• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু নির্যাতনের হার বেড়েছে ২০ শতাংশ


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯, ১২:৫৯ এএম
শিশু নির্যাতনের হার বেড়েছে ২০ শতাংশ

ঢাকা : চলতি বছর গত বছরের তুলনায় গড়ে মাসিক শিশু নির্যাতনের হার ২০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে শিশুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ (সিআরএসিবি)।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সিআরএসিবির উদ্যোগে জাতীয় সংসদ ভবনের আইপিডি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘বর্তমান শিশু অধিকার পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেনের চাইল্ড রাইটস গভর্নমেন্ট প্রকল্পের ম্যানেজার রাশেদা আক্তার। এতে বলা হয়, যত দিন যাচ্ছে, শিশুর প্রতি সহিংসতার মাত্রা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

২০১৮ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৩৮১ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত গড়ে ৪৫৭ জন করে মোট তিন হাজার ৬৫৩ শিশু বিভিন্ন রকম সহিংসতার শিকার হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে মাসিক গড়ে শিশুসহিংসতা বেড়েছে ২০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬৯৭ শিশু। এছাড়া ধর্ষণচেষ্টার শিকার ১০৪ জন। অন্যদিকে এ সময়ের ভেতর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৬১ শিশু। এছাড়া হত্যার শিকার ২৮৫, আত্মহত্যা ১৩৩, অপহরণের শিকার ১৪৫, নিখোঁজ ১০৪, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৯০, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৯২ জন শিশু। এর বাইরেও পানিতে ডুবে নিহত হয়েছে ৩৯৫ শিশু।

সার্বিক শিশু নির্যাতন ও বিচার প্রসঙ্গে রাশেদা আক্তার বলেন, ৭ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরাই বেশি নির্যাতনের শিকার। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ৫ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, ধর্ষণের শিকার ৯০ শতাংশই শিশু ও কিশোরী। ২০০২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১৫ বছরে ঢাকার ৫টি নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণসংক্রান্ত ৫ হাজার মামলার পরিস্থিতি অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশের সাজা কার্যকর হয়েছে।

পরে সভায় জোটের পক্ষ থেকে শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ককাস-এর কাছে বিদ্যমান পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য একটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশে শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সময়ের ভেতর বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন ও শিশু নির্যাতনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া শিশু আইন-২০১৩-এর বিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমমুক্ত দেশ গড়ার নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরি, বাল্য বিবাহ রোধে প্রণীত আইন, নীতিমালা ও জাতীয় পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ারও আহবান জানানো হয়।

এছাড়া অনিরাপদ অভিবাসন, শিশু পাচার, শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে থেকে শিশুদের রক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয় সংস্থার পক্ষ থেকে। সমাজের পিছিয়ে থাকা সুবিধাবঞ্চিত ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সুরক্ষা ও উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রণয়ন এবং বাজেটে শিশুদের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। শিশুদের অধিকার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, শিশু অধিকারের বিষয়টি তৃণমূলে পৌঁছতে না পারলে কোনো সফলতা আসবে না। বছরজুড়ে উপজেলা পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি সভা করতে হবে। গ্রামের কর্মজীবী মায়ের সন্তানদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করতে হবে। শিশু আইন সংশোধনের জন্য অংশীজনদের সঙ্গে বসে সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরতে হবে বলেও জানান তিনি।

শিশু নির্যাতন বন্ধে করণীয় প্রসঙ্গে ককাসের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক টুকু বলেন, শিশু নির্যাতন রোধে পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। সবাই নিজেদের নিয়ে যেভাবে ভাবে, শিশুদের নিয়ে সেভাবে ভাবলেই এসব নির্যাতন বন্ধ হবে। এজন্য ককাস থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

এছাড়া সভায় আরো বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, উম্মে সাদিকা নাজমাসহ সিআরএসিবির সদস্য উন্নয়ন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা।

শিশু অধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, অগ্রগতি ও এক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে মনোযোগী হওয়া দরকার সেগুলোকে চিহ্নিত করে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থা, ৩টি নেটওয়ার্ক ও একটি বেসরকারি সংগঠনের সমন্বয়ে সিআরএসিবি জোটের যাত্রা শুরু হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!