• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সুপারিশ

রাজপথে রাজনৈতিক ছাড় পাচ্ছে বিরোধীরা


নিউজ ডেস্ক জুন ১৪, ২০২২, ০৫:০৭ পিএম
রাজপথে রাজনৈতিক ছাড় পাচ্ছে বিরোধীরা

ঢাকা : রাজপথে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ছাড় দেওয়ার সুপারিশ করেছে নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। 

প্রশাসন এ সুপারিশ আমলে নিলে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করতে পারবে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (১৩ জুন) তার কার্যালয়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটির এ বৈঠকে ভোজ্য তেল, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়েও আলোচনা হয়। 

এ ছাড়া জনগণকে বিভ্রান্ত করে জনবিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও যানজটের বিষয় গুরুত্ব পায়। এসব বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর প্রতিটি আমদানি পণ্যের উৎসের বিকল্প ঠিক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত বাণিজ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। 

সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন ধান-চালের অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এসব অভিযানে প্রভাবশালী অনেক করপোরেট হাউসের বিরুদ্ধে অবৈধ মজুদের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ধান-চালের এসব অবৈধ মজুদদার যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন তাদের কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।  

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সিইও আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এজেন্ডাভুক্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ কমিটি বিভিন্ন ইস্যুতে সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।’ 

বৈঠকে উপস্থিত একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বছরের পর বছর প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমাবেশ করতে পারছে না। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করলেও তাদের সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়ার জোরালো অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার সুপারিশ করা হয়েছে। 

বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সভা-সমাবেশ করতে দিলেও তারা যদি ভাঙচুর বা  জ্বালাও-পোড়াও করে তাহলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। তাদের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হতে দেওয়া হবে না।

রাজনৈতিক অঙ্গন থেকেও বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়ার চাপ রয়েছে। এমনকি ক্ষমতাসীন জোটেরও একটি অংশ চায় বিরোধীদের কিছুটা ছাড় দেওয়ার। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সভায়ও বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি বরাবরই সরকারের দমন-পীড়নের কথা বলছে। এমনকি বিরোধীদের রাজনৈতিক ছাড় দেওয়ার বিষয়টিকেও তারা ‘ভাঁওতাবাজি’ বলে উল্লেখ করছে।

আগামী বছর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী রজনৈতিক দলগুলো চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা করছে। বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন এদেশে কর্মরত কূটনীতিকরাও। এ অবস্থায় নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠকে রাজনৈতিক ছাড় দেওয়ার সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য। 

তিনি জানিয়েছেন, বৈঠকে বাজার পরিস্থিতি নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি শুধু এদেশেই নয়, ইউরোপ আমেরিকায়ও ডবল ডিজিটের মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। অথচ দেশে একটা গোষ্ঠী বলার চেষ্টা করছে সরকারের দুর্নীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। 

বিষয়টি উল্লেখ করে বৈঠকে বলা হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ ইওরোপের যুদ্ধবিষয়টি সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে।

গত মাসে মন্ত্রিসভা বৈঠকেও দ্রব্যমূল্য নিয়ে এজেন্ডার বাইরে গিয়ে আলোচনা হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রী দ্রব্যমূল্যের সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, কৃষি সচিব, খাদ্য সচিব, শিল্প সচিব ও বাণিজ্য সচিবকে বৈঠক করার নির্দেশ দেন। মন্ত্রিসভার এ নির্দেশিত বৈঠকটি গত ১৮ মে অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বৈঠকে আন্তর্জাতিক বাজার সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা, পণ্য পরিবহন ও বাজারজাতকরণসহ সব পর্যায়ে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সাপ্লাই চেইন ঠিক রেখে দামের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। 

এ ছাড়া সয়াবিন এবং পাম অয়েলের বিকল্প পরিশোধিত রেপসিড অয়েল ও সানফ্লাওয়ার পরিশোধিত তেল আমদানি বৃদ্ধি উৎসাহিত করার জন্য শুল্ক বা ভ্যাট প্রত্যাহার করে টিসিবির মাধ্যমে তেল আমদানির প্রস্তাব করা হয়। তা ছাড়া তেল ও পেঁয়াজের দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। 

ওই বৈঠকে আরও জানানো হয়, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। কৃষকের কাছে এখনো ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ পেঁয়াজ রয়েছে। পেঁয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে জানানো হয়।  

বৈঠকে পরিশোধিত সয়াবিন, পাম, সানফ্লাওয়ার অয়েল (বাল্ক) বা অলিভ অয়েল রেপড সিড, ক্যানোলা অয়েল, ক্রুড অয়েল আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। 

জরুরিভিত্তিতে বিভিন্ন দেশ থেকে সরাসরি সয়াবিন বা ক্যানোলা তেল আমদানির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য টিসিবি-কে বলা হয়। সরিষা, সয়াবিন, সানফ্লাওয়ার তেল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উন্নতমানের বীজ বিতরণ করবে কৃষি মন্ত্রণালয়। রাইস ব্র্যান তেলের ক্রুড রপ্তানির অনুমতি না দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাইস ব্র্যান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য করণীয় নির্ধারণে উৎপাদনকারী ও অন্যান্য অংশীজন নিয়ে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন কর্মশালা করবে। সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে রাইস ব্র্যান, সরিষা ও ক্যানোলা তেলের বিষয়ে প্রচার চালাবে তথ্য মন্ত্রণালয়।

গতকালের নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় বৈঠকে যানজট নিয়েও অনেক আলোচনা করা হয়েছে। যানজট স্বাভাবিক করতে পুলিশকে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। যেসব রাস্তা ব্যবহার হচ্ছে না সেগুলো ব্যবহার উপযোগী করতে বলা হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি দেশের সর্বোচ্চ ফোরাম। ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ এ কমিটি গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ কমিটির আহ্বায়ক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সেনাবাহিনীপ্রধান, নৌবাহিনীপ্রধান, বিমানবাহিনীপ্রধান ছাড়াও পররাষ্ট্র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, এনএসআইয়ের মহাপরিচালক, ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ রাইফেলসের মহাপরিচালক এ কমিটির সদস্য। গতকালের বৈঠকে কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন।

কমিটির কার্যপরিধি অনুযায়ী দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা ও কার্যক্রম মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করা এ কমিটির কাজ। দেশের নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান এবং প্রয়োজনবোধে মন্ত্রিসভার জন্য সুপারিশ প্রণয়নও তাদের দায়িত্ব। সূত্র : দেশ রূপান্তর

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!