• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রয়াত ম্যারাডোনার ধর্ষণের বর্ণনা দিলেন ভুক্তভোগী নারী


ক্রীড়া ডেস্ক নভেম্বর ২৩, ২০২১, ০৪:২৬ পিএম
প্রয়াত ম্যারাডোনার ধর্ষণের বর্ণনা দিলেন ভুক্তভোগী নারী

ঢাকা: খেলোয়াড়ি জীবনে অবিশ্বাস্য সব কীর্তি গড়ে যেমন আলোচনায় ছিলেন, তেমনি জীবদ্দশায় মাদক ও নারীঘটিত বিষয়েও তাকে নিয়ে যেন আলোচনা-সমালোচনার শেষ ছিল না। সব আলোচনা-সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে গেল বছর এই নভেম্বরেই তিনি পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। কিন্তু এরপরও বিতর্ক যেন পিছুই ছাড়ছে না তার।

আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ইনফোবেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাভিস শুধু ধর্ষণের অভিযোগই করেননি অপহরণ, নারী পাচার, ধর্ষণ, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কৃত্রিম স্তন প্রতিস্থাপন, শারীরিক নির্যাতন, জোর করে নেশা করানোর বিষয়েও অভিযোগ করেছেন। 

দুদিন পরই আর্জেন্টাইন এ কিংবদন্তির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। শ্রদ্ধা-তর্পণে মুখরিত হবে ফুটবল-বিশ্ব। ম্যারাডোনা-আখ্যান ধ্বনিত হবে চারদিকে। কিন্তু এর আগেই ম্যারাডোনার এককালের অপ্রাপ্তবয়স্ক বান্ধবী মাভিস আলভারেজ এসব অভিযোগ তুললেন।

মানব পাচারের মামলায় আর্জেন্টিনার বিচার বিভাগের সামনে সাক্ষ্য দিতে ২০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি থেকে আর্জেন্টিনায় এসেছেন ৩৭ বছর বয়সী এই কিউবান নারী। এখানে এসেই ইনফোবেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রীতিমতো বোমা ফাটিয়েছেন। এর আগে আর্জেন্টিনায় একবারই এসেছিলেন, সেই ২০০১ সালে, ম্যারাডোনার সঙ্গেই। তখন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন।

মাভিসের দাবি, কিউবা থেকে তখন একপ্রকার অপহরণ করেই ম্যারাডোনা নিয়ে এসেছিলেন তাকে। প্রথমে বাক্সে ভরে সবার অগোচরে মাভিসকে আর্জেন্টিনায় আনতে চাইলেও বন্ধু ফিদেল কাস্ত্রোর সহযোগিতা ও বিশেষ অনুমতিতে বুয়েনস আয়ারসে মাভিসকে নিয়ে যান ম্যারাডোনা। দুজনের সম্পর্কের শুরুটা কিউবার রাজধানী হাভানাতেই। মাভিস সেখানকারই মেয়ে। ২০০১ সালে হাভানার এক হোটেলে মাভিসকে ‘ধর্ষণ’ করেন ম্যারাডোনা। তখন মাভিসকে নিতে তার মা হোটেলে এসেছিলেন। ম্যারাডোনা মেয়ের সঙ্গে মায়ের দেখা করতে দেননি। এরপর কী হয়েছিল?

শুনুন মাভিসের মুখেই, ‘ম্যারাডোনা আমার মুখ চেপে রেখেছিলেন, যাতে আমি চিৎকার না করতে পারি। আমি তাই কিছু বলতে পারিনি। এরপর আমাকে ধর্ষণ করেন তিনি। সেদিন মা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি জানতেন, আমরা ওই হোটেলের কোন কক্ষে ছিলাম। কিন্তু ডিয়েগো কক্ষের দরজা খোলেননি। আমার মা কেঁদে কেঁদে দরজায় কড়া নেড়েই যাচ্ছিলেন। তাও ডিয়েগো রাজি হননি। পরে ক্লান্ত হয়ে আমার মা চলে যান। কারণ, ম্যারাডোনা দরজা খুলছিলেনই না।’

এত দিন পর মাভিস কেন এ অভিযোগ এনেছেন? এত দিন মুখ খোলেননি কেন? প্রশ্নের উত্তরে উঠে এসেছে মাভিসের মায়ের ভাষ্য, ‘দেখুন, ফিদেল কাস্ত্রোও মারা গেছেন, ডিয়েগো ম্যারাডোনাও মারা গেছেন। আমার মেয়ের বয়স এখন ১৫ বছর। মনে হয়েছে, আমার মেয়ের বয়স এখন ঠিক তেমন, যে বয়সে আমার সঙ্গে ওসব হয়েছিল।’

মাভিসকে বন্দীও করে রেখেছিলেন ম্যারাডোনা, ‘আমি হোটেল থেকে বেরোতে পারতাম না, আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল। আমাকে অপহরণ করে নিয়ে আসা হয়েছিল। আমি কিছুই জানতাম না শহরটার ব্যাপারে। সব সময় একজন বা দুজন আমাকে দেখে দেখে রাখত। ডিয়েগোর নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত ছিল তারা। আমি হোটেল থেকে বেরোতে চাইলে তারা আমাকে বলত, আমি যেন তাদের চাকরি করাটা কঠিন করে না তুলি।’

মাভিসের এ ভাষ্য শুনলে নিশ্চয়ই চমকে যাবেন, ‘ম্যারাডোনা কৃত্রিমভাবে আমার স্তন প্রতিস্থাপন (ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট) করাতে চেয়েছিলেন। আমি তখন নাবালিকা, তখন এ কাজ করতে হলে অভিভাবকের সম্মতির দরকার হয়। কিন্তু ম্যারাডোনা ওসবের ধার ধারেননি। যে কারণে আর্জেন্টিনায় বেশি দিন থাকতে হয় আমাদের। ম্যারাডোনা ছোট স্তন পছন্দ করতেন না। তার বিশেষ আগ্রহেই এ কাজ করতে হয়। কিন্তু আমার শরীরে পর্যাপ্ত চামড়া না থাকার কারণে ম্যারাডোনার প্রত্যাশা অনুযায়ী স্তনের আকার দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

পান থেকে চুন খসলেই মাভিসকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন ম্যারাডোনা, ‘তিনি অনেকবার আমার গায়ে হাত তুলেছিলেন। একদিন ক্লদিয়া (ম্যারাডোনার প্রথম স্ত্রী) ফোন করলেন তার নম্বরে। ম্যারাডোনা তখন আমার পাশে ঘুমাচ্ছিলেন। ক্লদিয়া বললেন, ডিয়েগোকে দাও। আমি ফোনটা ডিয়েগোর হাতে দিলাম। আমি ফোন কেন ধরলাম, তা নিয়ে আমাকে মারা শুরু করলেন ম্যারাডোনা। চড়থাপ্পড় মারতে মারতে বললেন, আমি যেন জীবনেও আর তার ফোন না ধরি। ওদিন মনে হচ্ছিল, ম্যারাডোনা আমাকে মেরেই ফেলবেন। মোদ্দা কথা এটাই, তিনি অনেকবার আমার গায়ে হাত তুলেছেন।’

সোনালীনিউজ/এআর

Wordbridge School
Link copied!