• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজই ভেঙে যাচ্ছে বিএনপির শীর্ষ নের্তৃত্ব!


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০২:৪৩ পিএম
আজই ভেঙে যাচ্ছে বিএনপির শীর্ষ নের্তৃত্ব!

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার মেডিকেল রিপোর্ট আজ বুধবার (১২ ডিনেম্বর) উচ্চ আদালতে পাঠানো হচ্ছে। 

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া আজ দুপুর ২টায় জানান, ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার কাছে বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা শেষে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনটি ফরোয়ার্ডিংসহ আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তিনি জানান, আদালত থেকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশনা ছিল।

এদিকে, বিএনপির একাধিকে নেতা মনে করছে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে যদি আপিল বিভাগ জামিন না দেয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি যদি মুক্ত না হন তাহলে বিএনপির একদফা আন্দোলনে যাওয়া উচিত। ক্রমশ বিএনপির মধ্যে এই মত শক্তিশালী হচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের একটি বড় অংশই এখন একদফা আন্দোলনের পক্ষপাতি। এই সিনিয়র নেতারা মনে করছেন যে, বিএনপির এখন হারাবার কিছু নেই কাজেই যদি আন্দোলন না করা হয় তাহলে আরো নি:শোষিত হয়ে যাবে। বরং লড়াই করে যদি বিএনপি নি:শোষিত হয় সেটাই ভালো।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাসের মত হেভিওয়েট নেতারা যারা এতদিন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে ছিল তারাও এখন একদফা আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর এই একদফা আন্দোলন করার জন্য জাতীয় সংসদ থেকে নির্বাচিত বিএনপির যে ৬ এমপি আছেন তাদেরকে পদত্যাগের কথা বলেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। 

তার এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বিএনপির তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন যে, সংসদে কে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব না। এজন্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু বিএনপির এই জনপ্রিয় দাবিকে পাস কাটিয়ে চট্টগ্রাম আসনের জন্য মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করা নিয়ে বিএনপিতে আরেকদফা কোন্দলের খবর পাওয়া গেছে। বিএনপির নেতারা সংসদ থেকে পদত্যাগ, একদফা আন্দোলন এবং চট্টগ্রাম ৮ আসনের নির্বাচন নিয়ে কার্যত দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন নেতা মনে করেন, এখনই ১ দফা আন্দোলন করার উপযুক্ত সময় নয়। বরং ধাপে ধাপে সংগঠন গুছিয়ে আন্দোলন শুরু করা দরকার এবং সেইজন্য তিনি চট্টগ্রাম ৮ আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষপাতী।

জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও চট্টগ্রাম ৮ আসনে নির্বাচনের পক্ষে। তবে উপনির্বাচনে অংশগ্রহনের ব্যাপারে তারেকের আগ্রহ ভিন্ন। কারণ এই আসনে নির্বাচনে মনোনয়ন দিলে মনোনয়ন বাণিজ্য করা যাবে এবং তারেক কিছু অর্থকড়ি পাবেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন যে, সরকারের সাথে সমঝোতা করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব এবং তাঁর এই মতের সাথে দলের একটি ক্ষুদ্র অংশ রয়েছে। বিশেষ করে, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সেলিনা রহমানসহ আরো কয়েকজন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সমর্থন করেন।

অন্যদিকে বিএনপির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে অধিকাংশ নেতা মনে করেন, সরকারের সাথে আপোষ, সমঝোতা বা আলাপ-আলোচনা করে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব না। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করার এটাই ভালো সময় বলে মনে করেন। এজন্য তাঁরা তিনটি করনীয় ব্যাপারে দলের মধ্যে প্রচারণা করছে।

প্রথমত- ১২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেয়া হলে ১ দফা আন্দোলন শুরু করা হবে এবং এই ১ দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার ডাক দিয়ে এক দফা আন্দোলনকে একটা পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চায়।

দ্বিতীয়ত- বিএনপির এই অংশ মনে করছে বিএনপির যে সমস্ত নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে যেহেতু বিএনপি মনে করে এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়নি এবং অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভাবে হয়নি। কাজেই এই নির্বাচনে যারা সংসদে গেছেন বা উপজেলা চেয়াম্যান হয়েছে তাদের পদত্যাগ করা। এর ফলে সরকারের উপর একটা চাপ তৈরি হবে।

তৃতীয়ত- বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া।

তবে এই কোন্দলের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষ জয়ী হবেন তা এখনো অনিশ্চিত। আন্দোলনের শুরুতেই দ্বিধা বিভক্ত বিএনপি আরেকবার ভাঙনের মুখে পড়েব কিনা সেটাও দেখার বিষয়।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!