• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্ধেক মজুরিতে ওদের বেঁচে থাকার লড়াই


মো. ইউনুস আলী, লালমনিরহাট প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৮, ২০১৮, ০৭:৫৫ পিএম
অর্ধেক মজুরিতে ওদের বেঁচে থাকার লড়াই

ছবি: সোনালীনিউজ

লালমনিরহাট : অভাবের তাড়নায় মজুরি বৈষম্য মেনে নিয়েই প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার লড়াই করছেন তারা। আদিকাল থেকে আজও রয়ে গেছে নারী পুরুষ শ্রমিকের পারিশ্রমিক নিয়ে বৈষম্য। একজন পুরুষ শ্রমিক তার দৈনিক পারিশ্রমিক পান ৩০০-৪০০ টাকা, সেখানে একই কাজ করে একজন নারী শ্রমিক পায় ১৫০-১৭০ টাকা। কি আর করার আছে, কাজ না করলে যে পেটে ভাত নেই, তাই তো বাধ্য হয়ে নিম্ন পারিশ্রমিকে কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা।  

আজ বলছি এমনি একটি নারীর বাস্তব কাহিনী-

দুই কন্যার মা কণিকা রানী। সেই কাক ডাকা ভোরে বেড়িয়ে পড়েন অন্যের জমিতে দিনমজুর খাটতে। সারাদিন গতর খাটুনি শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আবার শুরু হয় গৃহস্থালির কর্মযজ্ঞ। রাতে মেয়েদের লেখাপড়া শেষে খাওয়া দাওয়া করেই ঘুম, সকালে যে আবারো কাজে যেতে হবে। এভাবেই রুটিন মাফিক চলছে কণিকার জীবনসংসার।

নিজে লেখাপড়া না জানলেও শিক্ষার মর্ম বোঝেন কণিকা। তাই নিজে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন তিনি। তার স্বপ্ন, উচ্চশিক্ষিত হয়ে মেয়েরা একদিন বড় চাকরি করবে।

কণিকা রানী লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ডাকাতপাড়ার শশীকান্তের স্ত্রী। দুই মেয়ে ও বৃদ্ধা মা স্বরসতিকে নিয়ে শশী-কনিকা দম্পতির সংসার। নিজেদের জমি বলতে বাড়ির ভিটাটুকুই। স্বামীর আয়ে খাওয়া খরচ মেটানোই যেখানে কষ্টকর সেখানে দুই মেয়ের লেখাপড়া চালানো অসম্ভব। তাই প্রতিদিন অন্যের জমিতে ১৭০ টাকা মজুরিতে শ্রম বিক্রি করেন কণিকা। যা দিয়ে চলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ। বড় মেয়ে লতা রানী রংপুর কারমাইকেল কলেজের অনার্সের ছাত্রী। ছোট মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী। বিয়ের ভালো প্রস্তাব এলেও চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে দেবেন না, এমন প্রতিজ্ঞা কণিকা রানীর।

কণিকা রানী বলেন, নিজে লেখাপড়া করি নাই বলে আজ অন্যের জমিতে কামলা দেই। আমার মেয়েরা যেন শান্তিতে থাকে, তাই ওদের পড়াশোনা করাচ্ছি। গরিব হয়া জন্মাইছি, কষ্ট তো একনা করাই লাগবে।

কণিকার প্রতিবেশী উর্মিলা রানী। তারও দুই মেয়ে এক ছেলে। সবাই স্কুল-কলেজে পড়ছে। সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতেই তিনি মাঠে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল-সন্ধ্যা শ্রম বিক্রি করছেন। তবে পুরুষদের সমান কাজ করলেও মজুরি অর্ধেক। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পুরুষরা ধানের আঁটি বহন করতে পারলেও আমরা তা পারি না। সে কারণেই মজুরি অর্ধেক।

আরেক শ্রমিক বিধবা নমিতা রানী। তার মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে আর ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। স্বামী না থাকায় সন্তানদের লেখাপড়া আর সংসারের খরচ মেটাতে দিনমজুরের কাজ করছেন তিনি।

শুধু কণিকা, নমিতা, উর্মিলা নন। সংসার সচল রাখতে বাড়তি আয়ের আশায় কিংবা সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে দরিদ্র অনেক নারীরাই এখন ক্ষেতে খামারে শ্রম দিচ্ছেন। আগের মতো এখন গ্রামের নারীরা আর ঘরে বসে অলস সময় পার করেন না। প্রয়োজনের তাগিদে পুরুষের সঙ্গে তারাও মাঠে ঘাটে ক্ষেতে খামারে শ্রম দিচ্ছেন। এভাবে সংসারের উপার্জনকারী গর্বিত সদস্য হিসেবে স্বীকৃতিও পাচ্ছেন গ্রামীণ নারীরা। গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে।

আদিতমারী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকেই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ভূমিকা রেখে চলেছেন কর্মজীবী নারীরা। বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগেও গ্রামীণ নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কাজ করছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!