• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আংটিটা লালির দুধের বাটে পড়িয়ে দেই!


ফেসবুক থেকে ডেস্ক মার্চ ২৪, ২০১৯, ১১:১৩ এএম
আংটিটা লালির দুধের বাটে পড়িয়ে দেই!

পাত্রপক্ষ পাত্রী দেখতে আসার ঘটনা...

পাত্রের চাচীঃ মা আমার পাশে বসো। তোমার নাম কি?
পাত্রী: রুকাইয়া তাবাসসুম আক্তার স্বর্ণা।
পাত্রের চাচী: বাবাহ এতো বড় নাম আপনাদের মেয়ের। এতো বড় নাম হয় কারো?
পাত্রীর বাবাঃ আসলে ওর দাদা শখ করে ওর নাম রেখেছিল। আমরা সবাই স্বর্ণা বলে ডাকি।
পাত্রের খালুঃ স্বর্ণা মা। তোমার চোখে কি পোকা কামড় দিয়েছে নাকি?
পাত্রীঃ কই নাতো!
পাত্রের খালুঃ কেমন যেন ছোট ছোট লাগছে চোখ দুইটা।
পাত্রীর বাবাঃ ওর চোখ দুটো ওর মায়ের মতো হয়েছে। ছোট মেয়েটা দেখতে আবার আমার মতো হয়েছে।

পাশ থেকে পাত্রের মামী বলে উঠলো
: নাকটাও তো কেমন বোঁচা । চাকমা চাকমা লাগে।
তারপর ফিসফিসিয়ে পাত্রের মায়ের কানেকানে বলে " ভাবী, ভবিষ্যতে বাচ্চাগুলাও কিন্তু চাকমার মতো হবে দেখে নিয়েন।"

পাত্রীর বাবাঃ আল্লাহ দশ জনকে দশ রকম বানাইছে, কি আর করার! তাছাড়া আমার মেয়ে ভাল ছাত্রী আর ঘরের কাজ টুকটাক সবই পারে। একটু শিখিয়ে দিলে সব ভাল করেই সামাল দিতে পারবে।

পাত্রের মা: স্বর্ণা তুমি চুল লম্বা রাখোনা কেন? আর ঠিকমতো তোমার বাবা খাওয়ায় ও না নাকি! পাট গাছের মতো পিনপিনে পাতলা তুমি!

ওপাশ থেকে পাত্রের কাজিন পাত্রের মামীকে বলছে, মেয়েটার দাঁতও উঁচুনিচু দেখো মা....

পাত্রের বাবাঃ দেখেন বিয়েসাদি উপরওয়ালার হাতে। আর আপনাদের মেয়েকে আমাদের মোটামুটি ভালই লেগেছে। এখন পাকাকথা শুরু করি তারপর আংটিবদলের পালা।

পাত্রীর বাবাঃ আলহামদুলিল্লাহ। শুরু করেন।

পাত্রের বাবাঃ দেখেন আমাদের কিছুই দিতে হবে না। ওরা নতুন সংসার শুরু করবে। একটা নতুন সংসারে কি আর লাগে? একটা বেড, একটা ফ্রীজ, আলমারি, ওয়্যারড্রব,ওয়াশিং মেশিন, সোফাসেট,টি টেবিল,পাপোশ, টিভি, রান্নাবান্নার জন্য চুলা সিলিন্ডার এই তো! এসব নিয়ে আর কি কথা বলবো। বিয়েতে দশ ভুড়ি গহনা আর আমাদের ৩০০ জন আসবে। এই আর কি! তো.. আংটি বদলের পালা শুরু হোক! নাকি!

স্বর্ণা হুট করে বলে ওঠে
- আমি একটু আপনাদের সবার একত্রে সাথে আলাদা করে কথা বলতে চাই। যেখানে আমার ফ্যামিলির কেউ থাকবে না।

পাত্রীর মাঃ তুই আবার কি বলবি?

পাত্রঃ ও যখন বলতে চায়। বলুক। আমরা শুনবো।

স্বর্ণাঃ মা বা পিচ্চি তোমরা ঘরেই থাকো, তোমরা কেউ আসবে না। আর পাত্রপক্ষে যারা যারা এসেছেন আপনারা সবাই আমার সাথে আসুন।

এই বলে স্বর্ণা পাত্রপক্ষের মোট ১১ জনকে আঙ্গিনায় পেড়িয়ে দরজার কাছে নিয়ে গেল। শূণ্যে তাকিয়ে স্বর্ণা বলতে লাগলো
- আপনাদের সাথে ঠিক এখানেই আমার কিছু কথা আছে।
পাত্রঃ এখানে অনেক দুর্গন্ধ। গোয়াল ঘর তো।
- জ্বী এটা গোয়াল ঘর। গোয়াল ঘরের কাছে কেন আনলাম জানেন?

পাত্রপক্ষের সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্বর্ণা আবার বলা শুরু করলো,
- আমাদের একটাই গরু। নামটা অনেক কমন, লালি। তবে নামটা অনেক ছোট তাই না? দুই অক্ষরের... লালি। আমার "রুকাইয়া তাবাসসুম আক্তার স্বর্ণা" নামটা যদি এতোই বড় লাগে তবে আপনার জন্য লালি নামটাই পারফেক্ট। তাই না?

আচ্ছা, কে যেন বললেন... আমার দাঁত উঁচুনিচু? এই দেখেন, আমার লালির চোয়ালের দাঁতগুলো কি সুন্দর প্যারালাল! ও শ্বাশুড়ি আম্মা আপনি আমাকে পাতলা পিনপিনে বললেন না? আমাদের লালি মাশ'আল্লাহ সাড়ে ৭ মণ। মানে বুঝেন তো! আমি তো মাত্র সোয়া মণ। আর কি যেন বললেন আমার চুলগুলা ছোট, নাক ছোট? এই যে দেখেন লালির লেজে অনেক চুল অনেক স্ট্রেইট.. দেখেন দেখেন স্যাম্পুও করতে হবে না কন্ডিশনারও মাখতে হবে না। আর নাক? মাশ'আল্লাহ আমাদের লালির নাক ছোটখাটো একটা উল্কাপিন্ডের মতো বড়!

আর শ্বশুর মশাই আমার বাবার কাছে কি যেন দাবি করলেন, বেড, একটা ফ্রীজ, আলমারি, ওয়্যারড্রব,ওয়াশিং মেশিন, সোফাসেট,টি টেবিল,পাপোশ, টিভি, রান্নাবান্নার জন্য চুলা সিলিন্ডার, গহনা.. এসব তো! আমাদের লালিকে আপনার ছেলের সাথে বিয়ে দেন। মাশ'আল্লাহ লালি প্রতিদিন ১২ লিটার দুধ দেয়। দুই বছরেই ঐসব কিনে লালি আর আপনার ছেলেটা সুখে শান্তিতে ঘর করবে। তারপর একটা শংকর প্রজাতির বাচ্চা হবে। যার নাম হবে "হাম্বা স্যাপিয়েন্স "।

দেন আন্টি এবার আংটি বদল হোক। কিন্তু আংটিটা আমি লালির কোথায় পড়িয়ে দিবো?আপনারা সবকিছু এতো বড় বড় চান কিন্তু নিয়ে আসছেন একটা পিচ্চি আংটি! কি আর করার বলেন! দেন আংটি টা দেন, আমি বরং আংটিটা লালির দুধের বাটে(নিপলে) পড়িয়ে দিই কেমন! দেন দেন।

অতপর নিরাশ পাত্রপক্ষ স্লো মোশনে চম্পট।

লেখাটি ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!