• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
আধুনিক উন্নত মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যা থাকছে


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৭, ২০১৮, ০১:২৬ পিএম
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যা থাকছে

ঢাকা : বাংলাদেশকে আধুনিক, উন্নত ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় পরিকল্পিত ও নির্দিষ্ট কর্মসূচির কথা থাকছে আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে। তারুণদের আশাজাগানিয়া ও যুবকদের ভবিষ্যৎ গড়ার নানা কর্মসূচির সঙ্গে থাকছে দেশের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একগুচ্ছ মানবিক উপহার। থাকবে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দৃঢ় ঘোষণা। নারীর ক্ষমতায়নের ধারা অব্যাহত রাখা ও দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে দেশ থেকে তা একেবারে বিদায়ের অঙ্গীকার।

ক্ষমতাসীন দলটির এবারের ইশতেহারের প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত স্লোগান ‘সমৃদ্ধির বাংলাদেশ।’ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সরকারি-বেসরকারি সব খাতের জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচি আর উদ্যোগে ইশতেহারও সমৃদ্ধ বলে মনে করেন ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলটির ইশতেহার তৈরির প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের ইশতেহারের মতো চমক সৃষ্টি করতে ইশতেহার ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

সূত্র জানায়, প্রায় সব শ্রেণির মানুষের চাহিদা ও মতামত সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে সেসবের আলোকে তৈরি হচ্ছে ইশতেহারের খসড়া। চলছে শেষ পর্যায়ের ঘষামাজা বা সংযোজন-বিয়োজন। আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ের লক্ষ্যে চমকপ্রদ ও বিশ্বাসযোগ্য ইশতেহার উপহার দেওয়াই নীতি-নির্ধারকদের প্রচেষ্টা।

তৃতীয় দফায় সরকার গঠন করে কোনো উদ্যোগ ও কর্মসূচি কত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে মনে করছে, সে সময়েরও উল্লেখ থাকবে বেশ কয়েক ক্ষেত্রে। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে যে উন্নয়ন অব্যাহত থাকে, এ বিষয়ে ইশতেহারে স্পষ্ট বক্তব্য থাকবে। দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর মতো বিষয়ও এতে প্রাধান্য পাচ্ছে।

সূত্র মতে, ২০২১ সালের মধ্যে সব ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া, ২০৪১ সালের আগেই দেশকে আধুনিক, উন্নত ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার কথা থাকছে ইশতেহারে। প্রতিশ্রুত দেশ গড়তে করণীয় সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা ও  একটি গাইডলাইনও থাকবে। নির্ধারিত ২০৪১ সালকে টার্গেট করে আধুনিক শিক্ষা, কর্মসংসংস্থান, প্রশাসন ও সেবা খাতের বিকেন্দ্রীকরণও গুরুত্ব পাচ্ছে। থাকছে দেশের জন্য আগামী ১০০ বছরের কর্মপরিকল্পনা। ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে- এর একটি রূপকল্পও তুলে ধরা হবে।

ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত সূত্র জানায়, এবারের বিশেষ অঙ্গীকার হবে দেশজুড়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এবার ভোটদাতার তালিকায় যোগ হচ্ছে দেড় কোটি তরুণ। বিশেষ লক্ষ্য রাখা হচ্ছে তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করার। তাদের কথা বিচেনায় রেখে ও নতুন সময়ের ঝুঁকি মোকাবেলার সমাধান পথও থাকছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কীভাবে প্রযুক্তিমনস্ক ও দেশের সম্পদে পরিণত করা যায়, এসব বিষয়ে দিক-নির্দেশনা যোগ হচ্ছে ইশতেহারে।

তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ, আইসিটি ও মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ঘোষণা রাখা হচ্ছে। যুব সমাজকে প্রশিক্ষিত করে ও কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় তাদের সম্পৃক্ত করার বিষয়গুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এসব বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ছাড়া তরুণদের কর্মসংস্থান ও নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিশেষ ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থার কথাও থাকছে ইশতেহারে।

জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নীতিগত অবস্থানের কথা তুলে ধরা হবে। মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারও থাকছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের স্পষ্ট অবস্থানের কথা থাকছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও আছে। উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে দশটি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার পাচ্ছে গণতন্ত্র, কার্যকর সংসদ ও গণমুখী দক্ষ প্রশাসন। সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা। যোগ হতে পারে ‘ব্লু ইকোনমি’র বিষয়টি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, গত কয়েকবারের সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার কিছুটা আগে ইশতেহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরিকল্পনা দলের ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব নাও হতে পারে। ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ইশতেহারের খসড়া দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখালে তিনি আরো কিছু সংযোজনের পরামর্শ দেন। তার পরামর্শের ভিত্তিতে উপ-কমিটি শিগগিরই আবার বৈঠক করার কথা। এরপর ইশতেহার চূড়ান্ত হওয়ার কথা দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। ফলে আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের পর ছাড়া ইশতেহার ঘোষণা করা সম্ভব না-ও হতে পারে বলে সূত্র উল্লেখ করে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচনের দশদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইশতেহার ঘোষণা করবেন।’

গত অক্টোবরে গঠিত দলের ১২ সদস্য বিশিষ্ট ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বলেন, ‘এসব বিষয়ে এখনই আমাদের কিছু বলার অনুমতি নেই।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, ইশতেহার ঘোষণা ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গড়াতে পারে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৭ দিন ও দশম সংসদ নির্বাচনের ৭ দিন আগে আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষিত হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!