• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
তালিকা ও বিক্রিতে বিস্তর ফারাক

অভিযানে সুফল মিলছে না


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১০, ২০১৯, ০২:২২ পিএম
অভিযানে সুফল মিলছে না

ঢাকা : বাজারে টাঙানো চার্টে সরকার নির্ধারিত বেগুনের মূল্য ৪৮ টাকা। অথচ বিক্রেতারা যার কাছে যত ইচ্ছা বিক্রি করছেন। আবার কেউ এক কেজি বেগুন ৭০ টাকাও বিক্রি করছেন। বিক্রেতাদের এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার বনলতা কাঁচাবাজারে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আদালতের নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে শুরু হওয়া ওই অভিযানের প্রথমেই ম্যাজিস্ট্রেট যান একটি সবজির দোকানে। সেখানে গিয়ে দেখেন কৃষি বিপণন অধিদফতরের নির্ধারিত পণ্যের চার্ট। সেখানে বেগুনের দাম ৪৮ টাকা কেজি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বিক্রেতারা যে যার ইচ্ছামতো দাম ধরছেন।

কাঁচাবাজারের হাবিবের দোকানে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পান একজন ক্রেতা ৭০ টাকা কেজিতে তার কাছ থেকে বেগুন কিনেছেন। সঙ্গে সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ওই ব্যবসায়ীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এরপর অভিযান চলে একটি খেজুরের দোকানে। দোকানের মালিক ইউসুফ। তিনি যে খেজুর বিক্রি করছিলেন তার বক্সে কোনো মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ছিল না। তাই ম্যাজিস্ট্রেট তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

বাজারের বেশ কয়েকটি গরুর মাংসের দোকানেও অভিযান চালানো হয়। তবে কোথাও ৫২৫ টাকার বেশি দামে মাংস বিক্রির প্রমাণ মেলেনি।

এরপর অভিযান চালানো হয় নিউ সুপার মার্কেটের জি-ব্লকের মেসার্স আল্লাহর দান স্টোরে। অভিযানে দেখা যায়, দোকানে বিক্রির উদ্দেশে মজুদ থাকা বিভিন্ন ফ্লেভারের খাবারের রংগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। চলতি বছরের এপ্রিলে এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানের বিষয়ে মাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সরকার নির্ধারিত মূল্যে ক্রেতারা পণ্য পাচ্ছে কি না সেগুলো নিশ্চিত করতে। অভিযানে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে তাদের জরিমানা করা হয়। ভোক্তাকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য নিশ্চিত করতে এ অভিযান চলবে। যারা ক্রেতাদের ঠকাবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি চাই নগরবাসী আমাদের এ কাজে সহযোগিতা করুক। কারো কাছে এ ধরনের অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের তথ্য থাকলে তা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করছি।’

এদিকে চাহিদার তুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অনেক বেশি মজুদ রয়েছে। তাই রোজায় পণ্যের দাম বাড়বে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন আশ্বাসের পরও স্বস্তি মেলেনি সাধারণ মানুষের জীবনে। সবকিছু ছাপিয়ে সাধারণ নাগরিকদের জন্য উদ্বেগ হয়ে দেখা দিয়েছে রোজায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে মিলেছে এমন চিত্রই।

বাজার ঘুরে জানা যায়, মূলত রোজা শুরু হওয়ার আগে থেকে বেড়ে গেছে বেশির ভাগ পণ্যের বাজারদর। আর রোজা শুরুর পর গত দুদিনেও কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে নতুন করে। রোজায় বাজারদর স্থিতিশীল রাখার জন্য পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিশেষ তদারকি দলসহ জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করলেও ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না। প্রায় সব সবজির দামই এখন আকাশছোঁয়া। কিছু সবজির কেজি ছুঁয়েছে ১০০ টাকা, বাকিগুলোর বেশির ভাগই কেজিপ্রতি ৬০-৮০ টাকা।

প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭৫ টাকায়, যা কয়েক দিন আগেও ছিল ১৫৫ টাকা। বেড়েছে দেশি ও অন্যান্য মুরগির দামও। গত এক মাসে গরুর মাংসের দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকা বেড়ে এখন কেজিপ্রতি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ। খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামও বেড়েছে। বেড়ে গেছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, বিভিন্ন ধরনের ডাল ও মসলার দামও।

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে এখন দেশি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪৫ টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২২ থেকে ৩৫ টাকা, দেশি রসুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১০০ থেকে ১১৫ টাকা, ছোলা ৭৫ থেকে ৯০ টাকা, ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১০০ থেকে ১১২ টাকা, প্যাকেট আটা ৩৪ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু রোজা শুরু হওয়ার সপ্তাহখানকে আগেও দেশি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ২০ থেকে ২২ টাকা, দেশি রসুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, আমদানি করা রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ছোলা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৯৫ থেকে ১০৩ টাকা, প্যাকেটজাত আটা ৩২ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হয়।

এছাড়া টিসিবির হিসেবে গত দেড় মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ ২২ দশমিক ২২ শতাংশ, রসুন ২০ শতাংশ, ছোলা ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ, প্যাকেট আটা ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ দাম বেড়েছে। এছাড়া গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।

সকালে মুদি দোকান থেকে বিভিন্ন পণ্য ক্রয়কারী কারওয়ান বাজারের বাসিন্দা নাজিবুল হক জানান, রোজায় খাদ্য ও ভোগ্য নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে সাধারণ নাগরিকদের বেশির ভাগেরই হাঁসফাঁস পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ব্যবসায়ীরা এখন রমজানের আগেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এ কারণে রমজানের প্রায় সপ্তাহ বাকি থাকতেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। যাতে রমজানের সময় এটা নিয়ে ভোক্তারা নতুন করে বলতে না পারেন।

আর বিক্রেতাদের দাবি, খাদ্যপণ্য ও নিত্যপণ্যের এই মূল্যবৃদ্ধি শুধু রাজধানী ঢাকা বা বিভাগীয় শহরগুলোতে সীমাবদ্ধ নয়, জেলা শহরগুলোতেও প্রায় একই অবস্থা। স্থানীয় পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির কারণেই ক্রেতাদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত পয়সা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!