• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অপচয় বন্ধ হলে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন নেই


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৫, ২০১৯, ০৯:৫৯ এএম
অপচয় বন্ধ হলে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন নেই

ঢাকা : বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) আবারো বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। তবে শুনানিতে অংশ নিয়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ দাবি করে রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, এই গণশুনানি ‘গণতামাশা’য় পরিণত হয়েছে।

তাদের মতে, বিদ্যুৎ খাতে বিদ্যমান অপচয় বন্ধ করা সম্ভব হলে মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজনই পড়বে না। এ ছাড়া বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হলে তা জনগণের ওপর বাড়তি বোঝা হয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করবে বলেও মনে করেন তারা।   

সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে টিসিবি অডিটোরিয়ামে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম এবং সদস্য মিজানুর রহমান, রহমান মুরশেদ, মাহমুদ উল হক ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে গণশুনানিতে বেশিরভাগ প্রশ্নই এড়িয়ে যাচ্ছেন কমিশন কর্মকর্তা, উৎপাদনকারী ও বিতরণকারীরা। শুনানিতে অংশ নেওয়া ভোক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে গিয়েই লোকসানে পড়েছে পিডিবি। কেন চাহিদার দ্বিগুণ উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি করা হলো? এমন প্রশ্নের উত্তরও এড়িয়ে গেছে কমিশন ও পিডিবি।

অন্যদিকে শুনানিতে বিতরণ প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের লোকসানের কোনো প্রমাণ দেখাতেও ব্যর্থ হয়েছে। মুনাফায় থাকা প্রতিষ্ঠান শুনানি করতে পারে কি না, কমিশনে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

শুনানিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিজিএমইএ) বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও সাংবাদিকরা একথা বলেন।

গণশুনানিতে কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, পাইকারি মূল্য বাড়ানো পাস থ্রু (পাইকারি পর্যায়ে মূল্য বাড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহক পর্যায়েও বাড়বে) হবে। এক্ষেত্রে মূল্য কমলেই পাস থ্রু হবে। অন্যদিকে, শুনানিতে ভোক্তাদের বক্তব্য শোনার চেয়ে বিতরণ কোম্পানির কথা শোনার দিকেই কমিশন (বিইআরসি) বেশি আগ্রহী বলে অভিযোগ করেছেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলমসহ অনেকেই।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ খাতে নানারকম অপচয় হচ্ছে। এ ছাড়া একটি বিশেষ কোম্পানির কাছ থেকে বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। অন্যদিকে, কম মূল্যের অন্য কোম্পানির বিদ্যুৎ না কেনায় সেসব কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্র মাসের পর মাস বসে থাকছে। এতে বিনিয়োগকারী ও সরকার দুই পক্ষেরই লোকসান হচ্ছে। এসব অপচয়ের বোঝা জনগণের ঘাড়ে চাপানো যাবে না।

ক্যাবের উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, প্রতিবার গণশুনানিতে আমরা কথা বলি। সেসব অভিমত নোট করা হয়। কিন্তু সেগুলোর কোনো বাস্তবায়ন দেখি না। কমিশন বরাবরই কোম্পানিগুলোর অভিমত তথা তাদের স্বার্থকেই গুরুত্ব দিয়ে মূল্য বাড়িয়েই দেয়। গত কয়েক বছরের শুনানির দিকে তাকালে আমরা তাই দেখতে পাই। সাধারণ মানুষকে শুনানিতে ডাকার কী দরকার বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

গণশুনানিকে ‘গণতামাশা’ আখ্যায়িত করে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এভাবে কোম্পানিগুলোর একক অভিমতের ভিত্তিতে বারবার মূল্যবৃদ্ধির কোনো যুক্তি নেই। কমিশনকে ভোক্তাদের অভিমত শোনা ও ভোক্তাদের স্বার্থ দেখার অনুরোধ জানান তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বিদ্যুৎ খাতে যে পরিমাণ অপচয় হচ্ছে, এসব অপচয় বন্ধ করা গেলে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রয়োজনই হবে না। মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে অপচয় বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের হয়রানি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বৃদ্ধি পাবে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বৃহস্পতিবার শুনানিতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ২৩ দশমিক ২৭ ভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপরীতে কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।  জানা গেছে, আজ বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এবং ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) গ্রাহক পর্যায়ের মূল্যহার পরিবর্তনের ওপর গণশুনানি হবে।

ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫৮ কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করলে জানুয়ারিতে একসঙ্গে দুই সিটির সব বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ডিপিডিসি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!