• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
আরো প্রায় ২০ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার শঙ্কা রয়েছে

আওয়ামী লীগে ৯৫ বিদ্রোহী


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২, ২০১৮, ০৩:৫১ পিএম
আওয়ামী লীগে ৯৫ বিদ্রোহী

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগের কড়া হুশিয়ারির পরও প্রায় ৭৯ সংসদীয় আসনে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হওয়ার ঘোষণা এসেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, এ সংখ্যা ৯৫-এর মতো। আরো প্রায় ২০ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন জমার আগেই জানিয়ে দেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হলে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অঙ্গীকারনামায়ও সই নিয়ে রাখা হয়েছে এবার।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, একাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩০৫৬। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা হয় ৪৯৮। এদের মধ্যে ৯৫ জন আওয়ামী লীগের। অনেকে নিজেকে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে পরিচয় দিতে নারাজ। তারা ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন চিঠি দেওয়ার পর বঞ্চিত নেতাদের সমর্থকরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ প্রার্থী হলে তাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত আছে।’

শেষ পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সঙ্গে বোঝাপড়া না হলে কতজন ‘বিদ্রোর্থী প্রার্থী’ হিসেবে ভোটের মাঠে থাকে, এ নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায় শঙ্কিত। বিজয় নিশ্চিত করতে নানা পরিকল্পনায় দলের একক প্রার্থীর বিষয়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাতে কতটুকু সফল হওয়া যাবে, এ প্রশ্ন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়েরও। ‘ক্ষুব্ধ নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী’ থেকে গেলে কী হবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন শীর্ষ নেতারা। কারণ আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থীরা’ ভোটের মাঠে দলের মূল প্রার্থীর প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন।

অতীতে জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে না যেতে ও ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ না হতে কঠোর নির্দেশ মানা হয়নি। শাস্তির কথা বলা হলেও ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হয়ে অংশ নেওয়া নেতারা এখন দলেই আছেন। সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কঠোর বার্তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুখে সীমাবদ্ধ থাকায়  একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ ধরনের প্রার্থী থাকতে পারে বলে দলের নেতৃত্ব মনে করছে। তখন দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার চেয়ে ক্ষমতাসীনদের ঘর সামলানো কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

শীর্ষ নেতারা মনে করেন, মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার থেকে নেতারা এটা করছেন। আগামী ৭ বা ৮ ডিসেম্বরে এসব প্রার্থীকে গণভবনে ডেকে এনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ দেওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এবার শুরুতে দল থেকে ২৫০টি মনোনয়ন-চিঠি দেওয়া হয়। এরপর মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয় কয়েকটি আসনে ক্ষোভ-বিক্ষোভে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন চিঠি দিয়ে দলের ও মহাজোটের মূল প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে।

তথ্য বলছে, ময়মনসিংহের ১১ আসনের মধ্যে ৮টিতে ‘বিদ্রোহী’ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ১৪ প্রার্থী। দিনাজপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্যসহ মনোনীত প্রার্থী আরো দুজন, ময়মনসিংহ-৩ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত ৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের ৩ প্রত্যাশী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কুমিল্লার তিনটি আসনে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ৯। দেশের অনেক আসনে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে।

ভোটের আগ মুহূর্তে মনোনয়ন কোন্দল যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেই আশঙ্কায় দলের নীতিনির্ধারকরা নানা পরিকল্পনা করছেন। আগের কয়েকটি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের শাস্তি না দেওয়ায় এবারো দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হলে কিছু হবে না, এমনটা কোনো প্রার্থীর মনে করার সুযোগ রাখেনি দলটি।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দল থেকে এবার মনোনয়নপত্র বিক্রি হয় ৪০২৩টি। মনোনয়নপ্রত্যাশী সবার কাছ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অঙ্গীকারনামায় এবার আগেভাগেই সই নিয়ে রাখা হয়েছে। দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো আসনে কেউ মনোনয়ন না পেলে শেষ মুহূর্তে যাতে দলকে ঝামেলায় পড়তে না হয়, সে জন্য এ উদ্যোগ। তাদের বিশ্বাস, আগাম সই রাখায় কোনো প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এবার ‘বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই’।

এবার দলের চার পৃষ্ঠার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয় প্রার্থীর একটি অঙ্গীকারনামা। এতে লেখা ছিল, অঙ্গীকারের ব্যত্যয় ঘটলে ওই প্রার্থী তাৎক্ষণিকভাবে দল থেকে বহিষ্কৃত বলে বিবেচিত হবেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!