• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির ট্রেইলার, আ.লীগের বড় সুযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১১, ২০২২, ০৮:৩২ পিএম
বিএনপির ট্রেইলার, আ.লীগের বড় সুযোগ

ঢাকা: রাজনীতিতে বিএনপি দীর্ঘদিন প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকলেও আওয়ামী লীগের কাছে এখনো বিএনপিই তাদের মূল প্রতিপক্ষ। তাই ভেতরে-বাইরে, সভা-সমাবেশে বিএনপির সমালোচনায় মুখর থাকেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে আগামী ২০২৩ সালের নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। যার প্রস্তুতি হিসেবে ৪০ জেলায় রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছে তারা। গতকাল শনিবার থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তবে এসব কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করার পাল্টা হঁশিয়ারি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন: শুদ্ধি অভিযান চলছে আ.লীগে!

এদিকে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা এবং সরকার পতনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে বিএনপি। তবে সফলতা না পাওয়ায় দাবি আদায়ে লাগাতার কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকে বলেছেন, তাদের নেতৃত্বের ওপর মাঠ পর্যায় থেকে রাজপথের আন্দোলনের ব্যাপারে চাপ রয়েছে। আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় ধাপে জেলা সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা সামান্য পরিবর্তন করে গতকাল শনিবার থেকে শুরুর ঘোষণা দেয় বিএনপি। ধাপে ধাপে ছয় দিনব্যাপী এই সমাবেশ হবে বিভিন্ন জেলায়।
 
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি নেতৃত্বশূন্য হলেও তাদের কর্মীদের সংখ্যা দলটির যে কোনো কর্মসূচি এখনো মাথাব্যথার কারণ। 

আরও পড়ুন: খালেদায় উত্তাল রাজপথ, ভয় পায় না আ.লীগ

স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা হারলেও কোনো কোনো স্থানে বিএনপির ভোটসংখ্যা দেখে আওয়ামী লীগের নেতারা অবাক হয়ে উঠছেন। এ প্রেক্ষাপটে আগামী এক বছর বিএনপিকে আরো চাপে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। মাঠে-ঘাটে, রাজনীতিতে ও নির্বাচনে বিএনপিকে একবিন্দুও ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীনরা। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপিকে মাঠে সীমিত পরিসরে নামতে দিলেও হামলা-মামলা হতে পারে বড় আকারে। 
 
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলা পর্যায়ের প্রথম ধাপে ২৩ জেলায় সমাবেশ করে বিএনপি। ওইসব সমাবেশের মধ্যে সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন সমাবেশে হামলা ও গুলিবর্ষণ এবং কক্সবাজার, ফেনীসহ কয়েকটিতে ১৪৪ ধারা জারি করলেও তা ভেঙে করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বিএনপি। এর আগে বিএনপি গণঅনশন, জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, সমাবেশ ও মানববন্ধনের কর্মসূচিও করেছে।
 
এবার লাগাতার কর্মসূচি সফল করতে আগামী ১২, ১৫, ১৭, ২২ ও ২৪  জানুয়ারি ৪০ জেলায় সমাবেশ করবে বিএনপি। 

আরও পড়ুন: ভুলের চোরাগলিতে বিএনপি

জেলাগুলো হচ্ছে-রাজশাহী কুমিল্লা, রংপুর, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নীলফামারী, ফেনী, নওগাঁও, কুষ্টিয়া, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, বরগুনা, শেরপুর, বাগেরহাট, রাঙ্গামাটি, নেত্রকোনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজবাড়ী, নড়াইল, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, ঝালকাঠি, মাগুরা, মাদারীপুর, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, পঞ্চগড়, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, সৈয়দপুর এবং শরীয়তপুর জেলায়। এরমধ্যে রাজশাহী মহানগর, রংপুর মহানগর, কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ, বরিশাল দক্ষিণ ও উত্তর, খুলনা মহানগর, সিলেট মহানগর, ময়মনসিংহ দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম উত্তর মহানগরের বাইরে সমাবেশ হবে। 

এসব সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যরা সমন্বয় করে অংশ নেবেন।

আরও পড়ুন: জোড়াতালির জোট...

বিএনপির শীর্ষনেতাদের বিশ্বাস, খুব শিগগির পাওয়া যাবে চলমান আন্দোলনের সফলতা। আগামীতে দ্রুত আন্দোলনের নতুন কৌশল প্রয়োগ করা হবে। আর নতুন কৌশলে ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে আবারো ভিন্ন ধাঁচের কৌশলে যাবে দল। কিন্তু সরকারের পতন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত গণতান্ত্রিক পন্থার এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে আন্দোলনের গতিপথই শুধু প্রয়োজন মাফিক পাল্টাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এখন বাংলাদেশ উদ্ধার করতে হবে। ভোট চোরদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। আওয়ামী লীগ সংবিধান স্বীকৃত জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে, দেশের আত্মা বিক্রি করে দিয়েছে। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। নতুন বছরে মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানো হবে। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে নাশকতা হয়, এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া যাবে না। অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে শান্তিপূর্ণ যত উপায় ও পদ্ধতি রয়েছে, সবগুলো অ্যাপ্লাই করা হবে। নিয়মতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তার নেতৃত্বে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।  

আরও পড়ুন: দু’দলেই তৃণমূলে অসন্তোষ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন পেছনে তাকানোর আর সুযোগ নেই বিএনপির। সমাবেশ কর্মসূচির মাধ্যমে শুরু হয়েছে। যার শেষও দেখতে হবে। এ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির যে সংলাপ চলছে, তাও নিয়ে ভাবছে না দল। তবে কমিশন গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে একটি চিঠি দেওয়া হতে পারে। দেশের পরিস্থিতি ও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিএনপি এখন ‘ডু অর ডাই’ পজিশনে। জনগণই আমাদের শক্তি। সরকারকে বিদায় করতে জনগনকে সাথে নিয়ে পাড়া মহল্লায় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হলেও যে কোনো সময় বড় ধরনের কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামার পরিকল্পনা রয়েছে দলের। এছাড়া অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দিলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে।

আরও পড়ুন: নতুন দলে কৌতুহলী মানুষ, সময় বলবে কে কেমন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জনগণ যখন কোনো সরকারকে চায় না তখন কোনো বিদেশি শক্তি তাকে রক্ষা করতে পারে না। যখন বিপদ আসবে পুলিশও তখন পাশে থাকবে না। আমরা সবুর করেছিলাম। ভেবেছিলাম- সবুরে মেওয়া ফলবে। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। বিএনপির গণজাগরণ শুরু হয়েছে। এটাকে সিনেমার ট্রেইলার মনে করতে পারেন। পুরো সিনেমা এখনো বাকি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য। জনগণ কিন্তু বছরজুড়ে বা মাসব্যাপী আন্দোলন করে না। খেলার শেষ মুহূর্তে মাঠে নামবে জনগণ এবং আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবে।

আরও পড়ুন: যতটুকুতে হুমকি নেই ততটুকু আন্দোলন...
 
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপি দেশবিরোধী রাজনীতিতে বিশ্বাসী, তারা জনগণের সহানুভূতি পেতে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, দেশের মানুষের কাছে বিএনপির রাজনীতি দুর্নীতির-লুটপাটের ও মানুষ খুনের। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মানুষ দেখেছে। তাই দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির এই দেশে রাজনীতি করার বৈধতা আর নেই। মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিএনপির কাছ থেকে। আওয়ামী লীগের জন্য এটি বড় সুযোগ। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে ক্ষতি হবে আওয়ামী লীগেরই। ফলে বিএনপি রাজনৈতিক অবশিষ্ট শক্তিও থাকুক চায় না ক্ষমতাসীনরা।

আরও পড়ুন: আন্দোলনের রূপরেখা সাজিয়ে ফেলেছে বিএনপি

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপির ধারাটাই হলো সামপ্রদায়িক রাজনীতি, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য যে ইতিবাচক চিন্তাচেতনা দরকার, তারা সেখানে সম্পৃক্ত হতে পারছে না। তারা যতই উল্টা পথে চলবে, তারা ততই বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবর্তিত হবে। এটা তাদের দলকে অস্তিত্বহীন করে দিয়েছে। অস্তিত্বহীনবিরোধী দলের প্রয়োজন বাংলাদেশে নেই। আন্দোলনের নামে জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললে তা কঠোর ভাবে প্রতিরোধ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

আরও পড়ুন: একটি কৌশলে মিল দু’দলে

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির আন্দোলন মানে জ্বালাও-পোড়াও। বিএনপির আন্দোলন মানে মানুষ খুন। বাংলাদেশে তাদের এ অপরাজনীতি আর চলবে না। কেউ যদি দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নৈতিক দায়িত্ব হবে রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবিলা করা। মানুষের জানমালের ক্ষতি করা সরকার বরদাশত করবে না। বিএনপি ইতিবাচক রাজনীতিতে যতদিন ফিরে না আসবে ততদিন এ দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিহত করবে। 

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!