• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্টে বাংলাদেশের নতুন ‘রোগ’ 


ক্রীড়া ডেস্ক জুন ২৬, ২০২২, ০৮:০৪ পিএম
টেস্টে বাংলাদেশের নতুন ‘রোগ’ 

ঢাকা: ওয়ানডেতে দারুণ ফর্মে আছে বাংলাদেশ। কিন্তু টেস্টে একের পর এক ব্যর্থতার বৃত্তে টাইগাররা। বলতে গেলে বাংলাদেশকে নতুন একটি রোগ পেয়ে বসেছে। কারণ কোনো ঘটনার প্রভাব যখন সহজে শেষ হতে চায় না, তখন সেটাকে দুর্ঘটনাটা বা রোগ না বলে উপায় নেই।

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে তেমনই এক নতুন রোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর সেটা হচ্ছে খুব দ্রুতই প্রথম সারির উইকেটগুলোর পতন। এটা যেন এখন বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে।

দ্রুত প্রথম সারির উইকেট পতন বাংলাদেশের টানা বেশ কয়েকটি টেস্ট ইনিংসে ভালোভাবেই লক্ষ্য করা গেছে। অবস্থাটা এমনই হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, টেস্টে খেলতে মাঠে নামা মানেই বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের খাতায় ০, ১, ২, ৩, ৫, ৭, ৯- এ ধরনের ‘গরিবি স্কোর’ যোগ হচ্ছে। 

আবার টানা কয়েকটি ইনিংসে সূচনাটায় এমন করুণ অবস্থা দাঁড়ায় যে, বার বার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোরের আশঙ্কাও দেখা দেয়। 

যদিও শেষ পর্যন্ত স্কোরের বিশ্বরেকর্ড বাংলাদেশের নামের পাশে লেখা হয়নি। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় টাইগাররা। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রথম সারির উইকেট পতনের নতুন রোগটা কিন্তু পাকাপাকিভাবে মিশে যাচ্ছে। এ রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে খুবই কৌশলী হতে হবে। আর সেটা সত্যিকারের ক্রিকেট কৌশল, লোক দেখানো নয়।

২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস লাভের পর বাংলাদেশ অভিষেক ম্যাচ খেলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিপক্ষে। ঐ বছরের নভেম্বরের সেই টেস্টে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অনবদ্য ১৪৫ রানের সুবাদে বেশ বড় স্কোর গড়ে। ৪০০ রানের ঐ স্কোরের পর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯১ রানে অলআউট হয় এবং শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে পরাজিত হয়। 

মজার বিষয়, সেই দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যাটার শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ৭, মেহরাব হোসেন অপি ২, আমিনুল ইসলাম বুলবুল ৬, আল শাহরিয়ার রোকন ৬ এবং আকরাম খান ২ রান করেছিলেন। 

হাবিবুল বাশার সুমন ৩০ এবং উইকেটকিপার খালেদ মাসুদ পাইলট অপরাজিত ২১ রান করেছিলেন বলে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন টেস্ট স্কোরের বিশ্বরেকর্ডের হাত থেকে বেঁচে যায়। এরপর বাংলাদেশ এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে ১৩২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। মাঝে আর যা-ই হোক, এভাবে টানা কয়েকটি ম্যাচে অল্প রানেই প্রথম সারির ব্যাটারদের প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। যেটা দেখা গেল শ্রীলংকার বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ থেকে।  

শ্রীলংকা দলের বাংলাদেশ সফর দিয়ে শুরু হয় শুরুতেই প্রথম সারির ব্যাটারদের আউট হওয়ার দৃশ্য। ঐ সিরিজের প্রথম টেস্টে ভালো খেলে বাংলাদেশ। শ্রীলংকা যেখানে দুই ইনিংসে ৩৯৭ ও ২৬০/৬ (ডিক্লেয়ার্ড) রান করে, সেখানে বাংলাদেশ তাদের একমাত্র ইনিংসে ৪৬৫ রান করে। 

কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ দলের প্রথম সারির ৫ জন ব্যাটার আউট হন মাত্র ২৪ রানের মধ্যে।  তামিম ইকবাল ০, মাহমুদুল হাসান জয় ০, নাজমুল হোসেন শান্ত ৮, সাকিব আল হাসান ০ এবং অধিনায়ক মুমিনুল ৯ রানে আউট হলে বেকায়দায় পড়ে বাংলাদেশ দল। সকলের ধারণা ছিল বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়াবে। 

তবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র  ৫৩ রানের মধ্যে প্রথম সারির ৫টি উইকেট পড়ে যায়। তামিম ইকবাল ০, মাহমুদুল হাসান জয় ১৫, মুমিনুল হক ০, নাজমুল হোসেন শান্ত ২ ও মুশফিকুর রহিম ২৩ রানে আউট হন। আর দ্বিতীয় টেস্টে ১০ উইকেটে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে সফরকারী লংকান দল। 

আশা ছিল শ্রীলংকার বিপক্ষে যা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে তা হবে না। কিন্তু অল্প রানে প্রথম সারির উইকেট পতন যেন রোগে পেয়ে বসেছে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে আবারও সেই দৃশ্য আমরা দেখতে পেলাম। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটার আউট হন মাত্র ৪১ রানের মধ্যে। তামিম ইকবাল ২৯, মাহমুদুল হাসান জয় ০, নাজমুল হোসেন শান্ত ০, মুমিনুল হক ০, লিটন দাস ১২ রান করেন।

টানা তিনটি ইনিংসে বাংলাদেশের এমন খারাপ দশা দেখলাম আমরা। বিষয়টি কিন্তু ছোটখাটো নয়। এটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এমন বাজে অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস লাভের প্রথম দিকে নিয়ে যাবে। 

যখন বাংলাদেশ একের পর এক ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিষয়টি নিয়ে যেন একটু চিন্তাভাবনা করে। এটা থেকে রক্ষার উপায় খুঁজে বের করে। তা না হলে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস হুমকির মুখে পড়তে পারে।

সোনালীনিউজ/এআর

Wordbridge School
Link copied!