• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দৈনিক ৬ ঘণ্টা মজুরিহীন কাজ করেন নারীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২০, ২০২১, ০৮:৩১ পিএম
দৈনিক ৬ ঘণ্টা মজুরিহীন কাজ করেন নারীরা

ফাইল ছবি

ঢাকা: প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা মজুরিছাড়া গৃহস্থালির কাজ করেন।অন্যদিকে পুরুষেরা বয়সভেদে গড়ে দৈনিক দেড় থেকে দুই ঘণ্টা এ কাজ করেন। অর্থাৎ নারীরা পুরুষের চেয়ে অন্তত তিন গুণ বেশি শ্রম দেন।

শনিবার (২০ নভেম্বর) সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘নীতিনির্ধারণে কেয়ার ইকোনমির অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, বাসাবাড়িতে রান্নাবান্না, গৃহস্থালির কাজ, বাজার সদাই, সন্তানদের যত্ন — এসব কাজ করে থাকেন নারীরা। কিন্তু তারা মজুরি পান না। এগুলো নারীর অদৃশ্য শ্রম। প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা মজুরিছাড়া গৃহস্থালির কাজ করেন।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ‘মজুরিহীন অদৃশ্য কাজের চাপ কমাতে পারলে নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বাড়ানো সম্ভব। দেশের ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী নারীরা দৈনিক ৫ দশমিক ৯৩ ঘণ্টা মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কাজ করেন। অন্যদিকে একই বয়সী পুরুষেরা গড়ে ১ দশমিক ৪৯ ঘণ্টা কাজ করেন।

‘ ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীরা মজুরিহীন অদৃশ্য কাজ করেন ৫ দশমিক ৮৭ ঘণ্টা। একই বয়সী পুরুষেরা করেন মাত্র ১ দশমিক ৮৭ ঘণ্টা।’

সরকারি বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত ব্যবহার করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নারীরা ঘরে যেসব কাজ করেন, পুরুষেরাও তা পারেন। অর্থনীতিতে নারীর এসব কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। নারীর অদৃশ্য শ্রমে পুরুষের অংশগ্রহণ বাড়লে কর্মজীবী নারীর ওপর কাজের চাপ কমবে। নারীর অদৃশ্য শ্রমে পুরুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘শ্রমশক্তির বিশাল জনগোষ্ঠী নারী। তাদের স্বীকৃতি দেয়া যাচ্ছে না, এটি সত্য। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আগামী মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে তা ঘোষণা করা হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’

নারীর মজুরিহীন অদৃশ্য শ্রমকে ‘সাংস্কৃতিকভাবে জট পাকানো’ বিষয় বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

নারীর অদৃশ্য অবদানের স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে সামাজিক আন্দোলন দরকার বলে মনে করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। তিনি বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার প্রধান কারণ হলো নারীর প্রতি অসম্মান। আর বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী অবদানগুলো তুলে ধরার মাধ্যমেই নারীর প্রতি অসম্মান দূর করা সম্ভব।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, মজুরিবিহীন নারীর অদৃশ্য কাজের অবদান মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ, যা যোগ করলে অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। নারীর অদৃশ্য কাজের মজুরি দেওয়া হলে নারীর আয় আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়ে যাবে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম জানান, মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৩২ কোটি টাকার প্রশিক্ষণ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এতে নারীদের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব বেবী রানী কর্মকার নারীর অপ্রদর্শিত শ্রমকে অদৃশ্য সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নারীর এই শ্রমকে স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির কোনো বিকল্প নেই। অপ্রদর্শিত শ্রমের ভার কমানোর মাধ্যমে নারীর মূলধারার অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ মুসলিমা মুন বলেন, ঘরের সেবামূলক কাজের ভার শুধু নারীর উপর না দিয়ে পুরুষদেরও এই কাজে অংশগ্রহণ করা জরুরি।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!