• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবজি ব্যবসায় রোকেয়ার সাফল্য


আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি মার্চ ১৯, ২০২২, ০৮:৫৮ পিএম
সবজি ব্যবসায় রোকেয়ার সাফল্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বাংলাদেশে হকারি কিংবা ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে নানা মালামাল বিক্রি করা সাধারণত পুরুষ মানুষই বেশি করে থাকেন। ক্ষেতে নারীদেরকে খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে জীবন যুদ্ধে অসহায় নারীরা শত কষ্ট সহ্য করে পুরুষদের পাশাপাশি হকারি, ভ্রাম্যমাণ দোকানসহ নানা পেশায় কাজ করছেন। অসহায় নারীদের কাঁধে সংসারের বোঝা পড়ায় জীবিকার প্রয়োজনে তাদের সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে।

এরই একজন রোকেয়া বেগম। দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে সবজি বিক্রি করে সংসারের ঘানি টানছেন রোকেয়া। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের সড়ক বাজার এলাকায় সবজি বিক্রি করছেন । বর্তমানে পৌর শহরের মালদার পাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।

ইচ্ছা আর দৃঢ় মনোবলকে পুঁজি করে অসহায় হতদরিদ্র রোকেয়া বেগম এখন আর সমাজের কোনো বোঝা নয়। তিনি বাজারে সবজি বিক্রি করে অভাব অনটনকে জয় করেছেন। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া এই নারী এলাকায় একজন আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে জীবন সচ্ছলতা থাকলে ও তার জীবন সংগ্রামের গল্প ছিল এক করুণ।

রোকেয়া বেগম বলেন, আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার আব্দুর সমরের সাথে তার বিয়ে হয়। তার স্বামী একজন দৈনিক মজুরিতে কাজ করতেন। এই আয় দিয়ে চলতো তাদের সংসার। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় তাদের দুই মেয়ে সন্তান হয়। অভাবের সংসারে ২ মেয়ে রেখে তার স্বামী হঠাৎ মারা যায়। এরপর তার দুচোখে অন্ধকার নেমে আসে। জায়গা জমি না থাকায় দুই মেয়ে নিয়ে তার চলা যেন খুবই কষ্টকর হয়ে উঠে। সন্তান নিয়ে এখন কোথাই যাবেন কি করবেন সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেন। এরপর শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। জীবন বাঁচাতে খেয়ে না খেয়ে অনেক পরিশ্রমের কাজ করতে শুরু করেন।
কোন উপায় না পেয়ে কসবা থেকে এক পর্যায়ে তিনি আখাউড়ায় চলে আসা হয়। সেখানে তার স্বল্প জমানো টাকা দিয়ে সড়ক বজার এলাকায় সবজি ব্যবসা শুরু করেন। সারাদিন যা উপার্জন হতো তা দিয়ে খুবই কষ্ট করে চলতো তার সংসার। যে দিন বাজারে সবজি বিক্রি করতে না পারতাম সেদিন চলতে খুবই কষ্ট করতে হতো।

তিনি আরও বলেন দীর্ঘ বছল ধরে তিলে তিলে সবজির ব্যবসাটাকে তিনি ধরে রেখেছেন। তার সবজি দোকানে আলু, টমেটো, বেগুন, শিম, কপি, ফ’ল কপি, মুলা, লতা, কলা, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচামরিচসহ চাহিদানুযায়ী নানা প্রকারের সবজি রয়েছে। বর্তমানে তার সবজি দোকানে ভালো মালামাল বিক্রি হয়। দৈনিক সবজি কেনা আর বিক্রি তিনি নিজেই করে থাকেন। আগে বেশীভাগ সবজি আখাউড়ার বাইরে থেকে কেনা হতো। এখন বষস হওয়ায় ওইভাবে মালামাল বাইরে থেকে ক্রয় করা যায় না। স্থানীয় আড়ৎ থেকে মালকিনে বিক্রি করছেন বলে জানায়। তিনি বলেন প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা পযর্ন্ত আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার উপর সবজি বিক্রি করা হয়। দৈনিক ৪শ থেকে ৫শ টাকা খরচ বাদে আয় হয়। তিনি বলেন যদি আমার স্বামী বেঁচে থাকতো কিংবা কোন ছেলে সন্তান থাকতো তাহলে হয়তো এ কাজ করতে হতো না। আমি স্বামী হারা ভূমিহারা এক অসহায় মহিলা। সবজি বিক্রি করে কোন রকম বেঁচে আসেন বলে জানায়। তিনি বলেন আমি কোন মানুষের বোঝা হয়তে চায় না। ইচ্ছা করলে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে আমি এই চেষ্টায় করছি। বর্তমানে এ ব্যবসা ভালই চলছে। এ ব্যবসা করে আমি খুবই খুশি। এখন কোন আমার অভাব অনটন নেই। সবজি বিক্রির আয় দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বলে জানায়। তবে অভাবের কারণে দুই মেয়েকে পড়াশোনা ও করতে পারেন নি বলে জানায়।

বাজার করতে আসা মো: ফরিদ মিয়া বলেন, আমি ছোট থাকতে এই মহিলাকে বাজারে সবজি বিক্রি করতে দেখছেন। এখানে টাটকা নানা জাতের সবজি পাওয়া যায়। যখনই বাজার করতে আসা হয় এখান থেকে কিছু না কিছু সবজি কেনা হয়। সবজি বিক্রিতে তার বেশ সুনাম ও রয়েছে।

গৃহিনী আয়েশা আক্তার বলেন, তার স্বামী প্রবাশে থাকায় নিয়মিত বাজার তাকেই করতে হয়। তিনি এই মহিলা অনেক বছর ধরে সবজি বিক্রি করতে দেখছেন। বেশীভাগ সময় তার কাছ থেকে সবজি কেনা হয় বলে জানায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ফোরকান মিয়া বলেন, আসলেই এই মহিলা খুবই অসহায়। সড়ক বাজার এলাকায় দীর্ঘ বছর ধরে সবজি ব্যবসা করছেন। আমরা তাকে সব সময় কেনা কাটায় সাহার্য করছি। তার নিজস্ব জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। সবজি বিক্রির উপর চলছে তার সংসার। সবজি বিক্রেতা রোকেয়া বেগম আক্ষেপ করে বলেন, আমার বয়স হয়েছে। এখন আর আগের মতো ব্যবসা করতে পারি না। অন্যের বাড়িতে ভাড়ায় থাকি। মৃত্যুর আগে নিজের একটি বাড়ি দেখে যেতে পারলে মরে গেলেও তার কোন চিন্তা ছিল না। তিনি আরও বলেন সরকার ভূমিহীনদের জন্য অনেক কিছু করছে তাই তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!