• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ইউটিউবে শিশুদের অনুষ্ঠানে প্রাপ্তবয়স্কদের বিজ্ঞাপন

বিকৃত ভাবনায় বেড়ে উঠছে শিশু


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯, ০২:০৩ পিএম
বিকৃত ভাবনায় বেড়ে উঠছে শিশু

ঢাকা : ইউটিউবে শিশুদের বিনোদনের ভিডিওতে বিভিন্ন রকমের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তবয়স্কদের বিজ্ঞাপন চলে আসছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত বিজ্ঞাপনে কোমলমতি শিশুরা একদিকে যেমন বিভ্রান্ত হচ্ছে অন্যদিকে শিশুদের মধ্যে বিকৃত ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।

ইউটিউবে ছড়াগান দেখছে তিন বছরের শিশু স্নেহা (ছদ্মনাম)। হঠাৎ করে এক নারী নানা অঙ্গভঙ্গি করে হাজির হলো এবং কয়েক সেকেন্ড পর ‘স্কিপ অ্যাড’ প্রেসের জায়গা এলে সেটা প্রেস করে বাকি গানটা দেখতে থাকল। কিছুক্ষণ পর বাবাকে তার প্রশ্ন, এই আন্টিদের তো আমি ডাকিনি, তারা কেন এলেন?

অনুসন্ধানে জানা যায়, একক পরিবারের শিশুদের কেবল মা-বাবাকেই দেখাশোনা করতে হয়। এ কারণে কিছু সময়ের জন্য অভিভাবকরা শিশুর সামনে ইউটিউবের ভিডিও চালিয়ে দিয়ে থাকেন। এতে শিশু যেমন এক জায়গায় বসে সেটি দেখে, তেমনই মাও তার হাতের কাজগুলো সহজেই শেষ করতে পারেন। সে কারণে অনেক কনটেন্ট নির্মাতা এখন শুধু শিশুদের লক্ষ্য করে ভিডিও তৈরি করছে।

কিন্তু সেগুলো দেখার সময় যে বিজ্ঞাপনগুলো বাধ্যতামূলকভাবে সামনে চলে আসে, সেগুলো মোটেও শিশুদের উপযোগী নয়। বরং এসব বিজ্ঞাপন শিশুর মনে নানা নেতিবাচক প্রভাব ও কৌতূহল তৈরি করে চলেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজ্ঞাপন নীতিমালা নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আর ইউটিউবের কোনো কর্তৃপক্ষ আমাদের দেশে না থাকায় সরাসরি কাউকে বিষয়টির জন্য অভিযুক্ত করা যাচ্ছে না।

তবে ইউটিউবের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কেউ কেউ বলছেন, বাইরের উন্নত দেশগুলোর মতো ইউটিউবের কিডস ভার্সন যদি শুরু করা সম্ভব হয়, তাহলে অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। এছাড়া শিশুদের অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপনের ব্যবহার নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে নীতিমালা দরকার বলেও মনে করেন অধিকার কর্মীরা।

সেভ দ্য চিলড্রেনের চাইল্ড রাইটস গভর্ন্যান্স অ্যান্ড চাইল্ড প্রোটেকশন সেক্টরের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিশুদের জন্য ক্লাস্টার ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে। এবং সেখানে যে কনটেন্টগুলো দেখানো হবে, তার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের কোনো উপাদান থাকবে না। একটি শিশু টম অ্যান্ড জেরি দেখা ছেড়ে তাকে ত্বক ফর্সা হওয়ার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে তো লাভ নেই।

বিজ্ঞাপন যদি দিতেই হয়, তাহলে তার বয়স উপযোগী সে যে পণ্য ব্যবহার করে, সেই পণ্যের বিজ্ঞাপন দিন। তিনি বলেন, শিশু প্রহর নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী বিজ্ঞাপন নীতিমালার পরিকল্পনা করা খুব দরকার।

যদি এ কাজটি আমরা করতে পারি, তাহলে শিশু তার এই পরিণত কনটেন্টের হাত থেকে রক্ষা পাবে। কার্টুন চলাকালে কেবল রেভিনিউ’র জন্য যদি কোনো কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিতেই হয়, তাহলে সেগুলো যেন শিশুতোষ হয়, মানে শিশুদের বয়স উপযোগী হয়।

ফেসবুক ও গুগলের কমিউনিটি ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেন আরিফ নিজামি বলেন, আমাদের দেশে এনিয়ে কোনো নীতিমালা নেই। বাইরের দেশগুলোতে ‘ইউটিউব কিডস’ বলে একটি ভার্সন আছে। আমাদের দেশের জন্য সেটি চালু হয়েছে বলা যাবে না। বাংলাদেশে সেটি হয়নি বলেই কিছু পার্থক্য দেখা যায়।

তাহলে শিশুদের অনুপযোগী এসব বিজ্ঞাপন বন্ধের উপায় কী প্রশ্নে তিনি বলেন, অ্যাপ থেকে কিছু বদলানো যায়। ওই অপশনগুলো খেয়াল রাখা যেতে পারে।

টেলিভিশন ও ইউটিউব শিশুদের বিকাশের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে শিশু অধিকারকর্মী গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, ইলেকট্রনিক যে ডিভাইস সেগুলো শিশুর জন্য না রাখাটাই ভালো। শিশুরা পড়াশোনা শেষে বাসায় খুব জোর দু-তিন ঘণ্টা সময় পায়। আর অভিভাবকরাও অফিস থেকে ফেরার পর এমনই কম সময় পান।

ওইটুকু সময়ে পারস্পরিক যোগাযোগটা যদি না হয়, তাহলে শিশুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, তারপরও যেহেতু শিশুরা এসব কনটেন্ট দেখছে, সেহেতু এসবে অ্যাডাল্ট বিজ্ঞাপন যাতে না দেখানো হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব উল্লেখ করে গওহার নঈম ওয়ারা আরো বলেন, শিশুতোষ অনুষ্ঠানের মধ্যে বিরতিতে বয়স্কদের জন্য জন্মবিরতিকরণ পিলের বিজ্ঞাপন কেন চলবে। এটি চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এমনকি শিশুদের অনুষ্ঠানের সময় টেলিভিশনের টিকারে সহিংসতার খবরও দেওয়া উচিত না। শিশুদের অনুষ্ঠানের বিষয়ে পরিষ্কার নীতিমালা থাকা উচিত।

শিশুদের অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রদর্শনে সুনির্দিষ্ট নীতিমাল না থাকায় নতুন প্রজন্মের এক বিশাল অংশ কোমল মস্তিষ্কে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো চাপ নিয়ে অনেকটা বিকৃত ভাবনায় বেড়ে উঠছে। যা আগামীর জন্য এক ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!