• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অবুঝ তোবা মায়ের কফিনের সাথে বসেই খুঁজছে মাকে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২২, ২০১৯, ১০:৪৭ এএম
অবুঝ তোবা মায়ের কফিনের সাথে বসেই খুঁজছে মাকে

ঢাকা : মায়ের ফিরে আসার অপেক্ষার পর কান্নাকাটি করেই ঘুমিয়ে পড়ে চার বছরের তাসনিম তোবা। রোববার রাতে ঘুমাতে যাবার আগেও মা আসে না কেন বার বার জিজ্ঞাসা করছে তোবা। ফের কান্না। এর আগে দুপুরে স্বজনরা যখন মা তাসলিমা বেগম রেনুর (৪০) লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে রওনা হন, তখনো তোবা খুঁজছে মাকে। বায়না ধরে মায়ের সঙ্গে গাড়িতে যাবে। অবুঝ তোবা তখনো জানে না তার মা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।

গত শনিবার (২০ জুলাই) সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তোবাকে ভর্তি করার খোঁজ নিতে গেলে স্কুলের সামনেই ছেলেধরা সন্দেহে রেনুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রেনুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু।’

স্বজনরা জানান, শনিবার মহাখালীতে ভাগনে নাসিরউদ্দিন টিটুর বাসায় মেয়েকে রেখে বাইরে বের হন রেনু। মেয়েকে বলে যান আসার সময় আম নিয়ে আসবেন। কিন্তু আর ফেরা হলো না।

বোনজামাই বদিউজ্জামান বলেন, ‘রেনু আপা আড়ংয়ে চাকরি করতেন। বিয়ের পর তার স্বামী চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে। টিউশনি করে তার সংসার চলত। যে স্কুলের সামনে তাকে মারা হয়েছে ওই স্কুলেই একসময় তার বড় ছেলে মাহিব পড়ত।’ 

তিনি বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে তার মতো আর কাউকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে না হয়।’

মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটের একটি ভাড়া বাসায় চার বছরের মেয়ে তোবাকে নিয়ে থাকতেন রেনু। স্বামী তসলিম হোসেনের (৪৫) সঙ্গে দুই বছর আগে বিচ্ছেদ ঘটে। বড় ছেলে তাহসিন আল মাহিব (১১) আগে মায়ের সঙ্গে থাকলেও এক বছর আগে লক্ষ্মীপুরে বাবার কাছে চলে যায়।

গতকাল সকালে মহাখালীর ৩৩/৩ জিপি ওয়্যারলেস গেটের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায় দরজায় তালা ঝুলছে। পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকতেন রেনু। 

পাশের ফ্ল্যাটের একাধিক বাসিন্দা জানান, ‘বছর দুই আগে বাসাটি ভাড়া নেন রেনু। প্রথমদিকে দুই সন্তান নিয়ে থাকলেও এক বছর ধরে তোবাকে নিয়ে থাকেন। সংসার চালাতে করতেন টিউশনি। আশপাশের অনেক শিশুই বাসায় পড়তে আসত।’ তিনি বলেন, ‘রেনু মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত ছিল। তবে তার খারাপ কিছু কখনো চোখে পড়েনি।’

ভাগনে টিটু বলেন, ‘তোবাকে আমার বাসায় রেখে খালা ওই স্কুলে যান। অবুঝ তোবা এখনো বুঝতে পারেনি তার মা মারা গেছেন। শনিবার দিনভর সে মায়ের জন্য কান্না করে। আজ (গতকাল) ঘুম থেকে উঠলে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলি। কিন্তু সে বলে, “আম্মুর সঙ্গে যাব”।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘খালা মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। এ কারণেই হয়তো তিনি বাড্ডার ওই স্কুলে যান।’

এদিকে এ ঘটনায় শনিবার রাতেই বাড্ডা থানায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাগনে টিটু। তবে গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। 

মামলার এজাহারে বলা হয়, তাসলিমা বেগম রেনু মেয়েকে ভর্তি করার জন্য ওই স্কুলে যান। তার আচরণ অস্বাভাবিক ছিল এজন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার সঙ্গে কথা বলার জন্য নিজ কক্ষে নিয়ে যান। এ সময় প্রধান শিক্ষকের কক্ষের বাইরে অনেক অভিভাবক ও উৎসুক জনতা হইচই শুরু করেন। একপর্যায়ে কিছু অভিভাবক ও বাইরে থেকে আসা উৎসুক জনতা কক্ষের দরজা ভেঙে রেনুকে ‘ছেলেধরা’ বলে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসে এবং মারধর করতে থাকে। গণপিটুনিতে তিনি মারা যান।

বাড্ডা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার সময়কার কিছু ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!