• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবরুদ্ধ জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি, সম্পাদক


জবি সংবাদদাতা ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯, ১১:২০ পিএম
অবরুদ্ধ জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি, সম্পাদক

জবি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম তূর্য ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদে প্রায় আড়াই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক মন্ডলীর নেতৃত্বে শাতাধিক নেতা কর্মী। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানে ভাটা পরে এবং ক্যাম্পাস জুড়ে উত্তাল পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বেশ কিছু কর্মী নিয়ে ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদ কক্ষে প্রবেশ করলে তাদের তালা বদ্ধ করে দেয় বিদ্রোহী নেতা কর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তরিকুল রাসেলের কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করার পর তারা তাদের অনুসারীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে  শোডাউন দেয়। স্থগিত কমিটির সোডাউনে ক্ষিপ্ত হয় শাখা ছাত্রলগের একটি গ্রুপ। পরে দুপুর দেড়টার দিকে তরিকুল রাসেল তাদের অনুসারীদের নিয়ে ছাত্র সংসদে গেলে ছাত্র সংসদের নিচে অবস্থান নেয় বিদ্রোহী ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। পরে প্রায় দুইটার দিকে ছাত্রসংসদ ভবনের কেচি গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিদ্রোহীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. নুর মোহাম্মদ ও কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান পুলিশ ফোর্সকে সাথে নিয়ে তালা ভেঙ্গে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকে উদ্ধার করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, অবস্থানরত অবস্থায় বিদ্রোহী ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা ‘তরিকুল রাসেল কমটি মানি না’ , ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী কমিটি মানি না’ ‘বিবাহিত কমিটি মানি না’ ‘চাঁদাবাজের কমিটি মানি না’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের অনুরোধে বিদ্রোহীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে দিলে ক্যাম্পাস থেকে বেড়িয়ে যায় তরিকুল রাসেল।

এ বিষয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বলেন, এখানে ছাত্রলীগের যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করে তারাই আজ ক্যাম্পাসে স্থগিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপরে ক্ষিপ্ত হয়েছে। যেখানে কমিটির সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, সেখানে তারা ক্যাম্পাসে সোডাউন দিয়ে ছাত্র সংসদ কেন্দ্রে প্রবেশ করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়। তাদের তালা বদ্ধ করে রাখে।

তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি জবির এই কমিটি স্থগিত করেছে। তারা তাদের আদেশ অমান্য করে ক্যাম্পাসে এসে ফের সোডাউন দিয়ে ছাত্র সংসদে বসেছে। তারা ক্যাম্পাসে আসবে কিন্তু তারা কমিটির অন্যান্যদের সাথে নিয়ে আসবে না, এটা হয় না। এমন কমিটি পুনর্বহাল না করে ভেঙ্গে দিয়ে, নতুন কমিটির মাধ্যমে জবি ছাত্রলীগের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

স্থগিত কমটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাকিল বলেন,  এই কমিটি আসার পর থেকে প্রায় প্রতি দিনই মারামারি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আমরা এর পরিত্রান চাই। তিনি আরো বলেন, উত্তীর্ণ কমিটির পূর্ণ বহাল হলে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগের নাম বিক্রি করে মাদক ব্যবসা, ইয়াবা ব্যবসা আগে কখনও ছিল না। এগুলো ক্যম্পাসে এখন হরহামেশায় হয়। আমারা এর প্রতিবাদে নেমেছি। আশপাশের এলাকায় নানা অপকর্ম হচ্ছে প্রতি দিনই। আমরা এগুলো আর হতে দিব না। স্থগিত কমিটির ছত্রছায়ায় অনেকেই ক্যাম্পাসের আশেপাশে নানা চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্ম করে এগুলোর  প্রতিবাদ করতেই আমরা ক্যাম্পাসে।

এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা মিছিল দেয় কমিটি বিলুপ্তের দাবী করা ছাত্রলীগ কর্মীরা। এসময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ তাদের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের যে কক্ষটি তাদের অফিস হিসাবে ব্যাবহার করছেন তাতে আশ্রয় নেন। এসময় এই ভবনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও  ও পুলিশ এসে তালা ভেঙ্গে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও তাদের কর্মীদের উদ্ধার করেন। এরপর তারা ক্যাম্পাস থেকে চলে যান।

এ বিষয়ে স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাকিল বলেন, কেন্দ্র থেকে জবি শাখার সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ থাকলেও আজ জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে শোডাউন দেন। আমরা যারা সাধারণ ছাত্রলীগ কর্মী আছি তারা শুধু এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। তারা কেন্দ্রের আদেশ অমান্য করতে পারেন না।

এ বিষয়ে স্থগিত জবি ছাত্রলীগের সহ সভাপতি জামালউদ্দিন বলেন, "ছাত্রলীগের পদ অপব্যবহার করে তরিকুল- রাসেল নিজের স্বার্থ  হাসিলের জন্য সব ধরনের অনৈতিক কাজ করছে। তার প্রতিবাদ আজকের এই গণ জোয়ার।

যুগ্ম সাধাণ সম্পাদক হোসেন মোবারক রিসাত বলেন, এই কমিটি জগন্নাথবিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যর্থ কমিটি। মেয়াদ পার হয়ে গেলেও তারা এখন পূর্নাঙ্গ কমিটি করতে পারে নাই । এই ব্যর্থ কমিটি র্পুণবহাল হোক এটা আমরা চাই না।

সহ সভাপতি আল আমিন শেখ বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ এই কমিটি আসার পর থেকে প্রায় প্রতি দিনই মারামারি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।আমরা এর থেকে পরিত্রান চাই ।তিনি আরো বলেন উওীর্ণ কমিটির পূর্ণ বহাল হলে ক্যম্পাসের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।

এছাড়াও বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ইব্রাহীম ফরাজী, সৈয়দ শাকিল, আকিব বীন বারী, আফসার,আকতার হোসেনসহ আরো অনেকেই।

এদিকে জবি ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা  হলে ও তারা ফোন ধরেন নাই ।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ও তরিকুল রাসেল কমিটির বিভিন্ন অপকর্ম তদন্তের দায়িত্বে থাকা আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, তাদের সকল কার্যক্রম স্থগিত করার পর তারা ক্যাম্পাসে শোডাউন দিয়ে ছাত্র সংসদে প্রবেশ করা ঠিক করে নাই। তাছাড়া আমরা  তাদের কে  ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ভাবে যাবারমত এমন কোন কথা ও বলি নাই । আমাদের তদন্তের কাজ এখনও চলছে। আমরা আজকের ঘটনাটি নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলবো।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদ গোলাম রোব্বানীকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করলে তারা ফোন ধরে নাই।   

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!