• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আ. লীগে আবার সক্রিয় সংস্কারপন্থীরা


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১১, ২০২০, ০৭:০১ পিএম
আ. লীগে আবার সক্রিয় সংস্কারপন্থীরা

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিল, তাদেরকেই বলা হয় সংস্কারপন্থী। ওয়ান ইলেভেনের সময় এই সংস্কারপন্থীরা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় তৎকালীন অনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন। 

কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থীদের সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়নি। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট বিপুল ভোটে ২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচিত হয়। এরপর থেকে এই জোট টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন, সেই মন্ত্রিসভায় কোনো সংস্কারপন্থীকে তিনি অন্তর্ভূক্ত রাখেননি। শুধু মন্ত্রিসভা কেন, সেসময় অনেক সংস্কারপন্থী মনোনয়নও পাননি। 

যেমন মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আ খ ম জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক আবু সাইয়ীদ, আখতারুজ্জামানের মতো হেভিওয়েট নেতারা সেসময় আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছিলেন। অবশ্য সংস্কারপন্থীদের মধ্যে সিনিয়র হেভিওয়েট নেতা যারা ছিলেন যেমন তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো নেতারা মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

মনোনয়ন পেলেও আওয়ামী লীগ দলের মধ্যে সংস্কারপন্থীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন।  দলের নেতাকর্মীরা তাদের ধিক্কার জানাতেন, সমালোচনা করতেন। ২০১৪ এর মন্ত্রিসভায় সংস্কারপন্থীদের জন্য দরজা খুলে দেন শেখ হাসিনা। এসময় সিনিয়র কয়েকজন সংস্কারপন্থী মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন তিনি। 

যদিও তাদের প্রেসিডয়াম পদ থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা মণ্ডলী করা হয়। যার ফলে কার্যত দলের কার্যক্রমে তারা অপাংক্তেয় হয়ে পড়ে। কিন্তু আস্তে আস্তে সংস্কারপন্থীরা যেভাবেই হোক, দলের মধ্যে ফাক-ফোঁকর দিয়ে হলেও ঢুকে পড়ছে।  ওয়ান ইলেভেনের সময় প্রকাশ্যে যিনি শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছিলেন, সেই মুকুল বোস এখন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হয়েছেন। 

তিনি দলের তরুণ এবং উদীয়মান নেতাদের সমালোচনা করেন প্রায়ই। এবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে অন্তত তিনজন সংস্কারপন্থী স্থান পেয়েছেন।  তাদের মধ্যে রয়েছেন মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আ খ ম জাহাঙ্গীর এবং আখতারুজ্জামান। এই সমস্ত সংস্কারপন্থীরা আবার সক্রিয় হতে শুরু করেছে। আবার তারা যেকোনো বৈঠকে প্রকাশ্যে দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, দলের নেতাকর্মীদের তিরস্কার এবং সমালোচনা করছেন।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত আ খ ম জাহাঙ্গীর মুজিববর্ষ নিয়ে বেশকিছু কথাবার্তা বলেন। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি এগুলো শুধু শুনেছেন, কিন্তু কোনো কথা বলেননি। এখানেই ঘটনা শেষ হয়নি। এর পরেরদিনই গণভবন থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে দীপু মনির সঙ্গে তিনি বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে খ ম জাহাঙ্গীর কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহীদের সমালোচনা করেছিলেন। যেমন ‘দাবায় রাখতে পারবে না’র পরে ডট ডট (…) দেওয়া হয়েছে কিনা সহ নানা বিষয় নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কথা বলেছিলেন।

এদিকে, আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছিলেন যে, আ খ ম জাহাঙ্গীর কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই কথাগুলো না বললেও পারতেন। কারণ সেদিন একটি বিশেষ পরিস্থিতি ছিল। সেখানে মুজিববর্ষের মূল অনুষ্ঠান বাতিল হওয়া এবং করোনাভাইরাসের কারণে একটি আলাদা পরিস্থিতি ছিল। নিজেকে জাহির করার জন্য তিনি এখানে এসব কথার অবতারণা না করলেও পারতেন। 

এই বৈঠকের পরপরই তিনি বারান্দায় দাড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। বগুড়ায় একটি স্কুলে মুখোশ পরার ঘটনা নিয়ে তিনি দীপু মনির সমালোচনা করেছিলেন সেই বৈঠকে। বৈঠক থেকে বেরিয়েও এর রেশ চলতে থাকে। এসময় ডা. দীপু মনি বলেন যে, ‘আপনি তো সংস্কারপন্থী, এজন্য আপনি প্রথম আলো পড়েন। যে পত্রিকা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পড়েন না, সেই পত্রিকার রেফারেন্স দিয়ে আপনি আমাকে আক্রমণ করছেন।’ পরে আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।

আর এই ঘটনাটি একটি উপমামাত্র। জানা গেছে যে ইদানিং আওয়ামী লীগের ছোট একটি অংশ নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। দলের বিভিন্ন নেতাদের বিষোদাগার করাই তাদের প্রধান কাজ। এইসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কার্যত আওয়ামী লীগের মধ্যে ২০০৯ এর পর থেকে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, সেই ঐক্যকে আবার ফাটল ধরানোর একটি নীরব প্রক্রিয়া এই সংস্কারপন্থীরা করছেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Wordbridge School
Link copied!