• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবহেলিত দুই কোটি মানুষ এখন ব্যাংক হিসাবধারী


অর্থনৈতিক প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮, ১০:৩৬ পিএম
অবহেলিত দুই কোটি মানুষ এখন ব্যাংক হিসাবধারী

ঢাকা : দেশের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর প্রায় দুইকোটি মানুষ এখন ব্যাংক হিসাবধারী। ১০ বছর আগে সমাজের অবহেলিত এই মানুষেরা ছিলেন আর্থিক সেবার বাইরে। এখন ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব খুলতে পারছেন হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও কর্মজীবী পথশিশু এমনকি ভিক্ষুকও। তাদের মধ্যে অতি দরিদ্র রয়েছেন ২৫ লাখ ২৮ হাজার। ছিন্নমূল ও কর্মজীবী পথশিশু রয়েছে চার হাজার ৭৯৪। কৃষক রয়েছেন ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরা করা হয়েছে।  

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫০ হাজার ৫৩৬ জন মানুষ এখন ব্যাংকে লেনদেন করছেন। এর বাইরে মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করছে পিছিয়ে পড়া আরও প্রায় একটি কোটি মানুষ।

আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তি’ কার্যক্রম সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে বড় ভ‚মিকা রেখেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে পিছিয়ে পড়া সমাজের সুবিধাবঞ্চিতরাও আমাদের মতোই মানুষ। আমি যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছিলাম, তখন উদ্যোগ নিলাম পিছিয়ে পড়া সেই সব মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা, যাতে ঘরে ঘরে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আসে সেই জন্যই হাতে নেওয়া হয়েছিল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম। আজ এই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশের সহায়ক শক্তি হিসেবে নিয়ামকের ভ‚মিকা পালন করছে।’

তার মতে, মানবিক ব্যাংকিং ছাড়াও এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিস্তার দেশজুড়ে আর্থিক লেনদেনকে সহজতর করেছে। গ্রামীণ অর্থনীতির ধরনটাই বদলে দিয়েছে। সাধারণ গরিব মানুষজনের বেশিরভাগই এখন ব্যাংকে টাকা রাখছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন কৃষক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতাভোগী, ক্ষুদ্র জীবনবীমা পলিসিগ্রহীতা, অতিদরিদ্র উপকারভোগী, অতিদরিদ্র মহিলা উপকারভোগী, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির সুবিধাভোগী, মুক্তিযোদ্ধা, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুঃস্থ পুনর্বাসনের অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা।

এছাড়া, রয়েছেন ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিক, চামড়া ও পাদুকাশিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিক, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ পুনর্বাসনের অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, স্কুলের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী পথশিশু-কিশোর, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে অনুদানপ্রাপ্ত দুস্থ ব্যক্তি, আইলাদুর্গত ব্যক্তি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেবা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে ১০ টাকা, ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকা জমাকরণের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব খোলা যাচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে কৃষকসহ আর্থিক সেবা প্রত্যাশী জনগোষ্ঠীর জন্য এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। এসব হিসাব সচল রাখতে ২০১৫ সালে ২০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল করা হয়েছে। যেখান থেকে মাত্র সাড়ে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকের এইসব গ্রাহককে কোনও  চার্জ বা ফি দিতে হয় না। এসব গ্রাহকের হিসাবে ন্যূনতম স্থিতি রাখারও কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কৃষকদের ১০ টাকায় খোলা হিসাবের সংখ্যা ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৬টি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় হিসাব খোলা হয়েছে ৪৯ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৩টি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে কৃষকের ব্যাংক হিসাব ছিল ৯১ লাখ ৯১ হাজার। অর্থাৎ একবছরে কৃষকের হিসাব সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৭৪ হাজার। এক বছরে বৃদ্ধির হার ৮.৪২ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী,  ১০ টাকার হিসাবধারীদের মধ্যে ৬০ হাজার ৫৫৫ জন ব্যক্তি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে কৃষক রয়েছেন ৪০ হাজার ৪৭৭ জন। তাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল হতে ৯১ কোটি ৯৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে খোলা বিশেষ হিসাবের মধ্যে ৫৩ শতাংশ হিসাব কৃষকদের। কৃষকদের হিসাবে জমা রয়েছে ২৯৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

গ্রামাঞ্চলে অতিদরিদ্র মানুষের জীবনযাপনে সহায়তা ও আপদকালীন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মাধ্যমে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এদের দৈনিক ভিত্তিতে ২০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। এই শ্রেণির ৪৯ লাখ ৫১ হাজার জনের ব্যাংকে জমা হয়েছে ৫১৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

২ লাখ ৩ হাজার ৪৪১ জন মুক্তিযোদ্ধার অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে ২১৪ কোটি টাকা। তৈরি পোশাকশিল্পের ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬৬৩ শ্রমিক জমা রেখেছেন ১৩২ কোটি টাকা। ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৮৬ জন প্রতিবন্ধী জমা করেছেন ২৩ কোটি। এ ছাড়া ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় ৪৪ হাজার ৩৬ জন জমা রেখেছেন ১০৮ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র জীবনবীমা কর্মসূচি গ্রহীতারা ১৭ কোটি টাকা, এলএসবিপিসি কারিগররা ২ কোটি ২২ লাখ টাকা, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ৬৫ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে কাজ করছে সরকারি ৮ ব্যাংক। এগুলো হচ্ছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!