তাই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছি- অস্ত্র, কলম আর কি-বোর্ডের ত্রিমুখী যুদ্ধ চালিয়ে যাব। এখন থেকে অস্ত্রের জবাব অস্ত্র দিয়ে, কলমের জবাব লেখনি দিয়ে আর কি-বোর্ডের জবাব অনলাইনে দেয়া হবে। ..... আত্মরক্ষার অধিকার সার্বজনীন ... আর সেটা সকল পেশার লোকের জন্যই সমান।’
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে নিজ ফেসবুক ওয়ালে ‘বিদ্বেষ কিন্তু প্রতিবাদ নয়’ শিরোনামে একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখা পোস্ট করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ও নবগঠিত কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।
এডিসি মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন-এর সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো :-
‘#বিদ্বেষ_কিন্তু_প্রতিবাদ_নয়
বিদ্বেষ হচ্ছে প্রতিবাদের সৎ ভাই, আর প্রতিবাদ হচ্ছে বিবেক সমর্থিত ন্যায্যতার দাবী। আমরা কখনও কখনও প্রতিবাদ করতে বিবেক বিবর্জিত অন্যায্য বিদ্বেষ পোষণ করে থাকি। খেয়াল করি না যে, অন্যায্য বিদ্বেষ ন্যায্য প্রতিবাদকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, সেই সাথে অনিষ্ট করতে পারে বিবেকের সুখ।
কৈশোরে পড়েছিলাম : ‘... বিবেকটা বিবশ হলেই বাঁচি।’-মাধুকরী, বুদ্ধদেব গুহ
খুব স্পর্শকাতর বিবেক নিয়ে কিছু কিছু পেশায় না আসাটাই ভাল। বিবশ বিবেকের মানুষ যে পেশাগুলোতে ভাল থাকতে পারবে তার মধ্যে ‘পুলিশ’ অন্যতম। ‘পান থেকে চুন খসলেই’ যে পেশার লোকদের সমালোচনার করতে লোকজন মুখিয়ে থাকে সে পেশায় যান্ত্রিক লৌহ মানবরাই মানানসই। কারণ কিছু পেশা আছে, যেখানে ‘পাহাড় ধস’ ঘটলেও ‘টু’ শব্দ করতে সাহস পায় না অনেক বীর সমালোচক। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে তারা ‘বীর বাহাদুর’।
(১) পুলিশের কোনও এক কথায় বিনয় লক্ষ্য করে মজা করেই একদিন Arif R Hossain ভাই (জনপ্রিয় ফেসবুকিস্ট) বলেছিলেন, ‘পুলিশ মানুষ এত সুইট হলে হয়?’ কথা সঠিক। পুলিশ হবে তেতো কথার, পুলিশ হবে আবেগহীন, পুলিশ হবে রুক্ষ, কর্কশ ও রোবটিক। সেখানে বিনয়ী পুলিশ একেবারেই বেমানান। তিনি অবশ্য ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হওয়ায় খুশি হয়েই এ কথা বলেছিলেন।
(২) পুলিশের কর্মঘণ্টা নিয়ে কয়েকদিন আগে ফেসবুকে আমি কিছু ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। সে লেখাটির নিচে এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, ‘... সব জেনে-শুনেই তো পুলিশে এসেছেন।’ কৌতুহলবশতঃ অবশ্য তার টাইমলাইন ঘাটাঘাটি করে ধারণা পেয়েছি যে, তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত।
(৩) কয়েকজন ফেসবুক গোয়েন্দার (!) ভুলভাল এবং মর্মপীড়াদায়ক অপরাধ বিশ্লেষণের রকম ফের দেখে অতিষ্ঠ হয়ে গত মাসে যখন ফেসবুকে দু’কথা লিখেছিলাম তখন খোঁচামারা স্বভাবের একজন ফেসবুকিস্ট মন্তব্য করেন, ‘... এসব জবাব দেয়ার দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে? মানুষকে এতটা বোকা ভাবার কোনও কারণ নেই। ... জাযাকাল্লাহ খাইরুন (কপি পেস্ট)।’
পুলিশের প্রতি অবিশ্বাস নয় বরং অভ্যাসগতভাবে কটাক্ষ করে লিখতে অভ্যস্ত এই লোকটি বৃত্তের বাইরে আসতে পারেনি। তার টাইমলাইন পর্যবেক্ষণে তাকে ইসলাম ধর্মবিরোধি বলে মনে হয়েছে। আমার মূল লেখায় ‘জাযাকাল্লাহ খাইরুন’ শব্দটি থাকায় তিনি কটাক্ষ করতে উদ্ধত হয়েছেন বলে মনে হলো। নিজেকে মাত্রাতিরিক্ত স্মার্ট, আধুনিকমনা এবং জ্ঞানী মনে করলে মানুষ সাধারণত কনফিডেন্টলি এরকম অভদ্র আচরণ করে থাকে।
(৪) হোলি আর্টিসানে নিহত ঘাতকদের নামকরণ (আকাশ, বিকাশ...... প্রমুখ) নিয়ে সর্বত্র ব্যাপক সমালোচনা চলছিল। এ সময় সত্যানুসন্ধানী বিবেকের দংশনে সহ্য করতে না পেরে সেই নামগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী পোস্ট দিয়েছিলাম। সেই পোস্টের নিচে এক প্রবাসি (রেল বিভাগের কর্মচারী-কাম-পার্টটাইম অনলাইন সাংবাদিক) একটি কমেন্ট করেন, ‘এসব বুদ্ধি এদের (পুলিশদের) কে দেয়?... এভাবে ব্যাখ্যা দিলেই মানুষ বিশ্বাস করবে? মানুষ তো ছাগল, না?’
এরপর লক্ষ্য করলাম কমেন্টটা তিনি মুছে দিলেন। আমি কিন্তু ভয় দেখাইনি, সততার সাথে মন থেকে দাওয়াত দিয়েছিলাম শুধু তার ভাবনার জায়গাটুকুর ভিত্তি বুঝার জন্য। যা হোক, আকাশ, বিকাশ, ডন...... নিয়ে আমার সে লেখাটি ছোটভাই তুল্য পুলিশ অফিসার Mashroof Hossain তার পেজে শেয়ার দিয়েছিল। সেখানেই এসব কমেন্টগুলো এসেছিল। আমার নীরবতা দেখে মাশরুফ ব্যথিত স্বরে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘স্যার, কিভাবে সহ্য করেন?..... একটা ভাল উদ্যোগ বা ভাল লেখার নিচে মানুষ এমন নেগেটিভ কমেন্ট কিভাবে করে?’ আমি উত্তরে বলেছিলাম- ‘মেডিটেশন করে।’
আসলে বিবেকের দংশন বিষধর সাপের দংশন থেকেও মারাত্মক যন্ত্রণাময়। সমাজে সর্বত্র এই দংশনের শিকার লাখো পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবার। দেশের একটি বিশাল অংশ পুলিশের ওপর ত্যক্ত-বিরক্ত। এটা স্বীকার করেই পুলিশ যখন পরিস্থিতির উন্নয়নকল্পে কোনও ভাল উদ্যোগ হাতে নেয়, তখনই অযৌক্তিকভাবে কিছু পুলিশ বিদ্বেষী চক্র তা থামিয়ে দিতে চায়।
যেমন, সদ্য চালু হওয়া জঙ্গিবাদ বিরোধী #Hello_CT অ্যাপটি নিয়ে লেখা আমার একটি পোস্টের নিচে অপ্রাসঙ্গিকভাবে একজন পুলিশ বিদ্বেষী ‘পুলিশের দুর্নীতির প্রমাণস্বরূপ’ লিংক (৩০ সেকেন্ডে ৫টি লিংক) জুড়ে দেয়।
তথাকথিত ফেইসবুক অ্যাক্টিভিস্ট, প্রবাসি রেল কর্মচারী.....এরাই তো ‘একশ’। কালিবিহীন কলমে ভরা ফেইসবুকের দেওয়ালগুলো যখন অনুমানের গল্পে ভরে যায়, তখন বাস্তব জগতের যুদ্ধা হিসেবে পুলিশ রক্ত দিয়েও এদের মন পায় না।
তাই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছি - অস্ত্র, কলম আর কি-বোর্ডের ত্রিমুখী যুদ্ধ চালিয়ে যাব। এখন থেকে অস্ত্রের জবাব অস্ত্র দিয়ে, কলমের জবাব লেখনি দিয়ে আর কি-বোর্ডের জবাব অনলাইনে দেয়া হবে। ...আত্মরক্ষার অধিকার সার্বজনীন ...আর সেটা সকল পেশার লোকের জন্যই সমান।’
সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি
আপনার মতামত লিখুন :