• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিনেত্রীর ঘরে খাবার নেই, করোনায় বন্ধ ভিক্ষার দরজাও


বিনোদন ডেস্ক  এপ্রিল ১২, ২০২০, ০১:৪৫ এএম
অভিনেত্রীর ঘরে খাবার নেই, করোনায় বন্ধ ভিক্ষার দরজাও

বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশের অভিনেত্রী বিলকিস বারী বামে তার মেয়ে ভুলু বারী

ঢাকা :১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম সবাক বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তি পায়।  এর পেছনে একটা কারণ ছিল দেশ বিভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানের চলচ্চিত্র প্রযোজক এফ দোসানির পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ হয়ে আবদুল জব্বার খান ‘মুখ ও মুখোশ’ চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্যোগী হন।  সেই সময় সিনেমাটি দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়ায়। স্বাভাবিক কারণে এই সিনেমার প্রযোজক, নির্মাতার পাশাপাশি শিল্পীদের ভূমিকাও প্রশংসার দাবিদার। বিংশ শতাব্দীতে এসে দেশের প্রথম সবাক সিনেমার শিল্পী ও তার পরিবারের অবস্থা রাজকীয় হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তব চিত্র তা নয়!

ভীষণ অভাব-অনটন আর আনাদরে দিন পার করেছেন বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশের অভিনেত্রী বিলকিস বারী।  জীবনের শেষের দিনগুলোতে সংসার চালাতে তাকে হাত পাততে হয়েছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয়ের পর ‘শ্রাবন মেঘের দিনে’, ‘এখন অনেক রাত’সহ প্রায় চার শ’র অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে অভিনেত্রী ভুলু বারীরও জীবন কাটছে মানুষের কাছে হাত পেতে।

নয় বছর বয়স যখন, তখন প্রথম ‘ডাকবাবু’ সিনেমায় নাচের শিল্পী হয়ে কাজ করেন। জহির রায়হানের ‘সংসার’ সিনেমায়ও নাচের শিল্পী ছিলেন। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘রহিম রুব্বান’ সহ অসংখ্য সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন ভুলু বারী৷ বেশ ভালোই চলছিল তার। চলচ্চিত্রের পড়ন্ত বিকেলে সিনেমা নির্মাণ তলানিতে ঠেকেছে। কাজের জন্য খুব বেশি ডাক পেতেন না ভুলু বারী। এদিকে পেট চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। প্রথমে পরিচিত জনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে কোনো রকম পেট চালাতেন। এভাবে আর কতদিন! একদিকে বয়সের ভার, অন্যদিকে সিনেমায় ডাক একদমই না পাওয়ায় নামতে হয় ভিক্ষায়। চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী বলে লোক-লজ্জার ভয়ে রাস্তা-ঘাটে হাত পাতেন না। এফডিসির ভেতরে প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পীদের কাছে হাত পেতে কোনো রকম পেট চালাচ্ছেন তিনি।

সকাল হলেই তিনি চলে আসেন বিএফডিসিতে। পরিচিতদের কাছে টাকা চেয়েই বাড়ি ভাড়া ও পরিবারের খরচ জোগাড় করেন। ৬০ বছর বয়েসি ভুলু আর কতদিনই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন। সারাক্ষণ তাকে তাড়া করে ফেরে নানা রকম শঙ্কা। শেষ বয়সে এসে কিছুদিন একটুখানি ভালো থাকতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু কে দাঁড়াবে তার পাশে?

এদিকে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস। এফডিসির সকল কার্যক্রম বন্ধ। জনমানবহীন, নীরব-নিস্তব্ধ এফডিসি। স্বাভাবিক কারণে ভুলু বারীর ভিক্ষা করার দরজাও এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

দুর্যোগময় এই অবস্থায় কেমন আছেন ভুলু বারী? তা জানতে এই প্রতিবেদক কথা বলেন তার সঙ্গে। ভুলু বারী বলেন, ‘আজ ২৭ দিন ঘর থেকে বের হই না। মাঝে জায়েদ খান খবর দিয়ে এফডিসিতে ডেকেছিলেন। ২০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে গিয়ে চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্য নিয়ে আসি। এতে আর কতদিন চলে? এর ফাঁকে পাড়ার ছেলেরা ত্রাণ দিয়ে গিয়েছিল, এগুলো দিয়ে চলেছি। এখন বাসায় খাবার নেই। কীভাবে কি হবে বুঝতেছি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সিনেমায় কাজ করার কথা ছিল। করোনার কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। এই কাজটার জন্য অপেক্ষা করছি।’

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্যও ছিলেন ভুলু বারী। অর্থের অভাবে চাঁদা পরিশোধ করতে না পারায় অনেক আগেই সদস্যপদ হারান। তারপরও শিল্পী সমিতির সহযোগিতায় সন্তুষ্ট তিনি।

ভুলু বারী বলেন, ‘আমার মা খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করেছে। মানুষের কাছে ভিক্ষা করে টাকা নিয়ে আইসা আমাদের বড় করছে।  শেষ জীবনে সে ভিক্ষা করেই ২০০৩ সালে মারা গেছে।’

এফডিসি থেকে কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ খোঁজ খবর নিচ্ছে না। আমি এখন একা বাসায় খুব বিপদে পড়ে গেছি।’

রুপালি আলোর ঝলকানির আড়ালে অন্ধকারে নিমজ্জিত আছেন ভুলু বারীর মতো অনেকে। বিশ্বব্যাপী করোনা দুর্যোগে আশায় বুক বেঁধে আছেন, হয়তো কেউ একজন এসে খোঁজ নেবে তাদের।

এফডিসিতে যতটুকু সহযোগিতা দৃশ্যমান তা শুধু সংগঠন কেন্দ্রীক। সংগঠনের বাইরে থাকা অসচ্ছলরা বঞ্চিত এসব সহযোগিতা থেকে। ভোট আর রাজনীতির বাইরে থেকে অসচ্ছল কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াবেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা এমনটাই প্রত্যাশা চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!