ঢাকা : মাসুমা মরিয়ম। বাংলাদেশের তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার উদাহরণ। রোল মডেল বললেও খুব একটা ভুল হবে না। বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই তাকে ‘লিডার’ বলে সম্বোধন করে। অনেকে আবার বলে ‘উপকারী বন্ধু’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ থেকে মাস্টার্স ফাইনাল দিয়েছেন তিনি। এখন করছেন থিসিস। পাশাপাশি কাজ করছেন জেন্ডার রেসপন্সিভ রিজিলিয়েন্স অ্যান্ড ইন্টারসেকশনালিটি ইন পলিসি অ্যান্ড প্র্যাকটিস (গ্রিপ)-প্রজেক্ট এর সাউথ এশিয়া অঞ্চলের কমিউনিকেশন অফিসার হিসেবে।
মরিয়মের সামাজিক কাজের সূচনা হয়েছিল ২০১৫ সালের শুরুতেই। ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন তার আব্বু-আম্মু সামাজিক কাজে ব্যস্ত থাকতেন। মূলত সামাজিক কাজের প্রতি মরিয়মের ভালোবাসার বীজটি তার পরিবার থেকেই তার মধ্যে রোপণ করা হয়েছে। প্রথমে তিনি বগুড়ার শেরপুরে এলাকার ইয়ুথদের জন্যে কাজ শুরু করেন। ‘স্বপ্ন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট’ নামে সংগঠনটির নামকরণ করেন। সেইসময়ে নিজের পড়াশোনার ব্যস্ততায় খুব বেশি সময় দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠনে কাজ শেখার সুযোগ হয় তার। ২০১৯ সাল থেকে পুনরায় নিজের সংগঠনে ভলান্টিয়ার বাড়ান।
তিনি যখন কাজ শুরু করেন তখন ভলান্টিয়ারিজম এত জনপ্রিয় ছিল না। স্কুল-কলেজে সমাজের মানুষের জন্য খুব বেশি কাজ করার সুযোগ ছিল না। এই অসংগতি মরিয়মকে সবসময়ই ভাবিয়েছে। তাই ইয়ুথদের নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ইয়ুথরা বড় স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়, যারা দেখার সাহস করে তারা সেই স্বপ্ন পূরণে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। তাই তার ইচ্ছে ইয়ুথদের বড় স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করা। এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে সহযোগিতা করা। এই যাত্রায় কখনো কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে কিনা? জবাবে মরিয়ম বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতা আসলেই থাকেই। বডি শেমিং থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক - অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীনই হতে হয়। শিক্ষার্থী হওয়ায় বিভিন্ন সময় ইভেন্ট করতে গিয়ে থেমে যেতে হয়, স্পন্সর পাওয়া যায় না তুলনামূলক ছোট অর্গানাইজেশান বলে। পড়াশোনার পাশাপাশি একটা অর্গানাইজেশানকে নেতৃত্ব দেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। মেয়ে বলে অনেক জায়গায় চাইলেও যাওয়া বা অনেক কাজ করা হয়ে উঠে না। সামাজিক অনেক প্রতিবন্ধকতাই থাকে। তবে প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ে ভাবলে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় না। তাই সবসময়ই চেষ্টা করি এসব নিয়ে না ভেবে কিভাবে মানুষের জন্যে কাজ করা যায় তা ভাবার। কারণ দিনশেষে মানুষ আমাদের কাজে উপকৃত হলে তবেই সার্থকতা।’
সমাজের নারী-পুরুষের বৈষম্যের কারণ ও সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আসলে মানুষের মানসিকতার জন্যে সব জায়গায়ই বৈষম্য আছেই। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা বা কাজের জায়গায়, কর্পোরেট অফিসগুলোতে বেশি বোঝা যায়। এজন্য যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মেয়েরা পিছিয়ে থাকে। সমাধান আসলে একটাই, মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন। গোড়া থেকে পরিবর্তন দরকার। স্কুল-কলেজ, পরিবার সব জায়গায় ছেলে-মেয়ে সবাইকে ‘মানুষ’ ভাবতে আর মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া শিখতে আর শিখাতে হবে।’ মাসুমা মরিয়ম তার নিজস্ব গুণ ও নেতৃত্বদানের দক্ষতায় বিভিন্ন অ্যাওয়্যার্ড পেয়েছেন।
মরিয়মের ‘স্বপ্ন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট’ সংগঠনে প্রতি ৬ মাস পরপর ভলান্টিয়ার ও ক্যাম্পাস এম্বাসেডর রিক্রুট করে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমগুলোতে চোখ রাখলেই যে কেউ এই সংগঠনে যুক্ত হওয়ার যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন। সেখানে সব প্রক্রিয়া দেওয়া থাকে। প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যে কেউ তাদের সাথে কাজ করতে পারবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মরিয়ম বলেন,‘ স্বপ্ন দেখি অনেক বড় কিছু করার। দেশের সব ইয়ুথদেরকে স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর সুযোগ করে দেয়ার। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে কাজ করতে চাই। ইয়ুথদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে । তবে, আপাতত ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।’
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :