• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
এক লাফে ৬ গুণ বেড়েছে ট্রেড লাইসেন্স ফি

অনলাইনে সেবা পেতে চরম ভোগান্তি


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ০৪:০৭ পিএম
অনলাইনে সেবা পেতে চরম ভোগান্তি

ঢাকা : ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সব সেক্টরে ডিজিটালের হাওয়া লেগেছে। তার সঙ্গে বেড়েছে নাগরিকদের হয়রানিও। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স পেতে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগ উঠেছে, অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স করতে এসে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। লাইসেন্স পেতে অতিরিক্ত ফি’র পাশাপাশি ঘুষও দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ট্রেড লাইসেন্স অনলাইন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। দিন যতই যাচ্ছে বিড়ম্বনা ততই দীর্ঘ হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার বলেন, ট্রেড লাইসেন্স অনলাইন করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

কাপ্তানবাজারের ব্যবসায়ী নাজমুল হক অভিযোগ করেছেন, ট্রেড লাইসেন্স পেতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সেবাপ্রার্থীদের সেবার পরিবর্তে অতিরিক্ত টাকায় মিলছে ট্রেড লাইসেন্স।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-১-এর শান্তিনগর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শিহাব উল্ল্যাহ বলেন, লাইসেন্স পেতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বাধ্য হয়ে একজনকে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা ঘুষ দিতে হলো।

সংশ্লিষ্টরা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ব্যবসায়ীরা ডাহা মিথ্যা কথা বলছেন। তবে শাখায় কিছু বহিরাগত দালাল দ্রুত লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি করছে। এর দায় টানতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে।

ডিএসসিসির অঞ্চল-২-এর কর কর্মকর্তা আনোয়ার বলেন, অনলাইনের সার্ভার নষ্ট হয়েছে। এজন্য মঙ্গলবার সারাদিন কোনো কাজ করা যায়নি।

ডিএসসিসির অঞ্চল-২-এ ট্রেড লাইসেন্স করতে এসেছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ট্রেড লাইসেন্স করতে এসে গত কয়েকদিন ধরে ঘুরছি। কখনো হয়তো কর্মকর্তারা চেয়ারে থাকেন না। আবার অনলাইনে লাইসেন্স করতে গিয়ে সার্ভার নষ্টের কথা বলা হচ্ছে। এভাবে হয়রানি না করে মানুষের ভোগান্তি লাঘব করা দরকার।

জানা যায়, ট্রেড লাইসেন্স ফি এবার একধাপেই ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা করেছে সরকার। এতে সিটি করপোরেশনে নতুন লাইসেন্স নবায়ন সংখ্যাও কমেছে।

এ বিষয়ে অঞ্চল-৫-এর ট্রেড লাইসেন্স শাখার দায়িত্বে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার ট্রেড লাইসেন্স ফি বাড়িয়েছে। অথচ ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সরকার ফি বাড়ায়নি, সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা অতিরিক্ত টাকা ঘুষ হিসেবে নিচ্ছেন। একবারে এত বেশি মাত্রায় ফি বাড়ার বিষয়টি কেউ কেউ বুঝতে চাইছেন না।

ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, লাইসেন্স হালনাগাদ করতে উৎস কর দিতে হতো ৫০০ টাকা, সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ গুণ বৃদ্ধি করে ৩ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। একইভাবে অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা এবং পৌরসভা সদর এলাকায় ৩০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার টাকা এবং পৌরসভায় ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এতে শুধু ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নয়, পুরো দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা নতুন ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্স করতে নিরুৎসাহিত হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার আগেই মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন হয়েছে। তবে ট্রেড লাইসেন্সে একবারেই ৬ গুণ টাকা কোন যুক্তিতে বাড়ানো হয়েছে সেটি বোধগম্য নয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ট্রেড লাইসেন্সের ফি বাড়ানোর ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ট্রেড লাইসেন্সের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার এবং যুক্তিসঙ্গত হারে ট্রেড লাইসেন্স ফি নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!