• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিএসইসি চেয়ারম্যান

অনেক চেষ্টা করেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সাড়া পাচ্ছি না


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৫, ২০২০, ০৭:২১ পিএম
অনেক চেষ্টা করেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সাড়া পাচ্ছি না

ঢাকা : শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে সম্মানের সঙ্গে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তারা শেয়ারবাজারের প্রধান অংশ। তবে বাজারের স্বার্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী খুবই প্রয়োজন। অনেক চেষ্টা করেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছি না। যা পাচ্ছি, তা সেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের থেকে।

তিনি বলেন, ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ারধারন না করার জন্য এরইমধ্যে ১৭ জন পরিচালককে অপসারন করা হয়েছে। আর উদ্যোক্তা/পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারনের আল্টিমেটাম দেওয়া সময় শেষের দিকে। এক্ষেত্রেও কঠোর অবস্থান নেবে কমিশন। কারন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব। আমরা এই মার্কেটটাকে শক্তিশালী মার্কেটে রুপান্তর করতে চাই।

সোমবার সন্ধ্যায় (৫ অক্টোবর) বিশ্ববিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষ্যে আয়োজিত “ইনভেস্টর প্রটেকশন: ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯ অন বিজনেস অ্যান্ড রিলেটেড ডিসক্লোজার” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএসইসি বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২০ উপলক্ষ্যে ওয়েবিনারটি আয়োজন করে।

ট্যাক্স সুবিধা দিয়ে বিদেশি কোম্পানিসহ বাংলাদেশের বড় বড় কোম্পানি মার্কেটে নিয়ে আসার কাজ চলছে জানিয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, মার্কটে দুষ্ট লোকের আগমন কমেছে। পুঁজিবাজারে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স যত ভালো হবে, দুষ্টুলোকের আগমন তত কমবে। আমরা সে দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কমশিন কাজ করছে। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাজ থেকে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা না পেলেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মার্কেটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ খুবই প্রয়োজন। তার জন্য অর্থমন্ত্রী, অর্থ সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। পুঁজিবাজারে গেইমলিং হওয়ার বিষয়টি প্রায়ই শোনা যায়, এটার কারণ শুধুমাত্র প্রাইমারি আর সেকেন্ডারি মার্কেট নিয়ে চিন্তা করা। যদি বন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও মার্কেটে বিনিয়োগ করা হতো তাহলে এটা করার সম্ভব হতো না।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শুধুমাত্র সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ না করে আপনারা প্রাইমারি মার্কেটে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করুন।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা সুকুক বন্ড নিয়ে কাজ করছি। খুব দ্রুত এ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু এটা আমাদের বাজারে নতুন, তাই আইন কানুন সম্পর্কে সবাই অবহিত নয় এজন্য সময় লাগছে। সুকুক বন্ড নিয়ে মিডলইস্টে শিগগিরই সেমিনার করা হবে। প্রবাসীদের আকৃষ্ট করতে আমরা এটা করবো।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা মার্কেটকে একটি লক্ষের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য ইতি মধ্যে ৭ হাজার বন্ড অনুমোদন দিয়েছি। এগুলো মধ্যে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক। আমরা ভালো ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে কাজ করছি।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, মাত্র ৪ মাস হলো আমরা পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করছি। এটা বাজার ঠিক করার জন্য খুব অল্প সময়। যেভাবে আমরা কাজ করছি, তা ধারাবাহিক ভাবে করতে পারলে আগামী দুই বছরের মধ্যে মার্কেট একটা ভালো অবস্থানে যাবে। বলা যায় মার্কেটের চেহারা চেঞ্জ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, মার্কেট ভালো করার জন্য ভালো আইপিও নিয়েও কাজ করছে বর্তমান কমিশন। আইপিওর পুরনো ফাইল গুলো এক মাসের মধ্যে শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, যে আইপিওগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেগুলো আগে আবেদন করেছিলো। আমাদের সময়ের প্রথম আইপিওর জন্য আবেদন করেছে ব্যাংক। আমরা খুব দ্রুতই অনুমোদন দেয়ার চেষ্টা করবো। কারণ এটার অবস্থা খুব ভালো।

এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কনসাল্টেন্ট হোসেন সামাদ, সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমানসহ বিসিএসইসির কমিশনাররা।

পুঁজিবাজারে মিউচুয়্যাল ফান্ডের যে দূরবস্থা এর জন্য বিএসইসির দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ।

তিনি বলেন, মিউচুয়্যাল ফান্ডের সঠিক র‌্যাংকিং এবং তদারকি না করতে পারলে তাদের অবস্থা ভালো করা মুশকিল। এই জন্য বিএসইসিকে দায়িত্ব নিতে হবে।

মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আমাদের অর্থনীতিতে একটা ধাক্কা দিয়েছে। পুঁজিবাজারেও তার প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে মোবাইল ভিত্তিক প্লাটফর্মগুলো আরও ভালো করতে হবে। কারণ ইনভেস্টররা যাতে দ্রুত ও সহজে বিনিয়োগ করতে পারে। এটা হলে কোভিড-১৯ এর এই অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের অনেক সুবিধা হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সপ্তম-পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুসারে ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে আগামী ২১ বছর গড়ে ১০ শতাংশ হারে গ্রোথ করতে হবে। অর্থাৎ ৮ গুণ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। ম্যাজিক প্রবৃদ্ধি করে হবে। সেটার জন্য বাংলাদেশে উন্নত পুঁজিবাজার গঠন করতে হবে।

ওয়েল ফাউন্ডেশনের ক্যাপিটাল মার্কেট গঠন করতে হবে। তাতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন গঠনের পর বেশ কিছু ভালো কাজ করছে। এখানে বন্ড মার্কেট নেই। বর্তমানে বন্ড মার্টেক চালু হচ্ছে। বীমা কোম্পানিগুলো আনতে কমিশন কাজ করছে। কোম্পানিগুলোও আসছে। এই অবস্থায় পুঁজিবাজারে মোবাইল ভিত্তিক প্লাটফরমগুলো আরও ভালো করতে হবে।

১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধস দেখেছি। পুঁজিবাজারে এমন পরিস্থিত আর দেখতে চাই না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এলএ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!