• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অফিস শুরুর আগে গুদামে চাল, সাংবাদিকের পা ধরলেন কর্মকর্তা


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি নভেম্বর ২৬, ২০১৯, ০৯:৫০ পিএম
অফিস শুরুর আগে গুদামে চাল, সাংবাদিকের পা ধরলেন কর্মকর্তা

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের উলিপুরে জনতা ৯৯৯-এ ফোন করে ট্রলি বোঝাই নিম্নমানের চাল সরকারি খাদ্য গুদামে ঢুকানোর সময় ধরিয়ে দিল পুলিশকে। অফিস শুরুর নির্ধারিত সময়ের পূর্বে মালিকবিহীন চাল গুদামে ঢুকানোর সময় স্থানীয় জনতার সন্দেহ হলে তা আটক করেন।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে ঘটনাটি ঘটেছে। এ সময় জনৈক এক সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ না করার জন্য তার হাত-পা ধরে অনুরোধ করেন। 

জানা গেছে, উলিপুর সরকারি খাদ্য গুদামে মঙ্গলবার সকালে ২০১৬, ১৭ ও ১৮ সালের খাদ্য অধিদপ্তরের সীল মোহর যুক্ত চাল ভর্তি বস্তার তিনটি ট্রলি বোঝাই চাল গুদামে প্রবেশ করে। ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গুদামের শ্রমিকরা তরিঘরি করে নিম্নমানের চাল গুদামে ভিতরে ঢুকাতে থাকেন। অফিস শুরুর নির্ধারিত সময়ের পূর্বে লোক চক্ষুর আড়ালে এভাবে চাল ঢুকানোর দৃশ্য দেখে স্থানীয় জনতার সন্দেহ হলে ৯৯৯ এ ফোন করেন। এরপর উলিপুর থানার এসআই মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে গুদাম কর্মকর্তাসহ চালের মালিক সটকে পড়েন। 

ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অফিস শুরু হওয়ার পূর্বে এভাবে সরকারি গুদামে কেন নিম্নমানের চাল তোলা হচ্ছে তা শ্রমিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা সদুত্তর দিতে পারেননি। এ সময় সেখান থেকে ৩০ কেজি ওজনের ৭৪ বস্তা চালসহ একটি ট্রলি আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।  

খাদ্য ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম উলিপুর খাদ্য গুদামে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ না করে একটি রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করেন। 

এছাড়াও মিল মালিকদের কাছ থেকে ছাটাইকৃত চাল না কিনে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত চাল কাগজে কলমে ক্রয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। তার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে এক উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্তে তার অনিয়ম প্রমাণ হলে ওই কমিটি প্রতিবেদন দিলে তাকে বদলীর নির্দেশ দেন। এরপর গত ১৬ অক্টোবর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাকে বদলী করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে যোগদানের নির্দেশ দেন। একই সময় আমজাদ হোসেনকে উলিপুর খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হলে তিনি যোগদান করেন। এ সময় খাদ্য গুদামে চালের মজুদের হিসাবের গড়মিল থাকায় বিপাকে পড়েন মনোয়ারুল ইসলাম। এ কারণে ওই কর্মকর্তা দায়িত্ব বুঝে না দিয়ে বদলীর আদেশ ঠেকাতে বিভিন্ন ভাবে তৎপরতা শুরু করেন।

বদলী হওয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম জানান, দায়িত্বে থাকাকালীন মিলারদের কাছে গুদামের পাওনা চালগুলো তোলা হচ্ছিল। অফিস শুরু হওয়ার পূর্বে চাল তোলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা, সে কারণে গুদামের মজুদ ঠিক করছিলাম। সদ্য যোগদানকৃত ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, আজ দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার কথা, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হেমন্ত বর্মনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাকে এ বিষয়ে একাধিকবার প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি কুড়িগ্রামে আছি আগামীকাল এসে সাক্ষাতে কথা বলবো। 

উলিপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ৯৯৯ থেকে ফোন আসায় সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। গুদামের ভিতরে থেকে মালিক বিহীন ট্রলি বোঝাই চাল জব্দ করে আনা হয়েছে। চালের প্রকৃত মালিকের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি তদন্ত করে তাকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!