• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অবহেলায় শাস্তি হয় না


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ১৪, ২০১৯, ০১:০০ এএম
অবহেলায় শাস্তি হয় না

ঢাকা : সাহানা (ছদ্মনাম) নামের এক কিশোরী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় গৃহশিক্ষকের ধর্ষণের শিকার হয়। শুরুতে ভয় দেখিয়ে তাকে চুপ করিয়ে রাখে ধর্ষক। এরপর সাহানা তার বোনকে ঘটনাটি জানালে জেনে যায় পরিবার। তার বাবা ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।

কিন্তু, সময়মতো মেডিক্যাল পরীক্ষা না হওয়ায় গৃহশিক্ষককে বিচারের মুখোমুখি করার আইন লড়াইয়ে বেশিদূর এগুতে পারেননি তারা। তাছাড়া মেয়েকে নিয়ে আদালতে যাতায়াতে হেনস্তাসহ নানাবিধ কারণে আইনজীবীর পরামর্শে মামলাটি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে ধর্ষণের মতো ভয়াবহ নারী নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার পরিণতির একটিমাত্র উদাহরণ এটি। এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে সারাদেশে। মানবাধিকারকর্মী ও চিকিৎসকরা বলছেন, ধর্ষণ ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল পরীক্ষা এবং মামলার ক্ষেত্রে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে না এগুনোর কারণে অনেক মামলা দুর্বল হয়ে যায় এবং সব বুঝেও তখন আর কিছু করার থাকে না।

বাংলাদেশে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং শাস্তির সংখ্যা কম। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় ধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে যায়। গত দুইবছরের বেশি সময়ের কয়েকটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ধর্ষণের ঘটনার ফলোআপ করতে গিয়ে দেখা গেছে, মামলায় আসামি জামিনে, মামলা উঠিয়ে নিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে সংসার করছেন ভিকটিম, মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতির খোঁজও রাখেন না বাদী। আইনজীবীরা বলছেন, ঘটনার পর আপসরফায় সময় চলে যাওয়া ডাক্তারি পরীক্ষায় দেরি হওয়ায় মূল অপরাধ প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

তারা বলছেন, সাধারণত বিচারের সময় ধর্ষণের শিকার যিনি তাকেই প্রমাণ করতে হয় তার ওপর সংঘটিত অপরাধ। এর বিপরীতে এখন সময় এসেছে ধর্ষককে প্রমাণ করতে হোক সে ধর্ষণ করেনি। তাহলে বিচার চাওয়ার এবং প্রক্রিয়াটা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ টিকে থাকবে।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংসদে জানান, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণসংক্রান্ত ১৭ হাজার ২৮৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ভিকটিমের সংখ্যা ১৭ হাজার ৩৮৯ জন। এ সময় ৩ হাজার ৪৩০টি ধর্ষণ মামলার বিচার শেষ হয়েছে। নিষ্পত্তি হওয়া মামলায় ১৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ৮০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫৭৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাসহ ৬৭৩ জনকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০১৮ সালে সারা দেশে ৯৪২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৬৯৭ জন, গণধর্ষণের শিকার ১৮২ জন, ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ৬৩ জন।

মহিলা আইনজীবী সমিতির এক জরিপের বরাত দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, নানা কারণে ধর্ষণ মামলার ৯৭ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে যায়। প্রভাবশালীরা ভিকটিম বা তার পরিবারের সঙ্গে প্রভাব খাটিয়ে অথবা ভয় দেখিয়ে যে কোনও প্রকারে সমঝোতা করে নেয়। অনেক মামলা আদালত পর্যন্তও যায় না। আমরা সবই জানি কিন্তু তারপরও এই প্রক্রিয়া চলমান। ফলে অপরাধীরা বারবার অপরাধ করছে।
মামলা দুর্বল হয় কেন?

যে সব ধর্ষণের ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে না সেসব ক্ষেত্রে ভিকটিম সময়মতো মেডিক্যাল পরীক্ষা না করানোর কারণে মামলা করলেও ধর্ষণ যে ঘটেছে তা প্রমাণ কঠিন হয়ে পড়ে। আইনজীবীরা বলছেন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার বলছেন তদন্ত ও মামলা পরিচালনায় গাফিলতি বা অবহেলার কারণে মামলাগুলো ঝুলে যায়।
আইনি লড়াইয়ের জন্য এই সার্টিফিকেটটা খুবই দরকার উল্লেখ করে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর ডাক্তার বিলকিস বেগম বলেন, শারীরিক পরীক্ষা যথাসময়ে না হলে ধর্ষণ প্রমাণ করা যায় না। ঘটনা ঘটার পরে মামলা করবো কিনা, সমঝোতার যেসব প্রস্তাব আসে সেগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করতেই সেই সময়টা পার করে দেয়। ফলে পরবর্তীতে মামলা এমনিতেই দুর্বল।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবীর সদস্য অ্যাডভোকেট দিলরুবা শারমীন বলেন, বিচারের জন্য যা যা আলামত ও সাক্ষ্য প্রয়োজন সেটি দুর্বল করে দেওয়ার কাজটি শুরু থেকেই করা হয়। ধর্ষণের মামলায় বিচারের হার থাকলেও শাস্তির হার একেবারেই কম। নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে যখন জবানবন্দি দেন তারপর আর অন্য কারও সাক্ষী কেন লাগবে এই প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!