• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
অভিযোগের সত্যতা যাচাই করছে ডিবি

অশ্লীল ভিডিও নিয়ে পাপিয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন ব্যবসায়ী


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১, ২০২০, ০৩:৩০ পিএম
অশ্লীল ভিডিও নিয়ে পাপিয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন ব্যবসায়ী

ঢাকা : শামীমা নূর ওরফে পাপিয়া ওরফে পিউ-এখন ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’। তার গ্রেফতারের পর থেকেই যে বিষয়গুলো বেরিয়ে এসেছে তা যেন হার মানাচ্ছে আরব্যরজনীর মালিকা হামিরা ও মেহেরাঙ্গেজ চরিত্রগুলোকেও। কৌশল তার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজের অবস্থান জানান দেয়া। পরিচিতির সঙ্গে বাড়ে তার অপরাধজগতের পরিধিও। প্রভাব খাটিয়ে বনে যান যুব মহিলা লীগ নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক। এ যেন তার হাতে আলাদীনের চেরাগ।

কয়েক মাসের মধ্যেই অন্ধকার জগতে বিশাল সম্রাজ্য গড়ে তুলে পাপিয়া কামিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।  

যুব মহিলা লীগের নেত্রী (বহিস্কৃত) শামীনা নূর পাপিয়ার টার্গেট ছিলো প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। পাপিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তি হোটেল ওয়েস্টিনে গেলে সেখানে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইল করতেন পাপিয়া।

কখনো ফ্ল্যাট, কখনো বা মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে। শুধু তাই নয়, ব্লাকমেইল করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের ফায়দা লুটে নিয়েছেন তিনি ও তার স্বামী মফিজুর বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

তাদের প্রতারণার শিকার অনেক ভুক্তোভোগী এখন মুখ খুলছেন পুলিশের কাছে। এদিকে পাপিয়ার অপকর্মের সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেজন্য এমপিসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়াও অন্তত শতাধিক নারী নেত্রীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

রাজনৈতিক ক্ষমতায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা এই সব নারী নেত্রীর বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান চলছে। এমনকি তারা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া যাদের নাম প্রকাশ করেছেন এরই মধ্যে তাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

এছাড়া পাপিয়ার মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তিনি সরকার দলের প্রভাবশালী নেতানেত্রীদের সঙ্গে দিনের পর দিন কথা বলেছেন।

এদিকে পাপিয়া-মফিজুর দম্পতির প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ ও অনৈতিক কাজে বাধ্য হওয়া মেয়েরা মুখ খুলতে শুরু করেছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর পাপিয়া দম্পতির প্রতারণার শিকার মেয়েরা পাপিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এরইমধ্যে বিমানবন্দর থানায় পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী।

তপন তালুকদার টুকু নামে ওই ব্যবসায়ী সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচ মাস আগে আমি ঢাকা থেকে নরসিংদীতে এক অনুষ্ঠানে বন্ধুর বাড়িতে যাই। সেখানে পাপিয়ার সঙ্গে দেখা হয়। অনুষ্ঠান শেষে পাপিয়া আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে কম বয়সী ৪ জন সুন্দরী তরুণীকে তারা আমার সামনে নিয়ে আসে। এরপর জোর করে তাদের সঙ্গে আমার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে।

তিনি আরো বলেন, এরপর আমি চলে আসতে চাইলে পাপিয়ার স্বামী মফিজুর বলেন, এখন তো যাওয়া যাবে না। আপনি তো আমার মেয়েদের সঙ্গে খারাপ কাজ করেছেন। এখন তারা আপনার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করবে। এ কথা বলে তারা কোন পুলিশকে যেন ফোন দিলেন। আসলে তারা পুলিশ ছিলো না, তাদেরই সাজানো কোনো ব্যক্তি ছিলো। ফোনের ওপাশ থেকে বলা হলো, আমি আসতেছি। তবে পুলিশের কেউ আসেননি।

টুকু বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামী আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, এখান থেকে পার পেতে হলে, আপনাকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। নইলে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেবো। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবো। আপনার নামে মানবপাচারের মামলা দেওয়া হবে। পরে আমাকে মারধর করে তারা। মান-সম্মানের ভয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পরও তাতে মন গলেনি। এরপর আমাকে বাড়ির ছাদে তিনদিন আটকে রাখে। একপর্যায়ে ব্যাংকের মাধ্যমে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার পর তারা আামকে ছেড়ে দেয়।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি রোববার গোপনে দেশত্যাগের সময় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সেক্রেটারি শামিমা নূর পাপিয়াকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তিনসহযোগীসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব।

গ্রেফতার অন্য তিনজন হলেন- পাপিয়ার স্বামী ও তার অবৈধ আয়ের হিসাবরক্ষক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকালী শেখ তায়্যিবা ও সাব্বির খন্দকার।

এই নেত্রীর প্রকাশ্য আয়ের উৎস গাড়ি বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা। তবে এর আড়ালে জাল মুদ্রা সরবরাহ, বিদেশে অর্থপাচার এবং অবৈধ অস্ত্র রাখাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার পরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার অন্ধকার জগতের চাঞ্চল্যকর কাহিনী।

এরপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেটের ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডের রওশনস ডমিনো রিলিভো নামের বিলাসবহুল ভবনে তাদের দু’টি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা, আগ্নেয়াস্ত্র, বিদেশী মদসহ অনেক অবৈধ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

পরে দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি জাল টাকা উদ্ধার, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক তিন মামলায় পাপিয়ার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তার স্বামী মফিজুর রহমানেরও ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা করা হয়।

এছাড়া মামলার অপর দুই আসামি পাপিয়ার সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকেও রিমান্ডে নেয়া হয়। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

পাপিয়ার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করছে ডিবি : বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউয়ের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও নানা বিষয়ে তার দেয়া তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাই করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। এ সময়  পাপিয়ার রিমান্ড ও জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।

আবদুল বাতেন জানান, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে আমরা তা তদন্ত করছি। অভিযোগের সত্যতা এবং ক্রিমিনাল অপরাধগুলো চিহিৃত করছি।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা তিনটি মামলা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

২২ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও টাকা পাচারের অভিযোগে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতার হওয়ার অন্যরা হলেন- পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)।

গ্রেফতারে পর রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে ও নরসিংদীতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ তাদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থের খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব।

অভিযানে ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

২৩ ফেব্রুয়ারি (রোববার) বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে একটি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!