• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
বইমেলা প্রতিদিন

অনুবাদ সাহিত্যের কাটতি


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯, ০১:১৯ পিএম
অনুবাদ সাহিত্যের কাটতি

ঢাকা : অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১২তম দিনে এসে বই বিক্রির হিসাবে এগিয়ে আছে অনুবাদ সাহিত্য। মেলা শুরুর দিন থেকে অনুবাদ সাহিত্যের জন্য নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেবা প্রকাশনীর স্টলে ভিড় লেগে আছে। গতকাল সন্ধ্যায়ও দেখা যায় সেবা প্রকাশনীর স্টলে পড়ুয়াদের জটলা।

সেখানে উত্তরা থেকে আগত সোহানা শিকদার বলেন, আমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিংয়ে পড়াশোনা করছি। বিদেশি সাহিত্য, বিশেষ করে রুশ সাহিত্যের প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। সে কারণেই পছন্দের বই খুঁজছি।

সোহানা বলেন, আগে হুমায়ূন আহমেদের ফিকশন পড়তাম। এখন তার জায়গায় নতুন কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না। কিংবা নতুন যারা লিখছেন তাদের মধ্যে সেই মজাটা পাচ্ছি না। সে কারণেই অনুবাদ সাহিত্যে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। সেবা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আলমগীর হোসেন জানালেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের পাঠকও এখানে আসছেন। বিভিন্ন বইয়ের খোঁজ নিচ্ছেন।

মেলায় এখন পর্যন্ত আসা নতুন বইয়ের মধ্যে বিশেষভাবে হৈচৈ ফেলতে পারেনি কোনোটাই। শীর্ষ বিক্রীত বইয়ের হিসাবটাও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিক্রির তালিকায় এখন পর্যন্ত অনুবাদ সাহিত্যই যে শীর্ষে, তা বোঝা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৯টি। গল্প ২০, উপন্যাস ২৫, কবিতা ৪৪, প্রবন্ধ ৬ ও অন্যান্য বিষয়ক গ্রন্থ ৫৪টি।

এদিকে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় ‘কবি-অনুবাদক মনিরউদ্দীন ইউসুফ : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসান হাফিজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শফিউল আলম, রেজাউদ্দিন স্টালিন ও মোহাম্মদ আবদুল হাই। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ।

হাসান হাফিজ বলেন, মনস্বী, বহুমাত্রিক একজন লেখক ছিলেন মনিরউদ্দীন ইউসুফ। সাধারণ কোনো লেখক নন, সাধকই বলতে পারি তাকে। আমৃত্যু ব্রতী ছিলেন জ্ঞান ও সাহিত্য সাধনায়। সুদীর্ঘ সাহিত্যজীবনে তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সৃজনকর্মে গভীর অভিনিবেশ, নিষ্ঠা ও মৌলিকত্বের পরিচয় রেখে গেছেন। যে মেধা, ঐকান্তিক অধ্যবসায়ে তার সাহিত্যকৃতি উজ্জ্বল এবং বিচিত্রগামী হয়েছে, আমরা পেয়েছি সোনালি ফসল। প্রকৃতার্থেই তিনি ছিলেন সব্যসাচী একজন লেখক। অঙ্গীকার, প্রত্যয়, একাগ্রতা, শ্রম দিয়ে তিনি আমাদের সাহিত্য অঙ্গনকে ঋদ্ধ করে গেছেন। বিশ্ববিশ্রুত একাধিক লেখকের শাশ্বত কালজয়ী রচনার সঙ্গে তিনি আমাদের প্রত্যক্ষ পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছেন। তার মেধাবী অনুবাদে আমরা সেগুলোর মূল্যবান আস্বাদ লাভ সমর্থ হয়েছি। বর্তমানকালে আমাদের দেশে তার মতো এরকম নিবেদিতপ্রাণ, অনুকরণীয় সাহিত্য ব্যক্তিত্বের বড্ড অভাব।

আলোচকরা বলেন, ‘শাহনামা’ অনুবাদ মনিরউদ্দীন ইউসুফের অসামান্য কীর্তি। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বসাহিত্যের ধ্রুপদী সৃজনকর্মের সঙ্গে তিনি বাঙালি মননের যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। শুধু এই অনুবাদ নয়, তার কবিতা, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য রচনায় একজন সংবেদী মানুষের পরিচয় মুদ্রিত রয়েছে যাকে অনায়াসে শুভ ও কল্যাণ-চেতনার প্রতীক বলে আখ্যায়িত করা যায়।

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ বলেন, মনিরউদ্দীন ইউসুফ একজন বিস্মৃত মনীষা। বাংলা একাডেমি তার অনুবাদে ছয় খণ্ডে শাহনামা প্রকাশ করেছে, যা দেশে ও বিদেশে বিপুলভাবে আদৃত হয়েছে। জন্মশতবর্ষে তাকে নিয়ে এ স্মরণ-আয়োজন মূলত তার অসামান্য কৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার নিদর্শন।

এদিকে লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন আখতারুজ্জামান আজাদ, মোহিত কামাল, বেগম আকতার কামাল, হামিম কামাল ও নাসরিন সিমি। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদুল হক এবং জাহিদ হায়দার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নাজমুল আহসান ও জিনিয়া ফেরদৌস। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, বিশ্বজিৎ রায়, ফারহানা ফেরদৌসী তানিয়া, সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা, রাজিয়া সুলতানা, নাজমুল আহসান তুহিন, উম্মে রুমা ট্রফি ও সঞ্জয় কুমার দাস।

আজকের অনুষ্ঠান : বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মেলা চলবে দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘কবি রফিক আজাদ : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশ্বজিৎ ঘোষ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অসীম সাহা, ফারুক মাহমুদ ও জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রশীদ হায়দার। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!