• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
একান্ত সাক্ষাৎকারে জাকিয়া সুলতানা

প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে প্রশাসনে সফল নারীরা


শামছুল ইসলাম মার্চ ৭, ২০২১, ০৯:২২ পিএম
প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে প্রশাসনে সফল নারীরা

ঢাকা : তিন দশক ধরে বাংলাদেশের সরকার ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন নারীরা। এ সময় দেশের সরকার প্রধানসহ মন্ত্রিসভার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন তারা। রাজনীতির পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেমনটি হয়েছে আমলাতন্ত্রেও। প্রশাসন ক্যাডারে বর্তমানে কর্মরত ৫ হাজার ৪৪৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে ১ হাজার ৪৪৭ জন নারী। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন তারা।

জাকিয়া সুলতানা ১০ম বিসিএসের মাধ্যমে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল), পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ,  মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি ব্যাংকগুলো ডিজিটালাইজেশন এর মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মাঠ প্রশাসনে উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাকিয়া সুলতানা দাপ্তরিক প্রয়োজনে ইউএসএ, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি সফর করেছেন।

১৯৬৮ সালে নাটোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন জাকিয়া সুলতানা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে বিএসসি (এনাটমি) ও ১৯৯১ সালে এমএসসি (এনাটমি) ডিগ্রি ও পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার স্বামী মো. আতিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) পিপিএম (বার) বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

নারী দিবসের এই ক্ষণে প্রশাসনে সফলতার স্বাক্ষর রাখা বাংলাদেশ জ্বালানী ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল- এর চেয়ারম্যান (সচিব) জাকিয়া সুলতানার মুখোমুখি হয়েছেন সোনালীনিউজ-এর সিনিয়র রিপোর্টার শামছুল ইসলাম-

সোনালীনিউজ : প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর সচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এই অবস্থানে আসার শুরুটা আপনার কীভাবে হয়েছিল?

জাকিয়া সুলতানা : সর্বোচ্চ স্তরে সচিব পদে দায়িত্ব পালনের শুরুটা হয়েছিল ১৯৯১ সালে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে। শৈশব থেকেই স্বপ্ন ছিল মানুষের কল্যাণে কাজ করার। সে স্বপ্নই আমাকে বর্তমান পদে আসার কঠিন পথকে সফলতার সাথে অতিক্রম করার শক্তি যুগিয়েছে। শুরুটা তেমন কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।

সোনালীনিউজ : এই পথ পাড়ি দিতে কোন বাধার সম্মুখীন কি হয়েছেন?

জাকিয়া সুলতানা : প্রশাসন ক্যাডারের নারী কর্মকর্তাগণকে অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় কম বাধার সম্মুখীন হতে হয়।  আমার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য কোন বাধা আসেনি। তাছাড়া আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম, উদ্যোগ,  চেষ্টা,  সততা ও একাগ্রতার মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে কর্মক্ষেত্রে স্বাক্ষর রাখার চেষ্টা করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বে নারী কর্মকর্তাগণের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ বৃদ্ধি, পুরুষ কর্মকর্তাগণের সহযোগীতাপূর্ণ মনোভাবে নারী কর্মকর্তাগণের কর্ম পরিবেশ যথেষ্ট উন্নত হয়েছে।

সোনালীনিউজ : নারী দিবস নিয়ে আপনি কি ভাবেন?

জাকিয়া সুলতানা : কর্মস্থালে নারী শ্রমিকের প্রতি বৈষম্য ও অবিচারের প্রতিবাদের বলিষ্ট এক পদক্ষেপের ফসল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৮৫৭ সালে নিউইয়র্কের নারী শ্রমিকদের আন্দোলনের মাধ্যমে, শত বছরের তিল তিল করে জমতে থাকা ক্ষোভের প্রথম বহি:প্রকাশ ঘটেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯০৯ সালে নিউইয়র্ক সর্বপ্রথম এবং ১৯১০ সালে ডেনমার্কে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ডেনমার্কের সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন, প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তাবনা করেন। ১৯১৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হলেও ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে, প্রতি বছর স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের চলমান রীতি-নীতি, আইন-কানুন ও সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে নারীর ন্যায্য অধিকার আদায় করা সম্ভব হলেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।

সোনালীনিউজ : আপনার দৃষ্টিতে নারীদের অগ্রগতি কতটা হয়েছে?

জাকিয়া সুলতানা : ওয়াল্ড ইকনোমিক ফোরাম-এর জেন্ডার গ্যাপ ইনডেস্ক-২০২০ অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের ৫০ তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার ১ম। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, কুসংষ্কারাচ্ছন্ন সামাজিক অবস্থা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ সংস্কার প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী আজ অনন্য ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। নারী আজ আর সহচারী নয়, সংগ্রামী জীবনের সহকর্মী, জীবন যুদ্ধের অন্যতম শরীক।

আজকের এ অবস্থানের জন্য শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হয় মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, বেগম রোকেয়া, জাহানারা ইমাম, বীরকন্যা প্রীতিলতা বিশেষ করে বাংলাদেশের অহংকার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। যার প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতায় অভিভূত হয়ে, বিশ্ব আজ তাঁকে ‘নারী অধিকারের স্তম্ভ’, ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’, ‘বিরল মানবতাবাদী নেতা’ প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করছেন। তাঁর দৃঢ় পদক্ষেপ শুধু বাঙালী নারীকে নয় সমগ্র জাতিকে বিশ্ব দরবারে একটি সুদৃঢ় অবস্থান সৃষ্টি করতে সাহায্য করছে।

সোনালীনিউজ : প্রশাসনে নারী কর্মকর্তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?

জাকিয়া সুলতানা : জীবনে সফল হতে হলে আইডল নির্বাচন করতে হবে। যার জীবন্ত উদাহরণ আমাদের মাঝে বর্তমান। বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনা যখন তাণ্ডব চালিয়ে চীন, জাপান, আমেরিকার মত দেশকে বিপর্যস্ত করছে, তখন আমাদের নির্ভীক প্রধানমন্ত্রী বিমারহীন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত সকল নগারিকের খবরা-খবর নিচ্ছেন। জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমে তা সম্প্রচার করে তিনি সমস্ত জাতিকে সচেতন করতে সক্ষম হয়েছেন।

প্রশাসনের নারী সহকর্মীবৃন্দের প্রতি পরামর্শ হচ্ছে, চ্যালেঞ্জিং প্রশাসন ক্যাডারকে আমরা পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছি। দেশের উন্নয়নে সরকারের গৃহিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পরিচালনাই আমাদের মূল দায়িত্ব। কর্তব্য পালনের সময় আমাদের মনে রাখতে হবে ব্যক্তির চেয়ে সংস্থা বড়, সংস্থার চেয়ে দেশ। কর্মক্ষেত্রে লোভ লালসা ও ব্যক্তিস্বার্থের উর্দ্ধে এবং দূর্নীতিতে জিরো ট্রলারেন্স থেকে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে কিংবা চলার পথে অনাকাঙ্খিত সমস্যার সৃষ্টি হলে, প্রশাসনিকভাবেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পরিশেষে বলবো, আজকের মাদার তেরেসা, বেগম রোকেয়া, প্রীতিলতা আমরাই। ন্যায়, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে প্রমাণ করতে হবে ‘সমাজের সামগ্রিক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এবং নারীমুক্তির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য’। তবেই আমাদের পরবর্তী নারী প্রজন্মের চলার পথ আরো মসৃণ হবে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!