছেন, ডা. মুরাদের মতো হাইব্রিডদের চিহ্নিত করতে দলের ভেতরে নতুন করে আরো কঠোর শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা উচিত প্রধানমন্ত্রীর। দলকে বাঁচাতে এসব অনুপ্রবেশকারীদের সমূলে উৎপাটন অতীব জরুরি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংকটে দলকে সঙ্গ দেওয়া পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীরা।

এর আগে, বিতর্কিত মন্তব্য ও কটূক্তির জেরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বহিস্কৃত হন।

সমপ্রতি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, রাজশাহীর কাঁটাখালীর পৌরমেয়র আব্বাস আলীর ভাগ্যেও জোটে একই পরিণতি।

এছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীর, চিকিৎসার নামে প্রতারক সাহেদ, যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া কাণ্ডে বার বার আওয়ামী লীগ নেতাদের হতে হয়েছে বিব্রত। তবে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য কখনোই ছাড় দেওয়া হয়নি, ভবিষ্যৎতেও ছাড় হবে না বলে জানান ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে হাইব্রিড আর অনুপ্রবেশ ইস্যুতে তোলপাড় চলছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে। যাদের হাত দিয়ে আওয়ামী লীগে ক্ষতিকর অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সেসব নেতা আতঙ্কে আছেন। দায় এড়াতে গা বাঁচিয়ে চলছেন অনেকে।

দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, কাদের অশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব অনুপ্রবেশ হয়েছে তার খোঁজ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

নেতারা বলছেন, সাহেদরা যে দরজা দিয়ে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে, সেসব দরজা বন্ধ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, গত কয়েক মাস আমাদের ভীষণ তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। দলের কয়েকজনের কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। পাশাপাশি বিতর্কিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল বিএনপির সদস্যরা এ নিয়ে কঠোর সমালোচনার সুযোগ পেয়েছেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রয়েছে কোটি কোটি সদস্য। এর মধ্যে ২/৫ জন খারাপ হতেই পারে। দলের সিলেকশনেও ভুল হতে পারে। তবে ধরা পড়ার পর আমরা তাদের কাউকে প্রশ্রয় দেইনি।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যাকে দলে আনা হয়েছে সে আগে ভালো ছিল। তার ওই ভালো গুণের কারণে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু পরে সে দলের ব্যানার কাজে লাগিয়ে আদর্শবিরুদ্ধ কাজ করছে। আবার এমন অনেকে আছে আগে খারাপ ছিল কিন্তু দলে যোগ দেওয়ার পর আদর্শ নিয়ে দলের ভাবমূর্তি উন্নত করার কাজ করেছে।

ফারুক খান বলেন, এর আগে কেবিনেট সদস্য লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ বরখাস্ত করেছে। অনিয়ম ধরা পড়ায় দলের এমপি কারাগারে থেকেছে। মুরাদ হাসানেরও প্রায় একই অবস্থা হয়েছে। এ ধরনের অনেক উদাহরণ তৈরি করেছি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, শুদ্ধি অভিযান অতীতে চলেছে, ভবিষ্যতেও চলবে। যা কুরুচিপূর্ণ, অশালীন এবং জনগণের কাছে যা গ্রহণযোগ্য নয় তা দমন করতে আওয়ামী লীগ কখনই পিছপা হয়নি। ডা. মুরাদ হাসানকে বহিষ্কারের মাধ্যমে সকলের জন্য এটা একটা বার্তা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কর্মকাণ্ডে দলীয় দলের সভাপতি কাউকে ছাড় দেন না। এমনকি ভবিষ্যতেও কাউকে ছাড় দেবেন না বলেও জানান কামাল হোসেন।

এদিকে, ডা. মুরাদের আগের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে যে কথা উঠেছে তাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগ নেতারা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, ছাত্রদলের নেতাদের যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ তা এখনো আমরা লক্ষ করছি।

তবে, ডা. মুরাদ দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও সে আচরণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। দলকে যারা বিতর্কিত করবেন তাদের জায়গা আওয়ামী লীগে হবে না বলে তিনি জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!