• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অস্তিত্ব সংকটে নতুন বীমা কোম্পানি


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬, ১১:০৪ এএম
অস্তিত্ব সংকটে নতুন বীমা কোম্পানি

বিশেষ প্রতিনিধি

সুবিধামতো ব্যবসা করতে না পারায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নতুন বীমা কোম্পানিগুলো।অনুমোদনের আড়াই বছর পরও ওসব কোম্পানি সুবিধা মতো ব্যবসা করতে পারছে না। ইতিমধ্যে অনেক কোম্পানিই মূলধন সংকটের কারণে ব্যাংক ঋণ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যা বীমা আইনের পরিপন্থী। কারণ আইন অনুযায়ী বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) অনুমোদন ছাড়া কোনো বীমা কোম্পানিই ঋণ নিতে পারে না। কিন্তু কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে নতুন বীমা কোম্পানিগুলো। যা সাধারণ বিনিয়োগকারী ও বীমা গ্রহীতাদের ঝুঁকির মুখে ফেলছে। বীমা খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের নতুন বীমা কোম্পানিগুলো বিলাসবহুল অফিস, কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের বেতনসহ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবে এসব কোম্পানি ঠিকমতো তাদের ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে ইতিমধ্যে ওসব কোম্পানির অর্ধশত শাখা বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া কোম্পানির সংখ্যা বাড়লেও শক্ত হয়নি অধিকাংশ কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি। বরং প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নতুন বীমা কোম্পানিগুলো। তবে এতোকিছুর মধ্যেও নতুন অনুমোদন পাওয়া অধিকাংশ জীবন বীমা কোম্পানির বছর শেষে প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে। তবে কমেছে তাদের রিনিউয়াল আয়ের পরিমাণ।

সূত্র জানায়, গত ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যে ১২টি নতুন জীবন বীমা কোম্পানির সমাপনী হিসাব অনুযায়ী ৮টির প্রথম বছর প্রিমিয়াম আয় আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৪টি কোম্পানির প্রথম বছর প্রিমিয়াম আয়। ব্যবসা ভালো না চললেও অনুমোদন পাওয়া নতুন কোম্পানির শাখার সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়তে থাকে। কিন্তু লাভজনক না হওয়ায় একসময় সার্বিকভাবে ওসব কোম্পানির ৫৪টি শাখার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সরকার ২০১৩ সালে দু’দফায় ১৬টি বীমা কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়। তারমধ্যে ৩টি সাধারণ বীমা কোম্পানি ও ১৩ জীবন বীমা কোম্পানি। কিন্তু ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করার প্রথম থেকেই ওসব কোম্পানির অফিস বাবদ ব্যয় ছিল অনেক বেশি। বিলাসবহুল অফিস, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের বেতন, কর্মকর্তাদের জন্য গাড়িসহ সার্বিক পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ায় একসময় অধিকাংশ কোম্পানির মূলধন শেষ হয়ে যায়। ফলে পর্যাপ্ত মূলধন সংকটে ব্যবসা ঠিকমতো পরিচালনা করতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হয়। একপর্যায়ে আর্থিকভাবে সক্ষম হওয়ার জন্য ওসব কোম্পানির আইডিআরের নির্দেশনা অমান্য করে ব্যাংক ঋণের দিকে ঝুঁকে যায়। কিন্তু ব্যাংক ঋণ নিয়েও তারা বিলাসবহুলভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনাসহ ইচ্ছামতো খরচ করছে।

সূত্র আরো জানায়, নতুন অধিকাংশ বীমা কোম্পানির অবস্থা এতোটাই খারাপ যে পরিশোধিত মূলধন ব্যয় করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তবে গ্রাহকদের স্বার্থ ঝুঁকির বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে। যদিও ২০১২ সালের আইডিআরের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের ঋণ না করার বিষয়েও নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি নির্দেশনা জারি করে। ওই সময় বীমা কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল যানবাহনের খরচ কমানোর বিষয়ে নির্দেশনা ছিল সংস্থাটির। নির্দেশনায় বলা হয়, যানবাহন খাতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে। বীমা কোম্পানিগুলোর পর্ষদ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকার বেশি দামের গাড়ি বীমা কোম্পানির টাকায় কিনতে পারবে না। শুধু চেয়ারম্যান একটি গাড়ি সুবিধা পাবেন, পর্ষদের অন্যান্য সদস্য এ সুবিধা পাবেন না। পাঁচ বছরের আগে কোনো গাড়ি পরিবর্তন করা যাবে না। কোম্পানির পুলে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার ৪টি গাড়ি রাখা যাবে। কিন্তু কোনো কোনো কোম্পানি ব্যাংক ঋণ নিয়ে সর্বনিম্ন ৯টি থেকে সর্বোচ্চ ২৫টি গাড়ি কিনেছে। মূলত তীব্র প্রতিযোগিতার কারণেই বেশির ভাগ নতুন বীমা কোম্পানি দুরবস্থায় রয়েছে। কম আয় ও বেশি ব্যয়ের জেরে টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলছে তারা। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে লাভজনক হওয়া তো দূরের কথা, প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করতে বাধ্য হবে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে নতুন বীমা কোম্পানিগুলোর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে শিগগিরি নতুন ওসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। তার আগে একাধিবার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইডিআরএ বৈঠক করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। প্রয়োজনে যেসব কোম্পানির অবস্থা বেশি খারাপ সেগুলোতে নিরীক্ষা কার্যক্রম চালানো হতে পারে বলে জানা যায়।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরের সদস্য কুদ্দুস খান বলেন, আয় অনুযায়ী ব্যয় না করার কারণেই নতুন বীমা কোম্পানিগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ফলে তাদের অনেক শাখা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কোম্পানিগুলোর ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আইডিআরএ নজরদারি বাড়িয়েছে।

একই প্রসঙ্গে আইডিআরের সদস্য জুবের আহমেদ খান বলেন, নতুন অধিকাংশ কোম্পানির অবস্থা খুবই খারাপ। ব্যবসায় মন্দা, অত্যধিক ব্যয় ও অসুস্থ প্রতিযোগিতায় অধিকাংশ নতুন কোম্পানি বিপাকে পড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করছে নতুন কোম্পানিগুলো। আর আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় তাদের এ অবস্থা হয়েছে। এসব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। এজন্য শিগগিরি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করবে আইডিআরএ। বৈঠকে তাদের সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!